তিন দশক আগে বিশ্ব এক পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের উত্তর কোরিয়া সফর সবকিছু বদলে দেয়। ১৯৯৪ সালের জুনে কার্টার উত্তর কোরিয়ার তৎকালীন নেতা কিম ইল সাংয়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য পিয়ংইয়ংয়ে পৌঁছান। এটি ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা। কারণ, সেই সময়ই প্রথমবার কোনো বর্তমান বা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়া সফর করেছিলেন।

এ সফর ছিল কার্টারের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপের অনন্য দৃষ্টান্ত। অনেকের মতে, এটি অল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ এড়াতে সাহায্য করেছিল, যা লাখ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারত। এ ছাড়া এটি পিয়ংইয়ং ও পশ্চিমাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একটি যুগের সূচনা করেছিল। এর কোনো কিছুই হতো না যদি না কার্টার তাঁর কূটনৈতিক চাল চালতেন। 

উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ জন ডেলুরি বিবিসিকে বলেন, ‘কিম ইল-সাং ও বিল ক্লিনটন একটি সম্ভাব্য সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং কার্টার সেই ফাঁকা স্থানটি পূরণ করেন। সঠিক সময় এগিয়ে এসে সফলভাবে একটি আলোচনার পথ খুঁজে বের করেন তিনি।’ ১৯৯৪ সালের শুরুর দিকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা নিয়ে দুই দেশের আলোচনা চলাকালে ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সন্দেহ ছিল, চলমান আলোচনা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছিল। এর মধ্যেই উত্তর কোরিয়া ঘোষণা করে, তারা ইয়ংবিয়ন পারমাণবিক চুল্লি থেকে হাজার হাজার জ্বালানি রড পুনঃপ্রক্রিয়ার জন্য সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার আগে হওয়া একটি চুক্তির লঙ্ঘন, যেখানে এমন পদক্ষেপের জন্য আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ছিল। 

এ ছাড়া উত্তর কোরিয়া আইএইএ থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়। এতে ওয়াশিংটনের সন্দেহ বেড়ে যায়। তাদের ধারণা ছিল, পিয়ংইয়ং সম্ভবত একটি অস্ত্র তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে মার্কিন কর্মকর্তারা পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করে দেন। ওয়াশিংটন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিতেও শুরু করে, যার মধ্যে ছিল জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি। পরে কিছু সাক্ষাৎকারে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, তারা ইয়ংবিয়নে বোমা ফেলা বা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া নিয়েও ভেবেছিলেন, যা কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ বাধানোর পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল ধ্বংস করে দিতে পারত বলে তাদের ধারণা। এ উত্তেজনাকর পরিবেশেই কার্টার তাঁর পদক্ষেপ নেন। কিম ইল-সাং বহু বছর ধরে ব্যক্তিগতভাবে কার্টারকে উত্তর কোরিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছিলেন।

কার্টার এবং তাঁর স্ত্রী রোজালিন ১৯৯৪ সালের জুন মাসে উত্তর কোরিয়ায় চার দিনের সফরে যান। কিন্তু তাঁর এই সফরে সম্মতি ছিল মার্কিন প্রশাসনের। কার্যত উত্তর কোরিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে নিজের সরকারকে রাজি করানো ছিল তাঁর চ্যালেঞ্জ। তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর তাঁর সহায়ক হিসেবে সামনে আসেন। অবশেষে সফরের অনুমতি মেলে। ১৫ জুন কার্টার তাঁর স্ত্রী রোজালিন, একটি ছোট দল ও টিভি ক্রু নিয়ে উত্তর কোরিয়া পাড়ি জমান।

২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাতের পথ সুগম করতেও কার্টারকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। কারণ, ‘কার্টার এটা সম্ভব করে দিয়েছিলেন’ যে একজন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ার নেতা সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শুরু হচ্ছে ছয় সিনেমার লড়াই

বছরজুড়ে ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। ব্যতিক্রম শুধু দুই ঈদ। এই দুই উৎসবে সিনেমাপ্রেমীরা তাদের প্রিয় তারকার সিনেমা দেখতে হলে ভিড় জমায়। ফলে সিনেমা হল হয়ে ওঠে সরব। এই ঈদুল ফিতরে আসছে ছয়টি ভিন্নধর্মী সিনেমা, যার প্রতিটি দর্শকদের নতুন অভিজ্ঞতা দেবে বলে মন্তব্য ছবিগুলোর নির্মাতাদের। অ্যাকশন, থ্রিলার, হরর– সব ধরনের মসলাই থাকছে এবারের মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোতে। পরিচালকদের ভিন্ন ভিন্ন নির্মাণশৈলী ও চমকপ্রদ কাস্টিং এই সিনেমাগুলোর প্রতি দর্শকদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ঈদের ছয়টি সিনেমা ও এগুলোর বিশেষ দিক–

