দরপত্র প্রক্রিয়ার মাঝেই জব্দকৃত পাথর লুট
Published: 15th, January 2025 GMT
সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে চলমান বেপরোয়া পাথর লুট থামছেই না। ৫ আগস্টের পর এই লুটপাট শুরু হয় ব্যাপক মাত্রায়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে, কিছু ক্ষেত্রে বিতর্কের মুখে পড়তে হচ্ছে প্রশাসনকেই।
মঙ্গলবার এমন পরিস্থিতিই সৃষ্টি হয় বিছনাকান্দি এলাকায়। সেখানকার স্থানীয় কোয়ারিতে ছিল ৩ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর। জব্দকৃত এসব পাথর বিক্রির জন্য বৈধ প্রক্রিয়া চলমান। এরই মাঝে ওই পাথর লুট হয়ে যাওয়ার খবরে বিব্রত প্রশাসন।
জানা গেছে, দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে বিছনাকান্দির কোয়ারিতে থাকা পাথর নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছে সিলেটের জেলা প্রশাসন ও খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। জব্দকৃত এসব পাথর কোয়ারি থেকে লুট হয়ে যাওয়ার খবরে তোলপাড় সর্বত্র। মূলত দরপত্র জমাদানে কেউ অংশ না নেওয়াতেই টনক নড়ে প্রশাসনের। এ ঘটনায় মামলা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হলেও তা এখন পর্যন্ত করা হয়নি।
জানা গেছে, গেল বছরের ৩ নভেম্বর উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বিত টাস্কফোর্স বিছনাকান্দি, আনফরেরভাঙা, হাদারপার ও বিছনাকান্দি ইউনিয়নে অভিযান চালায়। এ সময় ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮০৯ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের এই পাথর রাখা হয়েছিল হাদারপার ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন ও বিছনাকান্দি ইউপি সদস্য পাপলু মিয়ার জিম্মায়। সম্প্রতি বিএমডি পাথর নিলামের আহ্বান করলে লুটের বিষয়টি প্রকাশ পায়।
উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জব্দকৃত পাথর নিলামের জন্য ২০ ডিসেম্বর দরপত্র আহ্বান করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দরপত্র ও ৮ জানুয়ারি জমাদানের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ দরপত্র জমা দেয়নি। কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই পাথর লুট হয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই ইউপি সদস্যের জিম্মায় থাকা অবস্থায় অনেক আগেই পাথরগুলো লুট হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, জিম্মাদার দুই ইউপি সদস্য ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততা রয়েছে পাথর লুটের ঘটনায়। এখন ওই দুই ইউপি সদস্যকে দিয়ে মামলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
হাদারপার ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন জানান, পাথর চুরি ঠেকাতে না পেরে ২ জানুয়ারি জিম্মাদারি থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন। চুরির ঘটনায় ৯ জানুয়ারি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়েছে। তাঁর নিজের জিম্মায় থাকা ৪ থেকে ৫ হাজার ঘনফুট পাথর এখনও অবশিষ্ট আছে। এ ব্যাপারে জানতে অপর জিম্মাদার ইউপি সদস্য পাপলু মিয়াকে তাঁর মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
গোয়াইনঘাটের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, পাথর লুটের ঘটনায় মামলাটি এজাহারভুক্ত করার জন্য ওসিকে বলা হয়েছে। পাথর চুরির বিষয়টি বিএমডিকে অবগত করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদ জানান, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বিশাল এলাকাজুড়ে এসব পাথর রাখা হয়। পাহারা দেওয়া অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দরপত র র জন য ল ট হয় উপজ ল সদস য ব এমড ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা মো. বিল্লাল হোসেনের ঠিকাদারি লাইসেন্স অবশেষে বাতিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিল্লাল হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে কুমিল্লার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ওই লাইসেন্সটি তাৎক্ষনিকভাবে বাতিল করে।
সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন। তিনি বলেন, ‘গত ১৬ মার্চ তার কার্যালয় থেকে মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ নামে লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয়। তবে এখনও এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে জেলার কোনো এলজিইডির কার্যালয়ে দরপত্রে অংশ নেওয়া হয়নি।’
প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, ‘সব বিধি মেনেই তিনি (বিল্লাল হোসেন) ঠিকাদারি লাইসেন্স পেয়েছিলেন। আজ বাতিলের আবেদন করায় বিধি মোতাবেক লাইসেন্সটি বাতিল করে কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে।’
সমকালের হাতে আসা ওই লাইসেন্সটিতে দেখা যায়, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, ভ্যাট রেজি.সহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর গত ১০ মার্চ এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর অনুমোদনের প্রেক্ষিতে কুমিল্লার জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ (ওই লাইসেন্স) অনুমোদন লাভ করে। গত ১৬ মার্চ ৫ হাজার ৯০০ টাকার ব্যাংক চালান দেওয়ার পরই ওই দিন নির্বাহী প্রকৌশলী লাইসেন্সে স্বাক্ষর করেন। এতে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে মুরাদনগর উপজেলার আকবপুর গ্রাম। এর মেয়াদ উল্লেখ আছে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। মো. বিল্লাল হোসেন স্থানীয় আকবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন। আর দুই বছর পর তার চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা।
এর আগে গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জুলকারনাইন সায়ের নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে ওই লাইসেন্সের একটি ছবি সংযুক্ত করে পোস্ট দেন। এরই মধ্যে ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়লে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি লিখেছেন ‘আমার বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বাবাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তার কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। রাষ্ট্রের যে কোনো ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যেকোনো লাইসেন্স করতেই পারে। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মধ্যবর্তী সময়ে উক্ত লাইসেন্স ব্যবহার করে কোন কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি।’
ঠিকাদারি লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়ে বুধবার দুপুরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা বিল্লাল হোসেন সমকালকে বলেন, দেশে এর আগেও সব মন্ত্রী এমপির স্বজনরাও তো ঠিকাদারি লাইসেন্স করে কাজ করেছে। তবে ছেলেকে (আসিফ) না জানিয়ে লাইসেন্স করাটা ভুল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এমন সমালোচনা হবে চিন্তা করিনি। এ নিয়ে আমি সত্যি বিব্রত। আজ সকালে ঢাকার বাসায় এলজিইডির লোকজন এসেছিলেন, আমি লাইসেন্সটি বাতিলের আবেদনে সাইন (স্বাক্ষর) করে দিয়েছি। এরই মধ্যে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে বলেও জানতে পেরেছি। এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়।