সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে চলমান বেপরোয়া পাথর লুট থামছেই না। ৫ আগস্টের পর এই লুটপাট শুরু হয় ব্যাপক মাত্রায়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে, কিছু ক্ষেত্রে  বিতর্কের মুখে পড়তে হচ্ছে প্রশাসনকেই। 

মঙ্গলবার এমন পরিস্থিতিই সৃষ্টি হয় বিছনাকান্দি এলাকায়। সেখানকার স্থানীয় কোয়ারিতে ছিল ৩ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর। জব্দকৃত এসব পাথর বিক্রির জন্য বৈধ প্রক্রিয়া চলমান। এরই মাঝে ওই পাথর লুট হয়ে যাওয়ার খবরে বিব্রত প্রশাসন।

জানা গেছে, দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে বিছনাকান্দির কোয়ারিতে থাকা পাথর নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছে সিলেটের জেলা প্রশাসন ও খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। জব্দকৃত এসব পাথর কোয়ারি থেকে লুট হয়ে যাওয়ার খবরে তোলপাড় সর্বত্র। মূলত দরপত্র জমাদানে কেউ অংশ না নেওয়াতেই টনক নড়ে প্রশাসনের। এ ঘটনায় মামলা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হলেও তা এখন পর্যন্ত করা হয়নি।

জানা গেছে, গেল বছরের ৩ নভেম্বর উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বিত টাস্কফোর্স বিছনাকান্দি, আনফরেরভাঙা, হাদারপার ও বিছনাকান্দি ইউনিয়নে অভিযান চালায়। এ সময় ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮০৯ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের এই পাথর রাখা হয়েছিল হাদারপার ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন ও বিছনাকান্দি ইউপি সদস্য পাপলু মিয়ার জিম্মায়। সম্প্রতি বিএমডি পাথর নিলামের আহ্বান করলে লুটের বিষয়টি প্রকাশ পায়।

উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জব্দকৃত পাথর নিলামের জন্য ২০ ডিসেম্বর দরপত্র আহ্বান করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দরপত্র ও ৮ জানুয়ারি জমাদানের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ দরপত্র জমা দেয়নি। কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই পাথর লুট হয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই ইউপি সদস্যের জিম্মায় থাকা অবস্থায় অনেক আগেই পাথরগুলো লুট হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, জিম্মাদার দুই ইউপি সদস্য ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততা রয়েছে পাথর লুটের ঘটনায়। এখন ওই দুই ইউপি সদস্যকে দিয়ে মামলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

হাদারপার ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন জানান, পাথর চুরি ঠেকাতে না পেরে ২ জানুয়ারি জিম্মাদারি থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন। চুরির ঘটনায় ৯ জানুয়ারি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়েছে। তাঁর নিজের জিম্মায় থাকা ৪ থেকে ৫ হাজার ঘনফুট পাথর এখনও অবশিষ্ট আছে। এ ব্যাপারে জানতে অপর জিম্মাদার ইউপি সদস্য পাপলু মিয়াকে তাঁর মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

গোয়াইনঘাটের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, পাথর লুটের ঘটনায় মামলাটি এজাহারভুক্ত করার জন্য ওসিকে বলা হয়েছে। পাথর চুরির বিষয়টি বিএমডিকে অবগত করা হয়েছে।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদ জানান, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বিশাল এলাকাজুড়ে এসব পাথর রাখা হয়। পাহারা দেওয়া অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দরপত র র জন য ল ট হয় উপজ ল সদস য ব এমড ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার বাস্তবায়নে প্রকল্প, ব্যয় হবে ৫০৩৩ কোটি টাকা

ঢাকা ওয়াসায় ‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের ফেজ-৩’ এর আওতায় সায়দাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ফেজ-৩) প্রকল্পের সংগ্রহ- কম্পোনেন্ট ১- ইনটেক, কাঁচা জল পাম্পিং স্টেশন (আরডব্লিউপিএস) এবং কাঁচা জলের পাইপলাইন (আরডব্লিউপি) কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৫০৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪২১ টাকা।

সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক ঢাকা শহরে বসবাসকারী প্রায় দুই কোটি জনসাধারণের জন্য পানি সরবরাহ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে মোট পানি সরবরাহের প্রায় ৭০ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে এবং প্রায় ৩০ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে পানির স্তর প্রতিবছর প্রায় ২-৩ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে; যা টেকসই উন্নয়নের সাথে সাংঘর্ষিক। 

