কোনো পক্ষই ছাড় দেয়নি লুট দেড় কোটির রাজস্ব
Published: 15th, January 2025 GMT
তাহিরপুরের বাদাঘাট বাজারকে রাজস্ব লুটের যজ্ঞে পরিণত করেছিলেন বিগত সরকারদলীয় নেতারা। ক্ষমতার পালাবদলে অপর একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারীরা লুটের চক্র সক্রিয় রেখেছিলেন। বাজার থেকে উভয়পক্ষ মিলে ২১ মাসে খাস আদায়ের নামে লুট করে ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
স্থানীয় এ বাজারের রাজস্ব বা খাস আদায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। দরপত্র আহ্বান করে ইজারা না দিয়ে খাস সংগ্রহের নামে এখান থেকে সরকারকে দেওয়া হতো নামমাত্র ইজারা মূল্য। বিপরীতে ওই বাজার থেকে কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন বিগত সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলে চক্রের সেই সদস্যরা গা-ঢাকা দেন। তবে চক্রের লাগাম হাতে তুলে নিয়েছে অপর একটি পক্ষ।
এমন পরিস্থিতিতে বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও সেখান থেকে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রচলিত অনিয়ম ও লুটপাটের প্রথা ভাঙতে তৎপরতা শুরু করেন বর্তমান জেলা প্রশাসক। ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত বাজারটি পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রকাশ্য নিলামের উদ্যোগ নিয়ে বাদাঘাট বাজারের খাস কালেকশনের ব্যবস্থা করেন। তাতে মাসে সর্বনিম্ন দর ১ লাখ টাকার পরিবর্তে ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
এই খাস আদায়ের নির্ধারিত নতুন দরের হিসাবে দেখা যায়, শুধু গত একুশ মাসেই এ বাজার থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, সুনামগঞ্জের বৃহৎ বাদাঘাট বাজার সর্বশেষ বাংলা ১৪২৯ সালে ৫০ লাখ টাকায় ইজারা হয়। উৎস কর ও ভ্যাটসহ ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন ইজারাদার। সেই অনুযায়ী প্রতি মাসের ইজারা মূল্য ৫ লাখ টাকারও বেশি হয়।
১৪৩০ বাংলা সালে এসে বাজারটি ইজারা হয়নি। সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত সরকারের চাহিদা মতো বাজারের কর্তৃত্ব দেওয়া হয় তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের হাতে। দীর্ঘ সময় তারা এই বাজারে অর্থ লুটের শক্তিশালী চক্র পরিচালনা করেন। সাবেক এমপির ওই অনুসারীদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সরকার।
বাজার চক্রের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বাদাঘাটের বাসিন্দা সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তারা মিয়া, আলমগীর খোকনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একদল নেতা।
সে সময় প্রকাশ্যে তহশিলদার খাস আদায় করছেন বলে জানানো হলেও রাজস্ব লুটের ওই শক্তিশালী সিন্ডিকেটের পকেটে যেত বাজারের অর্থ। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তোলা ওই চক্রকে প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা পারভিনের বিরুদ্ধে। কোনো দরপত্র আহ্বান ছাড়াই কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকে লুটপাটের অবৈধ ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়ার প্রশাসনিক বৈধতা দিয়েছিলেন তিনিই।
তাহিরপুরের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দপ্তরের এক কর্মচারী জানান, তারা পুরো এক বছরে ১২ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব জমা দেননি। রাজস্ব কত জমা দেওয়া হচ্ছে, এটি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীসহ কাউকেই জানানো হতো না। সাংবাদিকরা জানার চেষ্টা করলে তাদের হুমকি দেওয়া হতো। স্থানীয় অনেক সাংবাদিক হয়রানির শিকারও হয়েছেন।
গত বছরের নভেম্বর মাসে বাদাঘাট বাজারের রাজস্ব আদায়ে অব্যবস্থাপনার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক সমকাল। ১৯ ডিসেম্বর তাহিরপুর উপজেলা পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক বাজারের খাস আদায়ে অনিয়মের বিষয়ে ব্যাখ্যা চান। সংশ্লিষ্টদের জবাবে সন্তুষ্ট হতে না পারায় তাৎক্ষণিক বিষয়টি তদন্তের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালককে নির্দেশ দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ভূমি অফিস ও জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখার একাধিক কর্মচারী জানান, সরকার পরিবর্তনের পর বাদাঘাট বাজারের খাস সংগ্রহের দায়িত্ব নেন উপজেলা বিএনপির নেতা (উপজেলা সভাপতি পদপ্রত্যাশী) জুনাব আলী ও তাঁর অনুসারীরা।
