চট্টগ্রামে তল্লাশির জন্য অটোরিকশা থামিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন দাবি করে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন পটিয়ার চরকানাই গ্রামের মান্নান কোম্পানির বাড়ির মৃত মনছুর আহাম্মেদের ছেলে মোরশেদ খান ও বোয়ালখালী থানার পশ্চিম শাকপুরা গ্রামের শামসুল আলমের ছেলে মো. করিম। 

পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। তারা হলেন– এসআই হাবিবুর রহমান ও অসিত নাথ, কনস্টেবল আবদুল সাত্তার, আমিরুল ইসলাম ও ফরিদ শেখ। পুলিশের দাবি, গত মঙ্গলবার রাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বোয়ালখালীর দিক থেকে শহরে আসছিলেন গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি। নগরের কালুরঘাট মোহরা চেকপোস্টে পুলিশ তাদের অটোরিকশা তল্লাশির জন্য থামার সংকেত দেয়। এ সময় তারা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু করেন। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। 

গ্রেপ্তার মোরশেদ ও করিমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ কারণে কেন তারা পুলিশের ওপর উত্তেজিত হলেন, জানা যায়নি। চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, আটক দু’জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, হামলা ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা নিয়ে ট্রাম্পের ‘ধোঁকা’, প্রত্যাখ্যান আরব নেতাদের

হোয়াইট হাউসে পাশাপাশি চেয়ারে বসে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। বেশির ভাগ কথা ট্রাম্পই বলছিলেন, পাশে বিরস বদনে বসে বাদশাহ।

ট্রাম্পের ভাষ্য ছিল এমন, ‘গাজা আমাদের হবে। এলাকাটা তো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেব, তা ধরে রাখব, খুব যত্ন নেব।’

ঠিক কোন অধিকারে ট্রাম্প গাজার দখল নেবেন, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি তোলা হলে তিনি জানান, ‘আমেরিকার নিজস্ব অধিকারে’। গাজায় কীভাবে আমেরিকার ‘নিজস্ব অধিকার’ বা ‘অথরিটি’ থাকে, তা বোঝা দুষ্কর। গাজার প্রায় ২৫ লাখ ফিলিস্তিনি কোথায় যাবে, তার উত্তর ট্রাম্প আগেই দিয়েছেন। তারা জর্ডান ও মিসরে যাবে, দরকার হলে অন্যান্য আরব দেশে চলে যাবে। যেখানেই যাক, তারা স্থায়ীভাবে চলে যাবে। তাদের জন্য চমৎকার আবাসনের ব্যবস্থা হবে। এত চমৎকার ব্যবস্থা হবে যে তাদের ফিরে আসার কোনো প্রয়োজনই হবে না।

ট্রাম্প কি কথাটা ভেবেচিন্তে বলছেন, না সবাইকে ‘ধোঁকা’ দিচ্ছেন?

মার্কিন থিঙ্কট্যাংক কার্নেগি এন্ডাউমেন্টের অন্যতম ভাষ্যকার এন্ড্রু লবের সৌদি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, এটি আসলে ধোঁকা, যার উদ্দেশ্য ইসরায়েলের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা আদায় করে নেওয়া। যুক্তরাজ্যের থিঙ্কট্যাংক চ্যাথাম হাউসও একই কথা বলেছে। তবে এই সংস্থার ভাষ্যকার আহম্মদ আবুদুহর মন্তব্য, ট্রাম্পের প্রস্তাব আলাপ-আলোচনার একটি কৌশল হোক বা না হোক, তা ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রশ্নে বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলেছে।

ট্রাম্পের মুখের ওপর বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ অবশ্য কোনো কঠিন কথা বলেননি। পরে সাংবাদিকদের নিজের অবস্থা খোলাসা করে জানান, জর্ডানের পক্ষে নতুন করে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু গ্রহণ সম্ভব নয়। গাজাবাসীকে নিজ বাসভূমে রেখেই তা পুনর্নির্মাণের একটি পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে।

ইসরায়েল অনেক আগে থেকেই ফিলিস্তিনিদের জর্ডানে ঠেলে দেওয়ার পক্ষে। ১৯৪৮ ও ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের একটা বড় অংশ সে দেশে এসে আশ্রয় নেয়। তারা এখন জর্ডানের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিকভাবে তারা এতটাই শক্তিশালী যে চাইলে শুধু ফিলিস্তিনি সমর্থন নিয়েই তারা সরকার গঠনে সক্ষম। বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ নিজ অস্তিত্বের স্বার্থেই তাঁর দেশে আর নতুন কোনো ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু চান না। ২০২৩ সালে তিনি বলেছিলেন, গাজার ফিলিস্তিনিদের জর্ডানে ঠেলে পাঠানো কোনোভাবেই মানা হবে না। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য প্রকৃত “রেড লাইন’’।’ প্রভাবশালী পত্রিকা মিডল ইস্ট আই বলেছে, এই প্রশ্নে প্রয়োজনে যুদ্ধে যেতেও প্রস্তুত জর্ডান।