২০৩০ সালের মধ্যে ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পানি সরবরাহের পরিমাণ ৭০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যেই ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২, পদ্মা পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়বানাধীন রয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায়, ঢাকা মহানগরীতে বসবাসকারী জনসাধারণের জন্য একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেজ-৩)’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পের প্যাকেজ-১ এর আওতায় ইনটেক, দৈনিক ৯৫.০০ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পিং স্টেশন এবং ২৭ কি. মি. দীর্ঘ ২টি অপরিশোধিত পানির পরিচালন লাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, প্যাকেজ-২ এর আওতায় দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতা সম্পন্ন পানি শোধনাগার ও স্লাজ শোধনাগার এবং প্যাকেজ-৩ এর আওতায় ৩৫০ মিমি হতে ২০০০ মিমি ব্যাসের প্রায় ৫৪ কিলোমিটার পরিশোধিত পানির বিতরণ নেটওয়ার্ক নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের মূল ডিপিপি'তে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৫৯৭.৩৬০৫ কোটি এবং ১ম সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭৫১৮.০২৭৫ কোটি টাকা; যার মধ্যে জিওবি খাতে ২৬২৫.২৩ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য খাতে ৪৮৬২.৭৯ কোটি টাকা ও ঢাকা ওয়াসার নিজস্ব তহবিল খাতে ৩০.০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কর্তৃক ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রকল্পটির অনুমোদন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর তারিখে প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর তারিখে প্রকল্পটির ১ম সংশোধনী একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রকল্পটির প্রশাসনিক আদেশ জারী করা হয়।

প্রকল্পের অর্থায়নের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ও ফ্রেন্স উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এজেন্সিজ ফ্রান্সাইজ ডি ডেভেলপমেন্ট (এএফডি) এর সঙ্গে ২০১৮ তারিখে ১৬ মে তারিখে ১১৫ মিলিয়ন ইউরোর, ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) এর সঙ্গে ২০১৮ সালের ৪ জুন তারিখে ৪০ মিলিয়ন ইউরোর, জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কেআইডব্লিউ এর সঙ্গে ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর তারিখে ৯০ মিলিয়ন ইউরোর ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর পাশাপাশি ডানিডা সাসটেইনাবল ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার ফ্যাইন্যান্স (ডিএসআইএফ) এর সঙ্গে ২০১৯ ০৩ অক্টোবর তারিখে ১৮৮ মিলিয়ন ইউরোর জি টু জি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ঋণচুক্তিগুলোর অতিরিক্ত আরও ২০০ মিলিয়ন ইউরো এএফডি থেকে, ৯০ মিলিয়ন ইউরো ইবিআই থেকে, ৭০ মিলিয়ন ইউরো কেএফডব্লিউ থেকে এবং ১১২ মিলিয়ন ইউরো ডিএসআইপি থেকে ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য যে, প্যাকেজ-১ এর ব্যয়ভার এএফডি,ইবিআই, কেআইডব্লি  প্রদত্ত ঋণ সহায়তা থেকে নির্বাহ করা হবে।

ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এএফডি’র প্রকিউরমেন্ট গাইড লাইন প্যাকেজ-১ এর ঠিকাদার নিয়োগের জন্য প্রণীত প্রিকোয়ালিফিকেশন ডকুমেন্টের উপর এএফডি’র অনাপত্তি ভিত্তিতে ২০২২ সালের ১৮ মার্চ তারিখে প্রিকোলিফিকেশন বিড আহবান করা হয়। দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ, মুল্যায়ন ও বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মুট ম্যাকডোনাল্ড লিমিটেডকে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ করা হয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি এবং দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়)।

বর্ণিত প্যাকেজের প্রিকোয়ালিফিকেশন বিডের  বিপরীতে মোট ১৭ টি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় দলিলাদি দাখিলের শেষ সময় ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন। এ সময়ের মধ্যে ৬টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রিকোয়ালিফিকেশন বিড দাখিল করে। এরমধ্যে ৩টি প্রতিষ্ঠান নন-রেসপন্সিভ হয়। বাকি ৩টি প্রতিষ্ঠানকে রেসপন্সিভ ঘোষণা করা হয়।

প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধাপ সম্পন্ন করে সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে যৌথভাবে সিএমইসি-ওয়াইআরইসি-এসএমইডিআইকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করেছে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। প্রকল্পে ভ্যাট ও এআইটিসহ মোট ব্যয় হবে ৫০৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪২১ টাকা।

এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের ফুটপাত বাণিজ্যে চসিক
  • সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার বাস্তবায়নে প্রকল্প, ব্যয় হবে ৫০৩৩ কোটি টাকা
  • বর্ধিত সভায় উপস্থিত না হয়ে ‘দরপত্র জমা দিতে’ যাওয়া শ্রীপুর বিএনপির সভাপতিকে শোকজ