চার বিঘা জমিতে শিম চাষ করেন আবু হানিফ। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই চাষির বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া গ্রামে। মাস চারেক আগে শুরু হওয়া অতিবর্ষণের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় তলিয়ে যায় তাঁর পুরো জমি। পাশাপাশি ধীরে ধীরে মরতে থাকে জমির পাশে রোপণ করা আম, কাঁঠাল, পেয়ারা ও কুল বাগানের গাছ। আবু হানিফের ভাষ্য, জলাবদ্ধতার কারণে এবার তাঁর আড়াই লাখের বেশি টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

এই চাষির মতো ক্ষতির মুখে পড়েছেন ডুমুরিয়ার হাজার হাজার বাগানি ও কৃষি পরিবার। পানি নামার শুরুতেই সব জায়গায় মরতে শুরু করে ফলদ ও বনজ সম্পদ। ইতোমধ্যে চার লক্ষাধিক ফলদ ও বনজ গাছ মারা গেছে। আধমরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে আরও দেড় লক্ষাধিক গাছ।   

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডুমুরিয়া অঞ্চলে অতিবর্ষণ শুরু হয়; যা থেমে থেমে চলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। টানা আড়াই মাসের বর্ষণে উপজেলার ২২৬টি গ্রামের প্রায় ৭৫ ভাগ এলাকা তলিয়ে যায়। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। দীর্ঘ সময় ধরে পানি নামতে পারেনি। ফলে ফলদ ও বনজ গাছ ধীরে ধীরে মরতে শুরু করে। একই সঙ্গে হাজার হাজার হেক্টরের সবজি ক্ষেত, মৎস্য খামার, পুকুর, কাঁচা ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রামীণ সড়কও ক্ষতির মুখে পড়ে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুমান, এ জলাবদ্ধতার কারণে স্থানীয় জনসাধারণের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের একজন শ্যামল মণ্ডল। তাঁর বাড়ি রংপুর মুজারখুটা গ্রামে। সাত বছর আগে তিনি নিজ মাছের খামারের বেড়িবাঁধের ওপর পাঁচ শতাধিক আম, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা ও অন্যান্য ফলের চারা রোপণ করেন। সব গাছেই পর্যায়ক্রমে ফলন আসে। গত বর্ষায় বাঁধ তলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক গাছ মারা যায় শ্যামলের। আরও প্রায় ৯০টি গাছ আধমরা অবস্থায় রয়েছে। এতে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে শ্যামল মণ্ডল বলেন, পানি নামলে নতুন করে সব গাছের চারা রোপণ করতে হবে।

নভেম্বরের মাঝামাঝি উপদ্রুত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করে। তবু প্রায় ৩৫ ভাগ এলাকা তলিয়ে আছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নের মধ্যে রয়েছে রংপুর, ধামালিয়া, রঘুনাথপুর, মাগুরাঘোনা, গুটুদিয়া ও ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়ন। এসব এলাকার ৪০ শতাংশ এলাকা এখনও পানির নিচে। বেশি ক্ষতি হয়েছে আম, কাঁঠাল, আমড়া, পেয়ারা, লেবু, ড্রাগন ফল, কুল, সজনে, জামরুল, কলাবাগানের। নারকেল, সুপারি, শিরীষ, মেহগনি, ইপিল-ইপিলের মতো গাছগুলো এখন মৃত্যুর মুখে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে এলাকার নদী-খাল খননের গুরুত্ব তুলে ধরেন ডুমুরিয়া মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জিএম আমান উল্লাহ আমান। তিনি বলেন, গাছের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিবিড়। গাছশূন্য হলে পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। নদী-খাল খনন ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ না করলে প্রতিবছর হাজারো মানুষের ক্ষতি হবে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) উজ্জ্বল মল্লিকের ভাষ্য, জলাবদ্ধতার কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। ফলে চর্মরোগ, ডায়রিয়া, আমাশয় ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে ডুমুরিয়ায় এমন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। জলাবদ্ধতার শিকার এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে তাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন।

দ্রুত ফলনের আশায় মানুষ কলমের গাছ রোপণ করেন বলে মনে করেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইনছাদ ইবনে-আমিন ও বন কর্মকর্তা মো.