দীর্ঘদিন থেকেই জর্ডান মার্কিন অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে আমেরিকার কাছ থেকে দেশটি বার্ষিক দেড় বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য পেয়ে থাকে। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশটির পক্ষে এই মার্কিন সাহায্য ছাড়া টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। মিসরকেও যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সমপরিমাণ সাহায্য দিয়ে থাকে। সে কথা মাথায় রেখে ট্রাম্প দুদিন আগে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, গাজার ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ না করলে সে সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। মঙ্গলবার অবশ্য মাথা নেড়ে বললেন, না তেমন কিছু হবে না। তিনি বলেন, ‘এমন করা আমাদের স্বভাবে নেই।’

অধিকাংশ দায়িত্বশীল মহলের মতে, গাজার ২৫ লাখ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা অসম্ভব। জোরপূর্বক সে চেষ্টা হবে ‘এথনিক ক্লিনজিং’ বা জাতিগত বিনাশ। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, এটি হবে সব আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

যতই হাস্যকর হোক, কথাটা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তাঁকে উপেক্ষা করা সহজ নয়। সবাই এখন তাকিয়ে আছে সৌদি যুবরাজ সালমান বিন মোহাম্মদ ট্রাম্পের প্রস্তাবে কী বলেন তা শোনার জন্য। সালমান নিজে মুখে তেমন কিছু না বললেও সে দেশের সরকার এককথায় ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ করেছে। সৌদি শুরার অন্যতম সদস্য ইউসেফ বিন আল-সাআদুন ঠাট্টা করে বলেছেন, ট্রাম্প যদি চান তো সব ইসরায়েলিকে আলাস্কা বা চাইকি গ্রিনল্যান্ডেও পাঠাতে পারেন। সেটি হবে সবচেয়ে উত্তম সমাধান।

ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে ও অনুগত দু-চারজন রিপাবলিকান নেতা ছাড়া ট্রাম্পের গাজা দখল নেওয়ার প্রস্তাব কেউ সমর্থন করেননি। গাজায় মার্কিন সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব তো কিছুতেই নয়। লন্ডনের টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে, একজন ইসরায়েলি শিক্ষাবিদের প্রস্তাবের কথা জানার পর ট্রাম্প গাজা দখলের আজগুবি প্রস্তাব করেছেন। তবে ট্রাম্পের ভেতর মহলের কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্প আসলে পুরোনো ধ্যানধারণার বদলে নতুন কিছু করতে চান। ৭০ বছর ধরে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়েছে, কাজ হয়নি। তিনি এখন সবাইকে একটু ঝাঁকি দেওয়ার জন্য এমন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।

গাজা পুনর্গঠনে কি হবে

এই তথাকথিত ‘ঝাঁকি’ দিতে গিয়ে ট্রাম্প একটি সম্পূর্ণ বিপরীত ফল পেতে পারেন। কোনো কোনো পর্যবেক্ষক বলছেন, গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা আরব বিশ্বে প্রবল বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এখন কোনো আরব সরকারই এমন কিছু করবে না, যা ফিলিস্তিনি স্বার্থের বিপক্ষে যায়। আম্মানভিত্তিক সাংবাদিক মোহাম্মদ বিন আল-আরাবিয়াত নিউ লাইনস ম্যাগাজিনে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে আরব দেশগুলো নতুন মূল্যায়ন শুরু করেছে। এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। ট্রাম্পের গাজা প্রস্তাবের পর তিনি যুবরাজ সালমানসহ অন্য আরব নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে এক অভিন্ন আরব পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা এই মতবিনিময়ের উদ্দেশ্য।

ওয়াশিংটনে বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ও জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে গাজা পুনর্গঠনের একটি রূপরেখা তাঁরা তৈরি করেছেন। গাজাবাসীকে না সরিয়েই দু-তিন বছরের মধ্যে সেখানকার ধ্বংসস্তূপের ওপর নতুন নির্মাণ সম্পন্ন করা সম্ভব। গাজার উত্তরে এখন কার্যত কোনো ফিলিস্তিনি নেই, ফলে সেখান থেকে পুনর্গঠন শুরু হবে।

ভাষ্যকার আল-আরাবিয়াত বলেছেন, বছর দশেক আগে ‘আরব বসন্তের’ সংকটকালে এই অঞ্চলের আরব নেতারা একে অপরের ওপর সহযোগিতার মাধ্যমে সে সংকট থেকে উদ্ধার পান। এখন ইসরায়েলি হামলার মুখে ও বিরূপ মার্কিন নেতৃত্বের কারণে তাঁদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব নতুন করে গড়ে উঠেছে। এই সহযোগিতার একটি প্রকাশ দেখা যাচ্ছে আসাদ-উত্তর সিরিয়ায়। মিসরের আমন্ত্রণে ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ আরব দেশগুলোর একটি শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন চলছে, যেখানে সিরিয়ার নতুন নেতা আহমদ আল-শারার যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৈঠকের একটা লক্ষ্য হবে ফিলিস্তিন প্রশ্নে মার্কিন ও ইসরায়েলি অবস্থানের মুখে একটি পাল্টা কিন্তু অভিন্ন আরব অবস্থান প্রশ্নে মতৈক্য প্রতিষ্ঠা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