ধুন্ধুমার অ্যাকশনে ভরপুর ‘বরবাদ’
এবারের অ্যাকশনপ্রেমীদের জন্য থাকছে বড় বাজেটের ‘বরবাদ’ সিনেমাটি। তরুণ পরিচালক মেহেদি হাসান হৃদয় এ ছবির মাধ্যমে দর্শকদের উপহার দিচ্ছেন এক ভিন্নধর্মী গল্প। ছবিটি মূলত রিভেঞ্জ থ্রিলার ঘরানার, যেখানে প্রতিশোধ ও প্রতারণার এক জটিল খেলায় জড়িয়ে পড়বে চরিত্ররা। সিনেমাটির মূল আকর্ষণ শাকিব খান। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন কলকাতার ঈধিকা পাল। এতে আরও অভিনয় করেছেন যিশু সেনগুপ্ত, মিশা সওদাগর, শহীদুজ্জামান সেলিম, ফজলুর রহমান বাবু প্রমুখ। ছবিটি নিয়ে বেশ আশাবাদী নির্মাতা। 

বখে যাওয়া প্রেমিক ও স্টাইলিশ থ্রিলার গল্পে জংলি
‘জংলি’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন এম রাহিম, যিনি এর আগে ‘শান’ সিনেমা দিয়ে দারুণ সাড়া ফেলেছিলেন। সিনেমাটি অ্যাকশন ও সাসপেন্সের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে, যেখানে গল্পের বাঁকবদল দর্শকদের চমকে দেবে। স্টাইলিশ ভিজ্যুয়াল ও রোমাঞ্চকর কাহিনির জন্য সিনেমাটি তরুণ দর্শকদের ভালো লাগবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন নির্মাতা। এতে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ, শবনম বুবলী, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। 

দাগি আসামির নতুন পরীক্ষা
ছোট পর্দায় একের পর এক হিট সিরিজ উপহার দেওয়ার পর জনপ্রিয় নির্মাতা শিহাব শাহীন এবার ঈদে হাজির হচ্ছেন ‘দাগি’ সিনেমা নিয়ে। থ্রিলারধর্মী এই সিনেমার গল্প সমাজের অন্ধকার দিক ও রহস্যময় ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। শিহাব শাহীন তাঁর নির্মাণশৈলীর জন্য বরাবরই প্রশংসিত, তাই ‘দাগি’ দর্শকদের জন্য এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হতে পারে। এতে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো, তমা মির্জা, সুনেরাহ বিনতে কামাল প্রমুখ। এই সিনেমার ব্যতিক্রমী প্রচারণা সবার নজর কেড়েছে। এতে নিশোকে দেখা গেছে দাগি আসামির বেশে। 

রহস্যে মোড়ানো হরর ইউনিভার্স ‘জ্বীন থ্রি’
বাংলাদেশে হরর সিনেমার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার আসছে ‘জ্বীন থ্রি’। জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় তৈরি এই সিনেমা আগের দুটি পর্বের মতোই ভয় ও রহস্যে মোড়ানো। আধুনিক ভিএফএক্স ও ভয়াবহ সিনেমাটোগ্রাফি ব্যবহার করে নির্মিত হওয়ায় এটি দর্শকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। ছবিটির এবারের পর্বে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া, সঙ্গে আছেন সজল। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন কামরুজ্জামান রোমান।

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার গল্পে চক্কর
একটি অপরাধ, একাধিক সন্দেহভাজন ও এক রহস্যময় গল্প– এই থিম নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘চক্কর’। পরিচালক শরাফ আহমেদ জীবন ইতোমধ্যে ক্রাইম-থ্রিলার ঘরানায় বেশ পরিচিত। ‘চক্কর’ সেই ধারায় নতুন সংযোজন হতে চলেছে। এই সিনেমায় রয়েছে রহস্য, সাসপেন্স এবং মানসিক টানাপোড়েন, যা দর্শকদের শেষ পর্যন্ত ভাবিয়ে তুলবে বলে মন্তব্য নির্মাতার। তিনি আরও বলেন, ‘চক্কর মানবিক স্পর্শের গল্প। সরকারি অনুদানের সঙ্গে আরও বাজেট যুক্ত করে বড় আয়োজনে সিনেমাটি বানানোর চেষ্টা করেছি।’ সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। এতে মইনুল নামে একজন গোয়েন্দা পুলিশের চরিত্র রয়েছে। এই চরিত্রই করছেন মোশাররফ করিম। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু।

পারিবারিক গল্পের ‘অন্তরাত্মা’
পারিবারিক গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘অত্নরাত্মা’। এতে অভিনয় করছেন শাকিব খান ও কলকতার দর্শনা বনিকসহ অনেকেই। ঈদ সিনেমার তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে সিনেমাটি। এটি পরিচালনা করেছেন ফেরারী ফরহাদের গল্পে এটি পরিচালনা করেছেন ওয়াজেদ আলী সুমন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