ঢাল-তলোয়ারহীন বনপ্রহরীরা যেন নিধিরাম সর্দার
Published: 15th, January 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় মোট বনাঞ্চলের পরিমাণ ১৮ হাজার ২৫০ হেক্টর। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এই বনে যে কোনো কাজ করা চ্যালেঞ্জিং। অথচ টেকনাফে এই বিশাল বনাঞ্চল পাহারার জন্য প্রহরী রয়েছেন মাত্র ৪১৫ জন। অর্থাৎ গড়ে ৪৫ হেক্টর বনাঞ্চল পাহারার দায়িত্ব পালন করেন মাত্র একজন। ফলে গাছ চুরিসহ বনকেন্দ্রিক নানা অপরাধ ঠেকানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যেই নতুন করে যোগ হয়েছে অপহরণ আতঙ্ক।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, গত এক বছরে টেকনাফে অন্তত ১৮৭ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে অধিকাংশই মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। এর মধ্যে আছেন বনরক্ষীরাও। ফলে বনরক্ষা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের, সেই বনরক্ষীরাই এখন আতঙ্কে দিন পার করছেন।
সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের হরিকুলার বুড়াবনিয়া বনে মুখোশধারী অর্ধশতাধিক অস্ত্রধারী গুলিবর্ষণের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে। এতে ভয়ে সেখানকার প্রহরীরা বন ত্যাগ করেন। তার আগে ৩০ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সীমান্ত পরির্দশনের সময় টেকনাফের জাদিমুড়া বনে কাজ করতে যাওয়া ১৯ শ্রমিক অপহরণের শিকার হন। বন কর্মকর্তারা বলছেন, দায়িত্ব পালনের সময় প্রহরীদের কাছে আত্মরক্ষার হাতিয়ার বলতে থাকে শুধু লাঠি। অন্যদিকে সন্ত্রাসীরা সবাই সশস্ত্র। ফলে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রহরীরা সন্ত্রাসীদের হামলা-মারধর-অপহরণের শিকার হন। বনাঞ্চল রক্ষায় প্রহরীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন তারা।
বন বিভাগ বলছে, টেকনাফে হোয়াইক্যং রেঞ্জে ৫ হাজার ৪২৭, শীলখালী রেঞ্জে ৬ হাজার ২০০ এবং টেকনাফ রেঞ্জে ৬ হাজার ৬২৪ হেক্টর বন আছে। ইউএসএইডের অর্থয়ানে নেচার অ্যান্ড লাইফ প্রকল্পের অধীনে এসব বনাঞ্চল পাহারায় দায়িত্ব পালন করছেন নারী-পুরুষসহ ৪১৫ প্রহরী। তাদের দেখভাল করে এনজিও সংস্থা কোডেক। এ বিষয়ে নেচার অ্যান্ড লাইফ প্রকল্পের সাইট সমন্বয়কারী শওকত আলী বলেন, ‘টেকনাফ উপজেলায় ৪১৫ নারী-পুরুষ প্রহরী বন রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে আমার অধীনে ২১৯ জন রয়েছেন। এটা সত্য, সম্প্রতি বন-পাহাড়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা বন প্রহরীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। কিছুদিন আগে বন থেকে ১৯ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। তার আগে গত বছর হ্নীলা ইউনিয়নের মোচনী বিটের নেচার পার্ক বন থেকে আমাদের তিন প্রহরীকে ধরে নিয়ে ৬০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল সন্ত্রাসীরা।
বন প্রহরীরা বলছেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং, জাদিমুড়া, লেদা, মৌচনী, নেচার পার্ক, রাজারছড়া, বাহারছড়া ও শীলখালীর বেশ কয়েকটি স্থান থেকে বেশি অপহরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্য মাঠ পাড়া, শিয়াল্লাগুনা, বেতবনিয়া, হরবইন্ন্যার জোড়া, বরছড়া, বালুর মাঠ, পাহাড়ের টিএনটি, বড় ছংকলা অন্যতম। টেকনাফে বনের পাঁচটি বাগান পাহারার দায়িত্বে থাকা প্রহরীদের নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ। তাঁর অধীনে ২১ প্রহরী রয়েছেন। তারা ২০০ হেক্টর গর্জন-সেগুনসহ বিভিন্ন বাগানের পাশাপাশি বন রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, বনে ২০২২-২৩ সালে গড়া বাগান পরিষ্কারের কাজ চলমান রয়েছে। কিছুদিন আগে জাদুমুড়া বনে কাজ করতে যাওয়া ১৯ শ্রমিক অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। এর পর থেকে বন প্রহরীরাও আতঙ্কের মধ্য রয়েছেন।
