কার্টার-কিম সাক্ষাৎ আটকে দিয়েছিল পারমাণবিক যুদ্ধ
Published: 16th, January 2025 GMT
তিন দশক আগে বিশ্ব এক পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের উত্তর কোরিয়া সফর সবকিছু বদলে দেয়। ১৯৯৪ সালের জুনে কার্টার উত্তর কোরিয়ার তৎকালীন নেতা কিম ইল সাংয়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য পিয়ংইয়ংয়ে পৌঁছান। এটি ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা। কারণ, সেই সময়ই প্রথমবার কোনো বর্তমান বা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়া সফর করেছিলেন।
এ সফর ছিল কার্টারের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপের অনন্য দৃষ্টান্ত। অনেকের মতে, এটি অল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ এড়াতে সাহায্য করেছিল, যা লাখ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারত। এ ছাড়া এটি পিয়ংইয়ং ও পশ্চিমাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একটি যুগের সূচনা করেছিল। এর কোনো কিছুই হতো না যদি না কার্টার তাঁর কূটনৈতিক চাল চালতেন।
উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ জন ডেলুরি বিবিসিকে বলেন, ‘কিম ইল-সাং ও বিল ক্লিনটন একটি সম্ভাব্য সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং কার্টার সেই ফাঁকা স্থানটি পূরণ করেন। সঠিক সময় এগিয়ে এসে সফলভাবে একটি আলোচনার পথ খুঁজে বের করেন তিনি।’ ১৯৯৪ সালের শুরুর দিকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা নিয়ে দুই দেশের আলোচনা চলাকালে ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সন্দেহ ছিল, চলমান আলোচনা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছিল। এর মধ্যেই উত্তর কোরিয়া ঘোষণা করে, তারা ইয়ংবিয়ন পারমাণবিক চুল্লি থেকে হাজার হাজার জ্বালানি রড পুনঃপ্রক্রিয়ার জন্য সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার আগে হওয়া একটি চুক্তির লঙ্ঘন, যেখানে এমন পদক্ষেপের জন্য আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ছিল।
এ ছাড়া উত্তর কোরিয়া আইএইএ থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়। এতে ওয়াশিংটনের সন্দেহ বেড়ে যায়। তাদের ধারণা ছিল, পিয়ংইয়ং সম্ভবত একটি অস্ত্র তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে মার্কিন কর্মকর্তারা পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করে দেন। ওয়াশিংটন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিতেও শুরু করে, যার মধ্যে ছিল জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি। পরে কিছু সাক্ষাৎকারে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, তারা ইয়ংবিয়নে বোমা ফেলা বা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া নিয়েও ভেবেছিলেন, যা কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ বাধানোর পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল ধ্বংস করে দিতে পারত বলে তাদের ধারণা। এ উত্তেজনাকর পরিবেশেই কার্টার তাঁর পদক্ষেপ নেন। কিম ইল-সাং বহু বছর ধরে ব্যক্তিগতভাবে কার্টারকে উত্তর কোরিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছিলেন।
কার্টার এবং তাঁর স্ত্রী রোজালিন ১৯৯৪ সালের জুন মাসে উত্তর কোরিয়ায় চার দিনের সফরে যান। কিন্তু তাঁর এই সফরে সম্মতি ছিল মার্কিন প্রশাসনের। কার্যত উত্তর কোরিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে নিজের সরকারকে রাজি করানো ছিল তাঁর চ্যালেঞ্জ। তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর তাঁর সহায়ক হিসেবে সামনে আসেন। অবশেষে সফরের অনুমতি মেলে। ১৫ জুন কার্টার তাঁর স্ত্রী রোজালিন, একটি ছোট দল ও টিভি ক্রু নিয়ে উত্তর কোরিয়া পাড়ি জমান।
২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাতের পথ সুগম করতেও কার্টারকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। কারণ, ‘কার্টার এটা সম্ভব করে দিয়েছিলেন’ যে একজন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ার নেতা সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে ছাত্রীর মৃত্যু, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্বজনদের ভিন্ন ভাষ্য
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার একটি মাদ্রাসার পাঁচতলা ভবনের জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে এক শিক্ষার্থীর (১৩) মৃত্যু হয়েছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, বাড়ি যেতে না পারায় মেয়েটি লাফ দেয়। তবে স্বজনেরা দাবি করেছেন, এখানে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি থাকতে পারে।
গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। বিষয়টি রাতেই জানাজানি হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মাদ্রাসার পাঁচতলার একটি জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয় সে।
মাদ্রাসার মুহতামিমের ভাষ্য, ঈদের ছুটির পর সপ্তাহখানেক আগে ওই শিক্ষার্থীর নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়। তবে মাদ্রাসার আবাসিকে থাকতে সে অনাগ্রহী ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সে তার মাকে ফোন করে বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। পরে রাতে মাদ্রাসার একটি জানালার ফাঁক দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়ে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে তাঁরা কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় পাঠানো হয়। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করতে না পেরে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ওই শিক্ষার্থীর মামা বলেন, তাঁরা চেয়েছিলেন ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করতে, তবে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। তাঁরা থানায় অভিযোগ করবেন। পুরো ঘটনা সুষ্ঠুভাবে তদন্তের দাবি জানান।
মেয়েটির এক স্বজন দাবি করেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। জানালার একটি বড় ফাঁক দিয়ে মেয়েটি নিচে পড়ে যায়। যদি গ্রিল সঠিকভাবে থাকত, এমনটা না–ও হতে পারত।
মাদ্রাসার মুহতামিম বলেন, ‘দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি রাস্তায় মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখে আমাকে ফোন করেন। পরে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। জানালার ওই অংশে ফাঁক ছিল, তবে সেটি আগে তেমনভাবে আমাদের নজরে আসেনি।’
এ বিষয়ে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জানালার একটি অংশে রডের ফাঁক আছে, সেটি বেশ বড়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান দিয়েই মেয়েটি পড়েছে। তবে তদন্ত চলছে। মেয়েটির লাশের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হবে। যৌন নিপীড়নের কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটিও পরীক্ষা করা হবে। এখন পর্যন্ত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বা পরিবারের কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।