ইউএনও কার্যালয় থেকে মৌখিকভাবে এক বছরের জন্য ২৪ লাখ টাকা খাস কালেকশনের ইজারা নেয় ওই পক্ষ। পরে তারা সেটি বাদাঘাটের আজিজুল ইসলামসহ অপর একটি পক্ষের কাছে ৫৬ লাখ টাকায় সাব-ইজারা দিয়ে টোল আদায়ের কার্যক্রম চালিয়ে যান গত নভেম্বর পর্যন্ত। তাতে সব মিলিয়ে গত ২১ মাসে খাস আদায়ের নামে হরিলুট চলেছে। কোনো মাসেই ১ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব জমা পড়েনি।
জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নেওয়ার পর ৩০ ডিসেম্বর উপজেলা মিলনায়তনে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় বাদাঘাট বাজারকে এক মাসের জন্য ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকায় আজিজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে বাদাঘাটের খাস আদায়ের অনুমতি দেওয়া হয়।
বাদাঘাট বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, হাওরাঞ্চলে এখন বোরো ধান রোপণের কাজ চলছে। এজন্য বাজার কিছুটা মন্দ। বর্ষা এলেই এ মন্দাভাব কেটে যাবে এবং এবার বাজারের রাজস্ব আয় অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি হবে।
খাস আদায়কারী আজিজুল ইসলাম জানান, গেল এক মাসে অনেক লোকসান হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কঠোর নির্দেশনার পর থেকে যথাযথভাবে খাস আদায় চলছে। একই পক্ষের হাতে আগের খাস আদায়ের কাজে অনিয়মের কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ওই সময় তহশিলদার আদায় করতেন খাস। তারা শুধু সাহায্য করতেন।
বিএনপি নেতা জুনাব আলী জানান, বাদাঘাট বাজার তিনি ও তাঁর লোকজন ২৪ লাখ টাকায় খাস আদায়ের জন্য নিয়ে অপর পক্ষের কাছে ৫৬ লাখ টাকায় হস্তান্তরের দাবি সঠিক নয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাদাঘাট বাজারের ইজারার সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
জেলা প্রশাসক ইলিয়াস মিয়া জানান, বাদাঘাট বাজারের খাস আদায়ের ক্ষেত্রে দর বাড়িয়ে মাসিক ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনিয়ম হলে ইজারার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুটি পক্ষের জামানত বাতিল হবে। খাস আদায়ে সিন্ডিকেট গড়ার চেষ্টা করলে সর্বসাধারণের জন্য বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ ৭ ল খ ৬০ হ জ র ট ক র উপজ ল র জন য সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
নয়াদিল্লিতে বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক ফেব্রুয়ারিতে
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের মধ্যে মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের বৈঠক ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধির জয়সওয়াল জানিয়েছেন, আলোচনায় সীমান্ত-সম্পর্কিত সব বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হবে এবং পারস্পরিক সম্মত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তিগুলোকে ‘সম্মান’ করার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হবে।
সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে জয়সওয়াল বলেন, ‘২০২৫ সালের ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে ডিজি পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই আলোচনায় সীমান্ত সম্পর্কিত সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা আশা করি পারস্পরিকভাবে সম্মত সব সমঝোতা স্মারক ও চুক্তিকে সম্মান জানানো হবে। এগুলো দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কাঠামোগত সম্পৃক্ততার ভিত্তি এবং সীমান্তে পারস্পরিকভাবে উপকারী নিরাপত্তা ও বাণিজ্য অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তা করে।”
ঢাকা/শাহেদ