কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইংরেজিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই প্রযুক্তি এখন আর কাল্পনিক বিষয় নয়; বাস্তবতা। প্রতিনিয়ত এ প্রযুক্তি এখন আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলছে গভীরভাবে। কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগ– সর্বক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে মানুষের কাজের পদ্ধতি। চিন্তায় যোগ করছে নতুন ক্ষেত্র। আগে যে কাজ করতে অনেক সময় লাগত; এআইর কল্যাণে তা এখন করা সম্ভব হচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে; এআই টুলে সুনির্দিষ্টভাবে ইনপুট দিয়ে। নিবন্ধ লেখা থেকে শুরু করে ছবি ও ভিডিও তৈরি, সম্পাদনাসহ সবকিছু এখন এআই দিয়ে করা সম্ভব। সময়ের সঙ্গে বিকাশ হচ্ছে এর সম্ভাবনা। একে ‘আশ্চর্য’ হিসেবে অভিহিত করলেও বোধ হয় বাড়াবাড়ি হবে না।
বস্তুত, কোনো প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান। অস্বীকার করা যাবে না– এআইর অভাবনীয় অগ্রগতিকে কাজে লাগাতে হলেও আমাদের অনুসরণ করতে হবে একই পথ। এ জন্য অর্জন করতে হবে এআই সম্পর্কে সঠিক ধারণা, ব্যবহারের দক্ষতা এবং তার সীমাবদ্ধতা বোঝার সক্ষমতা। বাস্তবতা হলো, এসবের পরিবর্তে এখনও আমাদের সমাজে শোনা যায় এআই সম্পর্কে নানা নেতিবাচক প্রচারণা। মনে রাখা দরকার, বর্তমান যুগে দক্ষতা বলতে শুধু কোনো কাজের পারদর্শিতাকেই বোঝায় না; বরং সমকালীন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলানো, এর সুবিধা কাজে লাগানো এবং ওই প্রযুক্তির জটিলতা বুঝে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকেও বোঝায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে আমাদের টিকে থাকতে হলে একে এড়িয়ে না চলে বরং তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। অর্জন করতে হবে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও সঠিকভাবে ব্যবহারের দক্ষতা।
প্রসঙ্গত, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২৩ সালের প্রতিবেদনের একটি তথ্য মনে রাখা দরকার। যেখানে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব বাংলাদেশের চাকরিবাজারে কীভাবে পড়বে, এ নিয়ে গবেষণা এখনও সেভাবে হয়েছে কিনা জানি না। তবে এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের শঙ্কাও বিবেচনায় রাখা জরুরি। তাদের মতে, এআইর কারণে বিশ্বব্যাপী ভবিষ্যতে সব ধরনের চাকরির অন্তত ৪০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ অবস্থায় এটা সহজেই অনুমেয়, এআই প্রযুক্তির যত অগ্রগতি হবে, প্রতিষ্ঠানগুলোয় ততই বাড়বে অদক্ষ ও অপ্রয়োজনীয় কর্মী ছাঁটাই; অন্যদিকে বাড়বে বেকারত্ব। শুধু মুনাফা বৃদ্ধির জন্য নয়, এটা তাদের করতে হবে খোদ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই।
এআই প্রযুক্তি এখন বিকাশ লাভ করছে খুব দ্রুত। চাকরির বাজারে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম কর্মীর চাহিদা। অথচ এ ধরনের কর্মী তৈরি এবং বিদ্যমান জনশক্তিকে এটি ব্যবহারে সক্ষম করার মতো দৃশ্যমান উদ্যোগ তেমন দেখা যাচ্ছে না। মনে রাখা দরকার, আমাদের দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ এখনও বেকার। বিদ্যমান চাকরিবাজারে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও তাদের একটি অংশ সে সুযোগ নিতে পারছে না শুধু প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে। এ অবস্থায় এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম জনশক্তি তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপহীনতা আমাদের বর্তমান প্রজন্মের বেকারত্বের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। প্রশ্ন হলো, চাকরিবাজারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম জনশক্তির চাহিদা যেখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে, সেখানে এআই লিটারেসি ছাড়া তরুণ জনগোষ্ঠী ভবিষ্যৎ চাকরিবাজারে প্রবেশ করবে কীভাবে? প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ইতোমধ্যে। এ পরিস্থিতিতে এআই লিটারেসিসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরিতে আমাদের পিছিয়ে থাকা ঠিক হবে না।
জাহিরুল ইসলাম: ব্যাংক কর্মকর্তা
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ কর ব জ র ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামে অনশনে বৈষম্যবিরোধীরা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জড়িত সবার ফাঁসির দাবিতে অনশন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ অনশন শুরু করেন তারা। পরে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ৮টা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনশন চলছিল। এর আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিপ্লবের ছয়মাস পূরণ হতে যাচ্ছে। আমরা এখনও এ সরকারের কাছে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। আমাদের ভাইদের রক্ত এখনও রাজপথে লেগে আছে। আমি এখানে বসলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে না আমরা এখান থেকে উঠব না। আমাদের লড়াই চলছে, চলবে। আমরা আমাদের আমরণ অনশন চালিয়ে যাব। আমরা বিচার চাই। বিচার ছাড়া কোনো কথা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকার আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় বসেছে। ইউনূস সরকার কি করে। খুনি বাইরের দেশে বসে আছে। তাদের ধরে এনে ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে হবে। এটাই আমাদের শেষ কথা।’
রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে যেভাবে ফ্যাসিবাদী কাঠামো গড়ে উঠেছিল, সেটাকে ভেঙে দিয়ে খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে নেমে এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আমরা ন্যূনতম সংস্কার ও বিচার পাইনি। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আমাদের দুই হাজারের অধিক ভাই জীবন দিয়েছে। তারা রাজপথে সাহসিকতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।’
রাসেল আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এখনও আমাদের খুনি হাসিনা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের বিচারের দাবিতে রাজপথে নামতে হয়। আমাদের এ মুক্ত বাতাসে এখনও লাশের গন্ধ ভেসে বেড়ায়। বারবার আমাদের তাদের বিচারের দাবিতে আওয়াজ তুলতে হচ্ছে। এ অন্তর্বর্তী সরকারকে সেসব খুনিদের বিচার করার জন্যই ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। আজও ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণ্ডাবাহিনী বীর চট্টলার বুকে মিছিল করেছে। খুনি হাসিনাসহ আমাদের ভাইদের যারা খুন করেছে, তাদের বিচার ও ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে এখন থেকেই আমরণ অনশন পালন করব।’
আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘এখনো তারা সড়কে আছেন। তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।’
অনশনকারীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রুত বিচার আইনে বিভাগীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও উস্কানিদাতাদের গ্রেপ্তার-বিচার করা, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে বিচার করা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা, সব হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, অপরাধ ও নির্যাতনের বিচার করা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, আওয়ামী লীগ নেতাদের অবৈধভাবে অর্জিত সব অর্থ ও সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজেয়াপ্ত করা, বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জীবনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে গ্রহণ করতে হবে ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন করাসহ রাষ্ট্রের যাবতীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারের রূপরেখা প্রদান করতে হবে।