চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতামুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নগরে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারি তিন সংস্থা। খরচ হচ্ছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে তিন ভাগ, ৭৫ শতাংশের বেশি। এর পরও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মেলেনি। গত বছর বর্ষায় সাতবার ডুবেছে চট্টগ্রাম নগর।

সাত বছর পর এসে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ২৬টি প্রতিবন্ধকতার কথা বলছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। জলাবদ্ধতামুক্ত করতে হলে তারা এ সমস্যাগুলো সারানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা সমস্যার সুরাহার চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চট্টগ্রামের মেয়র। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে ‘চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক বৈঠকে বসেছে উপদেষ্টা পরিষদ। ওই বৈঠকে ৯টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে প্রকল্পগুলোর প্রতিবন্ধকতা খতিয়ে দেখতে আগামী শনিবার সরেজমিন পরিদর্শনে আসছেন চার উপদেষ্টা।

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এর মধ্যে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের’ ব্যয় হবে ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্য নিয়ন্ত্রণ জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন, নিষ্কাশন ও উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

সিংহভাগ কাজ শেষ প্রকল্পগুলোর

২০১৭ সালে নেওয়া ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের’ অধীনে ৩৬টি খালের মধ্যে ১৯টি খালের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। অন্য পাঁচটি খালের কাজও শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পটির অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। একই সময়ে নেওয়া কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ১২টি স্লুইসগেটের মধ্যে ১০টির কাজ শেষ হয়েছে। সাতটি পাম্পহাউস নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ হয়েছে ৮২ শতাংশ। ২০১৯ সালে নেওয়া চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন, নিষ্কাশন ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ৪৩ শতাংশ। প্রকল্পটির আওতায় ২১টি স্লুইসগেটের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র চারটি। ১০টির কাজ চলছে। সাতটির কাজ শুরুই হয়নি। ২০১৪ সালে নেওয়া বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। ৩ কিলোমিটার খালের মধ্যে ২ কিলোমিটার খাল খননকাজ শেষ হয়েছে।

মিলছে না সুফল

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর চার ভাগের মধ্যে তিনটি প্রকল্পের তিন ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি প্রকল্পটির কাজও প্রায় অর্ধেক শেষ হয়েছে। তবুও বর্ষায় দফায় দফায় ডুবছে নগর। জলাবদ্ধতায় নগরের  ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।

এ অবস্থায় গত ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড.

মো. জিয়াউদ্দীন স্বাক্ষরিত প্রকল্পগুলোর সারসংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে প্রকল্পগুলোর পরিচালকরা ২৬টি প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেন। প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে রয়েছে– চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পাওয়া। ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের বড় প্রকল্পটিতে ৭৫৩ কোটি টাকা সরকারি ঋণ ও ৭৫৩ কোটি সিডিএর নিজস্ব অর্থায়নে কাজ বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। কিন্তু সিডিএর আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড় কাটা ও বন উজাড়ের ফলে খাল-নালা ভরাট হওয়া, সচেতনতার অভাবে পরিষ্কারের পরও ময়লা-আবর্জনা খাল-নালায় নিক্ষেপ, খালপাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, খালের ভেতর নির্মিত বহুতল ভবন উচ্ছেদ করে খাল সংস্কারে জটিলতা, খালপাড়ের ভূমি ও স্থাপনায় আদালতের স্থগিতাদেশ থাকা, প্রকল্পের যন্ত্রপাতির সংকট, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলাশয় হ্রাস ও কর্ণফুলী নদীর নাব্য কমে যাওয়া।

উপদেষ্টা পরিষদের ৯ সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে করণীয় নির্ধারণে গত ৫ জানুয়ারি এক সভায় ছিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সভায় আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে ৯টি করণীয় নির্ধারণ করা হয়। 

এগুলো হলো– চট্টগ্রাম শহরে সব ধরনের পাহাড় কাটা বন্ধ করা, চট্টগ্রাম শহরের প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা, সিডিএ প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন ১৭টি স্লুইসগেটের মধ্যে ১৫টি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের অধীনে ২১টির মধ্যে ১২টি আগামী মের মধ্যে চালু করা, যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে গঠিত কমিটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজের সমন্বয় করবে।

সিদ্ধান্ত হয় বাস্তবায়ন হয় না

২০২১ সালের অক্টোবরে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর সমন্বয়ে বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে একটি কমিটি করা হয়। কমিটি ইতোমধ্যে অন্তত এক ডজন সভা করেছে। প্রতিটি সভায় পাহাড় কাটা বন্ধ, খাল-নালায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধসহ নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তের কোনোটিই কখনও কার্যকর হয়নি। 

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, নগরে অবস্থিত ৬০ শতাংশ খাল, ৩০ শতাংশ নালা ও নির্মাণাধীন রেগুলেটরের মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ করছি আমরা। এর বাইরে থাকা খাল-নালাগুলো পরিষ্কার না থাকলে পানি নিষ্কাশন হয় না। আবার অন্য রেগুলেটরগুলো চালু না হলে জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। যার কারণে প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ হলেও জলাবদ্ধতা হয়।

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ও মার্কেটে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য প্লাস্টিকের বিন বিতরণ শুরু করেছি। নগরবাসীকে পলিথিন, প্লাস্টিক, কর্কশিটসহ অপচনশীল দ্রব্যাদি যত্রতত্র নালা-নর্দমায় না ফেলে সেগুলো নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলার আহ্বান জানাচ্ছি। শুরুতে সচেতন করা হবে, পরে আমরা আইনি পথে হাঁটব।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ক জ শ ষ হয় ছ উপদ ষ ট সমস য নগর র ন রসন

এছাড়াও পড়ুন:

নয়াদিল্লিতে বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক ফেব্রুয়ারিতে

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের মধ্যে মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের বৈঠক ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধির জয়সওয়াল জানিয়েছেন, আলোচনায় সীমান্ত-সম্পর্কিত সব বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হবে এবং পারস্পরিক সম্মত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তিগুলোকে ‘সম্মান’ করার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হবে।

সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে জয়সওয়াল বলেন, ‘২০২৫ সালের ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে ডিজি পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই আলোচনায় সীমান্ত সম্পর্কিত সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা আশা করি পারস্পরিকভাবে সম্মত সব সমঝোতা স্মারক ও চুক্তিকে সম্মান জানানো হবে। এগুলো দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কাঠামোগত সম্পৃক্ততার ভিত্তি এবং সীমান্তে পারস্পরিকভাবে উপকারী নিরাপত্তা ও বাণিজ্য অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তা করে।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