বন রক্ষার দায়িত্ব পালন করে টেকনাফের কেরুনতলীর বাসিন্দা খুরশিদা বেগম ২০১২ সালে পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ওয়াংগারি মাথাই পুরস্কার। ওই বছর পরিবেশ নিয়ে কর্মরত বিশ্বের ৫০০ জন নারীকে পেছনে ফেলে খুরশিদা এই স্বীকৃতি অর্জন করেন। তিনি ২০০৬ সালে ২৮ নারীকে নিয়ে দিনে ১০ টাকার বিনিময়ে বন প্রহরীর দায়িত্ব পালন শুরু করেছিলেন। এখন বনের বিষয়ে জানতে চাইলে খুরশিদা বেগম বলেন, ‘আগে আগরসহ পাঁচটি বাগান ২৮ নারী প্রহরী নিয়ে রক্ষা করেছি। কিন্তু এখন বনের অবস্থা খুব খারাপ। সরকারের উচিত বনকে নিরাপদ করে তুলতে অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো। প্রায়ই বনে অস্ত্রধারীদের দেখা যাচ্ছে।’
টেকনাফ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ বলেন, ‘বলতে গেলে বন এখন প্রহরীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত বনকে নিরাপদ করে তুলতে অভিযান চালানো। অন্যথায় বন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (টেকনাফ ও উখিয়া) মনিরুল ইসলাম বলেন, এটা সত্য, অপহরণের ভয়ে বন প্রহরীরা আতঙ্কে আছেন। আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা রয়েছে প্রহরীরা কীভাবে নিরাপদে বন পাহারায় নিয়োজিত থাকতে পারেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপহরণ র শ ক র ন র পদ আতঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
পাহাড়ে অপহরণের আলোচিত যত ঘটনা
পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত ও অপহরণ নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলে বিদেশি নাগরিক, রাজনৈতিক নেতাসহ নানাজনকে অপহরণের ঘটনা দেশ ছাড়িয়ে আলোচিত হয়েছে বহির্বিশ্বেও। সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে অপহরণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে, যা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ১৯৮৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত চাঞ্চল্যকর কিছু অপহরণের ঘটনা জানা যাক।
তিন বিদেশি অপহরণ (২০০১)
২০০১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির নানিয়ারচরে অপহৃত হন ডেনমার্কের উন্নয়ন সংস্থা ড্যানিডার তিন কর্মকর্তা। ড্যানিডা নিযুক্ত সড়ক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কেমসেক্স ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে রাঙামাটি-মহালছড়ি সড়কের প্রশস্ততা বাড়ানোর কাজে তথ্যানুসন্ধানের জন্য ওই ব্যক্তিরা সেখানে গিয়েছিলেন। তিনজনই ছিলেন ইউরোপীয়। এই ঘটনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও আলোড়ন তোলে।
অপহৃত তিনজন বিদেশির মধ্যে টারবেন মিকেলসন (৩৮) ও নিলস হুলগার্ড (৬৩) ছিলেন ডেনমার্কের অধিবাসী। অপরজন টিম সেলবি (২৮) ছিলেন ইংল্যান্ডের নাগরিক। অপহরণের পর দেশ দুটির রাষ্ট্রদূত তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে দেখা করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপহৃতদের উদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে। আলোচনাও চলতে থাকে। অপহরণকারীরা ৯ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন।
দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে ফলাও করে এই সংবাদ প্রকাশ হতে থাকে। ১৯ ফেব্রুয়ারি সরকারদলীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার রাঙামাটিতে এক ব্রিফিংয়ে অপহরণকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান গণমাধ্যমকর্মীদের। একই সময়ে তিনি অপহরণের জন্য পার্বত্য চুক্তির বিরুদ্ধে থাকা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেন। পার্বত্য চুক্তির পরের বছর দলটির জন্ম হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দলটিকে অপহরণের দায় দেয়।