লিয়াকত আলী খান। তাদের ভাষ্য, এই প্রক্রিয়ায় ছোট গাছে স্বল্প সময়ে অধিক ফল পাওয়া যায়। তাই চাষিরা বাড়ির আঙিনা, ঘেরের বাঁধ ও সড়ক ঘেঁষে বাগান করছেন। আড়াই মাসের বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চার লাখের বেশি গাছ মারা গেছে; আরও দেড় লাখের বেশি আধমরা। তবে এ সংখ্যা বাড়তে পারে। ক্ষতির তথ্য চিত্র জানতে কাজ চলছে। 

পানি নিষ্কাশনে সেচযন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। ফলে পানি প্রায় নেমে গেছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-আমিন। তিনি বলেন, কৃষকের জীবনে স্বাভাবিক গতি ফিরেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী-খাল খনন ও পলি অপসারণে পরিকল্পনা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০ কোটির টাকার একটি প্রকল্পও নিয়েছে 
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এ কাজ শুরুর আশা করছেন তিনি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যানসিটির সামনে রিয়াল: চ্যাম্পিয়নস লিগ প্লে-অফ

বলা হয়, ‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত্রি হয়।’ পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গেও যেন ঠিক তাই ঘটল।

গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি, ২০২৫) রাতে ক্লাব ব্রুগের বিপক্ষে জিতে কোনরকম ভাবে প্লে-অফে জায়গা পেয়েছিল ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী দল ম্যানসিটি। তাতে নিশ্চিত হয়ে যায় সেরা ষোলোতে উঠতে গেলে তাদের পরাজিত করতে হবে আসরটির ইতিহাসের অন্যতম সেরা দুই দল রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা বায়ার্ন মিউনিখকে। প্রতিপক্ষ নিশ্চিত হবে ড্র্যের মাধ্যমে। এই ব্যাপারে সিটির ম্যানেজার গার্দিওলা সংবাদ মাধ্যমের সামনে ওকেপটে স্বীকার করেন, ‘ওরা আমাদের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ। একটি দল এই প্রতিযোগিতার রাজা। অন্যটি দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় রাজা।’

আরো পড়ুন:

চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৮ ম্যাচের মহারণ, দলগুলোর শেষ সমীকরণ

আনচেলত্তির বিশ্বাস টাকাকে উপেক্ষা করে ‘গৌরব’ বেছে নিবেন ভিনিসিয়ুস

 

আজ শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি, ২০২৫) বিকেলে সুইজারল্যান্ডের নিওনে চ্যাম্পিয়নস লিগের ২০২৪-২৫ মৌসুমের প্লে-অফের ড্র অনুষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। সেখানে রেকর্ড ১৫ বারের শিরোপাধারী রিয়াল প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে ধুঁকতে থাকা ম্যানসিটিকে। গোটা অনুষ্ঠানের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত ছিল এটাই। অন্যদিকে বায়ার্নের প্রতিপক্ষ সেল্টিক।

ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরের গ্রুপ পর্বের পদ্ধতি বদলে এই মৌসুমে ৩৬ দল নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল রাউন্ড লিগ। ৮ রাউন্ডের খেলা শেষে শীর্ষ ৮টি দল সরাসরি যোগ্যতা অর্জন করেছে সেরা ষোলোতে খেলার। শীর্ষে থাকা লিভারপুলের সঙ্গে বার্সেলোনা, আর্সেনাল, ইন্টার মিলান, আতলেতিকো মাদ্রিদ, লেভারকুসেন, লিল এবং অ্যাস্টন ভিলা আছে এই তালিকায়।

অন্যদিকে সেরা ষোলোর বাকি ৮টি দল নির্বাচনের জন্যই আজকের এই ড্র অনুষ্ঠান।
এবারের প্লে-অফের নিয়ম অনুযায়ী আগে থেকেই সবাই জানত যে, ৯ ও ১০ নম্বরে থাকা দল প্লে-অফে পাবে ২৩ বা ২৪ নম্বর দলকে। এভাবে ১১/১২ খেলবে ২১ বা ২২, ১৩/১৪ খেলবে ১৯ বা ২০ ও ১৫/১৬ খেলবে ১৭ বা ১৮ নম্বর দলের বিপক্ষে।

 

প্লে–অফে কে কার মুখোমুখি

ব্রেস্ত–পিএসজি
ক্লাব ব্রুগা–আতালান্তা
ম্যানচেস্টার সিটি–রিয়াল মাদ্রিদ
জুভেন্টাস–পিএসভি
ফেইনুর্ড–এসি মিলান
সেল্টিক–বায়ার্ন মিউনিখ
স্পোর্টিং লিসবন–ডর্টমুন্ড
মোনাকো–বেনফিকা

দুই লেগের প্লে-অফের প্রথম লেগ অনুষ্ঠিত হবে ফ্রেব্রুয়ারির ১১-১২ তারিখ। আর একই মাসের ১৮-১৯ তারিখে দ্বিতীয় লেগের খেলা মাঠে গড়াবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