দুই মাসে চুরি গেল ৩১ ট্রান্সফরমার
Published: 15th, January 2025 GMT
নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের দাতমণ্ডল গ্রাম থেকে ৭ জানুয়ারি রাতে সেচ প্রকল্পে ব্যবহৃত চারটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়। বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের জানানো হলে তারা নিজ খরচে ট্রান্সফরমরার স্থাপনের পরামর্শ দেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কৃষকরা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এ উপজেলা থেকে ৩১টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। তারা বলছেন, সেচ দিতে না পারলে বোরো চাষ ব্যাহত হবে। আতঙ্কে রাত জাগতে হচ্ছে তাদের।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর ভাষ্য, শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গেই উপজেলায় চুরি বেড়েছে। গত শুষ্ক মৌসুমের মতো শীতেও নিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে। রাতে যখনই যে এলাকায় লোডশেডিং হয়, তখনই কোনো না কোনো এলাকা থেকে ট্রান্সফরমার চুরি হয়। তাদের ধারণা, এসব চুরির সঙ্গে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের প্রশিক্ষিত ইলেকট্রিশিয়ানরা জড়িত থাকতে পারেন।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একাধিক কর্মকর্তা। তাদের নিয়োগ করা কোনো ইলেকট্রিশিয়ান এসবে জড়িত নন বলেও দাবি করেন। তাদের ভাষ্য, চুরি ঠেকাতে বারবার উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বাদী হয়ে মামলাও করেছে। তারপরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এক বছরে প্রায় ১০০ ট্রান্সফরমার চুরি হলেও এসব ঘটনায় কেউই আটক হয়নি।
দাতমণ্ডল গ্রামের কৃষক উবায়দুল হকের ভাষ্য, চুরির ঘটনা জানানোর পর পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা নিজ খরচে ট্রান্সফরমার স্থাপন করতে বলেন। এদিকে বোরো ক্ষেতে সেচ দেওয়া মৌসুম চলে যাচ্ছে। এ কারণে কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
একই গ্রামের কৃষক রহমত আলী সোমবার সমকালকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে আমাদের সেচ কাজ বন্ধ। জমিতে হালচাষ দিয়া রাখছি; পানির কারণে বোরো আবাদ করতে পারতেছি না। ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় জমি নিয়া বেকায়দায় পড়ছি।’
নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের শেষ দুই মাসে উপজেলা থেকে ৩১টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের ৯টি, পূর্বভাগ ইউনিয়নের ৩টি, বুড়িশ্বর ইউনিয়নের ৬টি, গোকর্ণ ইউনিয়নের ৮টি, কুন্ডা ইউনিয়নের ২টি ও চাপরতলার ৫টি। এ ছাড়াও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ৮টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় এক বছরে প্রায় ৯০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।
এদিকে ৯ জানুয়ারি বুড়িশ্বর ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের দুইজন লাইনম্যানকে বেঁধে তিনটি সেচ প্রকল্পের ট্রান্সফরমার নিয়ে যায় চোরেরা। এতে ওই এলাকার কয়েকশ বিঘা জমির আবাদ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিনটি ট্রান্সফরমার নতুনভাবে সংযোগ দিতে লাগছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। ওই এলাকার কৃষক গৌর পাল, গিয়াস উদ্দিন, মিজান শাহ, আলাউদ্দিন ও আলাল শাহ বলেন, সঠিক সময়ে পানি না পেলে তারা বোরো আবাদ করতে পারবেন না। জমিতে ফসল না ফলালে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে সবাইকে।
উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো.
নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, প্রায় একশর কাছাকাছি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। এতে স্থানীয় কিছু অসাধু চক্র জড়িত। তাদের কর্মকর্তারা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে কেউই আটক হয়নি। চুরি রোধে পাহারা দেওয়াসহ এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলমের দাবি, ‘আমাদের কাছে পল্লী বিদ্যুৎ বা গ্রাহক কেউই ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে অভিযোগ করেননি।’ কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ন স রনগর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আইইউবি থিয়েটারের আয়োজনে শেষ হলো দুই দিনের বৈশাখী নাট্যোৎসব
‘বৈশাখে হবে উৎসব, উৎসবে হবে নাটক’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে আইইউবি থিয়েটারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘আইইউবি থিয়েটার বৈশাখী নাট্যোৎসব ২০২৫’। ১৩ ও ১৪ এপ্রিল দুই দিনের উৎসবে মোট চারটি নাটক মঞ্চস্থ করে আইইউবি থিয়েটার, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, তীরন্দাজ রেপার্টরি এবং বটতলা থিয়েটার।
১৩ এপ্রিল উৎসবের উদ্বোধন করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান দিদার এ হোসেইন, উপাচার্য ম. তামিম, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ড্যানিয়েল ডব্লিউ লুন্ড, স্কুল অব লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসের ডিন বখতিয়ার আহমেদ এবং আইইউবির মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান জাকির হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন আইইউবি থিয়েটারের সমন্বয়ক ও মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের শিক্ষক মমতাজ পারভিন।
উদ্বোধনের পর মঞ্চস্থ হয় আইইউবি থিয়েটারের ২৩তম প্রযোজনা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী কাব্যনাটক ‘তাসের দেশ’। এতে অভিনয় করেন আইইউবির শিক্ষার্থীরা। ১৩ এপ্রিল বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার মঞ্চস্থ করে তাদের ১১৩তম প্রযোজনা ‘দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’। ১৪ এপ্রিলের প্রথম প্রযোজনা ছিল তীরন্দাজ রেপার্টরির ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’। বিকেলে উৎসবের সর্বশেষ আয়োজন ছিল বটতলা থিয়েটারের দর্শকনন্দিত নাটক ‘খনা’।
নববর্ষের প্রথম দিনের সূর্যাস্তের মধ্যে দিয়ে আইইউবি থিয়েটারের বৈশাখী নাট্যোৎসব–১৪৩২-এর সমাপ্তি হয়।