১৯ ফেব্রুয়ারি অপহৃত মিকেলসনের লেখা একটা চিরকুটও প্রদর্শন করেন দীপংকর তালুকদার। ওই চিরকুট তিনি স্ত্রীর উদ্দেশে লিখেছিলেন। তাতে তাঁরা অপহরণকারীদের জিম্মায় ভালো আছেন বলে বার্তা দিয়েছিলেন। অবশ্য মিকেলসনের উৎকণ্ঠিত স্ত্রী ডিভিনা টরবেন পরে ইংল্যান্ড থেকে সন্তানদের নিয়ে রাঙামাটি চলে আসেন। রাঙামাটির কাউখালীর এক দুর্গম এলাকা থেকে ১৭ মার্চ এই তিন বিদেশির মুক্তি মিলেছিল।
মুক্তির পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করে, তাদের সঙ্গে অপহরণকারীদের ব্যাপক (১০০টির বেশি) গোলাগুলি হয়। কিন্তু অপহৃত তিন বিদেশি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, উদ্ধারের সময় অপহরণকারীদের সঙ্গে কোনো গোলাগুলি হয়নি। তাঁরা কেবল দু-একটি গুলির শব্দ শুনেছেন।
শেল অয়েলের ৬ জন অপহরণ (১৯৮৪)
১৯৮৪ সালে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি সিজকমুখ এলাকা থেকে অপহৃত হন তেল অনুসন্ধানকারী শেল অয়েলের ছয় কর্মকর্তা। প্রথমে তিনজনকে মুক্তি দেওয়া হয়। বাকি তিনজনকে প্রায় এক মাস পর এক কোটি টাকা ও সোনার বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হয় বলে ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল প্রথম আলো পত্রিকার খবরে প্রকাশ হয়েছিল। পার্বত্য চুক্তির আগে সংঘটিত আলোচিত এ ঘটনার জন্য জেএসএসের সামরিক সংগঠন শান্তিবাহিনীকে দায়ী করা হয়।
টেলিটকের পাঁচ কর্মী অপহরণ (২০১৩)
২০১৩ সালের ৮ জুলাই রাঙামাটির বাঘাইছড়ি থেকে অপহরণ করা হয় মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান টেলিটকের পাঁচ কর্মীকে। তাঁদের কাছ থেকে মুক্তিপণও দাবি করা হয়। এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অপহরণের ১৭ দিন পর ২৬ জুলাই খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় তাঁরা জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান।
মুক্তির পর টেলিটকের কর্মী মো. আখতারুজ্জামান বলেছিলেন, অপহরণের পর তাঁদের তিন দিন একটি মাটির ঘরে রাখা হয়েছিল সশস্ত্র পাহারায়। এরপর বিভিন্ন পাহাড়ে ঘোরানো হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখন জানায়, অপহৃতদের মুক্তির জন্য কোনো মুক্তিপণ দিতে হয়নি।
জেএসএসের ৭০ নেতা-কর্মী অপহরণ (২০১৩)
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার কাট্টলীবিল থেকে জেএসএসের ৭০ নেতা-কর্মীকে অপহরণ করা হয় ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। লংগদু ও বাঘাইছড়ি থেকে নৌকাযোগে রাঙামাটি সদরে জেএসএসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। একটি সশস্ত্র দল কাট্টলীবিল এলাকায় নৌকাটিকে জিম্মি করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ ঘটনার জন্য জেএসএস ইউপিডিএফকে দায়ী করে। তবে ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।
অপহরণের এই ঘটনা অপহৃত ব্যক্তিদের সংখ্যার বিচারে সবচেয়ে বড়। অপহৃত ব্যক্তিদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দিতে এক বছরের মতো সময় পার হয়। মুক্তিপণও দিতে হয়েছিল বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
কল্পনা চাকমা অপহরণ (১৯৯৬)
১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নিজ বাড়ি থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ১২ জুন ছিল ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই বছরের ১৩ জুন এ ঘটনায় বাঘাইছড়ি থানায় মামলা করেন কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা। তবে ৩৯ জন কর্মকর্তা তদন্ত করেও বারবার মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। গত বছরের ২৩ এপ্রিল কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলাটি রাঙামাটির আদালতে খারিজ করে দেওয়া হয়।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অপহরণ (২০২৪)
বম জনগোষ্ঠীর কিছু তরুণ ও যুবকের উদ্যোগে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সংগঠন ২০২২ সালে প্রকাশ্যে আসে। সংগঠনটির কার্যক্রম মূলত বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি এবং রাঙামাটির বিলাইছড়ি এলাকায় দেখা যায়। গত বছরের ২ এপ্রিল কেএনএফ রুমা বাজারে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে।
রাত ৯টার দিকে কেএনএফের সশস্ত্র দল ব্যাংকে হামলা চালায়। তারা ব্যাংকের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং অন্য লোকজনকে জিম্মি করে। এরপর পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছ থেকে দুটি সাব-মেশিনগানসহ (এসএমজি) ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করেন কেএনএফ সদস্যরা। তাঁর মুক্তির জন্য ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ৪৮ ঘণ্টা পর মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে।
দুই নেত্রী অপহরণ (২০১৮)
২০১৮ সালের ১৮ মার্চ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দয়া সোনা চাকমাকে অস্ত্রের মুখে কুতুকছড়ি এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়৷ এ ঘটনার প্রতিবাদে ২১ মার্চ খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় ইউপিডিএফ। এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিককে দায়ী করা হয়। এর আগের বছর ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর মূল ইউপিডিএফ ভেঙে তপনজ্যোতি চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইউপিডিএফ শুরু থেকে ছিল প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন। অপহরণের ৩১ দিন পর ১৯ এপ্রিল খাগড়াছড়ির মধুপুর এলাকায় অপহৃত ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
পাঁচ পিসিপি নেতা অপহরণ (২০২৫)
১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় সদরে যাওয়ার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় অপহৃত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। তাঁরা সবাই জেএসএস সমর্থিত ছাত্রসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) নেতা। অপহৃতরা হলেন রিশন চাকমা, মৈত্রীময় চাকমা, দিব্যি চাকমা, লংঙি ম্রো ও অলড্রিন ত্রিপুরা।
পিসিপির (জেএসএস) কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুণ ত্রিপুরা এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁদের দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তি চাইছি। অপহৃতরা সবাই পিসিপির নেতা-নেত্রী’। অপহরণের ঘটনায় জেএসএসের অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন ইউপিডিএফের সংগঠক অংগ্যা মারমা।
যেসব কারণে অপহরণ
সমতলে বেশির ভাগ অপহরণের ঘটনা থাকে মূলত মুক্তিপণ আদায়কেন্দ্রিক। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক অপহরণের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর বিবাদ। জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, অপহরণ সমতলেও হচ্ছে। পাহাড়ে বিভিন্ন বিবদমান দল রয়েছে, সেটি এ ধরনের ঘটনার একটি কারণ। এ ছাড়া এর পেছনে পাহাড়ের প্রশাসনের ভূমিকাও কিছুটা দায়ী। পার্বত্য চুক্তির আগে-পরে আন্দোলন, চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রগতি কম থাকা কিংবা আরোপিত অনেক বিষয় এসব ঘটনার পেছনে কাজ করে। আসল রোগ না সারানোর কারণে অপহরণ কিংবা সংঘাতের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।