‘বলিউডের নাচ-গান আমার কাছে এলিয়নের মতো ছিল’
Published: 15th, January 2025 GMT
বলিউড অভিনেত্রী নার্গিস ফাখরি। ২০১১ সালে ‘রকস্টার’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক ঘটে এই মার্কিন অভিনেত্রীর। এরপর ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’, ‘হাউজফুল থ্রি’-এর মতো সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই আলোচিত নায়িকা।
এক যুগের বেশি সময় ধরে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন নার্গিস। কিন্তু এই জার্নি মোটেও সহজ ছিল না। কারণ হঠাৎ ভারতে যাওয়া, হিন্দি ভাষা না জানা— সব মিলিয়ে জীবনের বাঁকে বাঁকে ছিল নতুন নতুন রহস্য! সব বাধা অতিক্রম করে আজকের নার্গিস ফাখরি।
নার্গিস ফাখরি আইটেম গানে নেচেও দর্শক মনে নাড়া দিয়েছেন। তবে আইটেম গানে পারফর্ম করাও তার জন্য সহজ ছিল না। সুভাষ কে ঝা-কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন নার্গিস ফাখরি। এ আলাপচারিতায় নার্গিস ফাখরি বলেন, “আমার কাছে তখন আইটেম গান নতুন ব্যাপার। পরে বুঝেছি, মানুষ এটাকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন।”
আরো পড়ুন:
‘অশ্লীল নাচ’ নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন উর্বশী
‘তিন বছর বিশ্বাস করতাম আমি মরে গেছি’
অভিনেতা শহিদ কাপুরের সঙ্গে আইটেম গানে পারফর্ম করার কথা স্মরণ করে নার্গিস ফাখরি বলেন, “আমি শহিদের সঙ্গে ‘ফাটা পোস্টার নিকলা হিরো’, ‘ম্যায় তেরা হিরো’ সিনেমায় আইটেম গানে নাচ করেছি। আমার কাছে তখন আইটেম ড্যান্স শব্দটা নতুন ছিল। মানুষ যখন বলতেন, এই মেয়েটি আইটেম গানে নাচ করছে, তখন তা ভালোভাবে নেওয়া হতো না। হিন্দি ভাষার মতোই বলিউডের নাচ-গান তখন আমার কাছে এলিয়নের মতো ছিল। আমি এটি শেখার পাশাপাশি উপভোগ করার চেষ্টা করছিলাম।”
আইটেম গানে অভিনেত্রীদের আবেদনময়ীরূপে হাজির হওয়ার কথাটি বলে দিতেন নির্মাতারা। তা উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “আইটেম গানে নাচের সময় অভিনেত্রীদের আবেদনময়ীভাবে হাজির হওয়ার কথা বলা হতো। একই সঙ্গে আবার মনে করিয়ে দেওয়া হতো, আমরা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যাই। আমার জন্য শুরুর দিকে এসব করা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু পরে আর অসুবিধা হতো না। আইটেম গানে নাচের জন্য সেটে কিছু মানুষকে রাখা হতো। আসলে মুম্বাইয়ের কাজের ধরন অন্য অনেক জায়গা থেকে অনেকটাই আলাদা।”
বড় পর্দায় খুব একটা নিয়মিত নন নার্গিস ফাখরি। মাঝে বিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। বিরতি ভেঙে ভারতে ফিরে ফের কাজ শুরু করেছেন তিনি।
নার্গিস ফাখরি অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘শিব শাস্ত্রী বলবো’। ২০২৩ সালে মুক্তি পায় এটি। বর্তমানে দুটো সিনেমার কাজ তার হাতে রয়েছে। ‘হাউজফুল ফাইভ’ সিনেমার কাজ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অভিনেত্রী।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষক আত্মহত্যা করলে মানুষের মুখে খাবার তুইলা দিব কারা’
‘আমার আব্বা এনজিও এবং সারের দোকান থেকে ঋণ নিয়া পেঁয়াজ চাষ করছিল। দুই বিঘা জমিতে চাষ করতে খরচ হইছে দেড় লাখ টাকা। কিন্তু বিক্রি করে পাইছে মাত্র ৫৮ হাজার টাকা। ঋণ শোধের চিন্তায় আব্বা পেঁয়াজ ক্ষেতেই বিষপানে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলো। আব্বা পেঁয়াজ বিক্রি করছিল ৬০০ টাকা মণ। অথচ এহন বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি অয় ২ হাজার টাকায়। কারণ এহন কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ নাই। আমার আব্বার মতো কৃষকরা যদি এভাবে ঠইকা আত্মহত্যা করে, তাইলে দেশের মানুষের মুখে খাবার তুইলা দিব কারা?’
ঘাম ঝরানো কষ্টের ফসলের দাম না পেয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগরে কৃষক সাইফুল শেখ অত্মহত্যা করেন। তাঁর করুণ পরিণতির কথা কাঁদতে কাঁদতে তুলে ধরলেন মেয়ে রোজেফা খাতুন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ক্ষুদ্র কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মূল্য বঞ্চনা’ তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোজেফা কৃষক বাঁচানোর আকুতি জানালেন করুণ স্বরে।
খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি) আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে মেহেরপুরের প্রান্তিক কৃষক সাইফুল শেখের আত্মহত্যার ঘটনা সরেজমিন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বক্তারা বলেন, কৃষিপ্রধান দেশে কৃষকের আত্মহত্যা শুধু ট্র্যাজেডি নয়, লজ্জাজনক। কাঠামোগত শোষণের শিকার হয়ে প্রান্তিক কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ শোষণ থেকে কৃষককে বাঁচাতে কৃষিমূল্য কমিশন গঠন, ন্যায্য বাজার ব্যবস্থাপনা তৈরি, ঋণ ব্যবস্থাপনা সহজীকরণ ও আমদানি নীতির সংস্কার প্রয়োজন।
খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের সভাপতি এম জয়নুল আবেদীন বলেন, কৃষক যখন তাঁর ফসল বাজারে তোলেন, তখনই দেখা যায় সে কৃষিপণ্যটি আমদানি করা হচ্ছে। ফলে কৃষক তাঁর ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। কৃষককে মেরে ফেলে সস্তায় কৃষিপণ্য কেনার অধিকার কারও নেই। উৎপাদক ও ভোক্তা– দু’জনের কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা সরকারকে নিশ্চিত করার আহ্বান জানান জয়নুল আবেদীন।
কীভাবে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেটার উদাহরণ তুলে ধরে খানির সহসভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিক বলেন, ফসল যখন কৃষকের ঘরে থাকে, তখন এর দাম থাকে না; কিন্তু ফসল যখনই মহাজনের হাতে যায়, তখনই দাম বেড়ে যায়। মেহেরপুরের কৃষক সাইফুল শেখ যখন পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আত্মহত্যা করছেন, তখন পেঁয়াজের মণপ্রতি দাম ছিল ৬০০ টাকা। ঠিক তার দুই সপ্তাহ পর মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম উঠেছে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। অথচ এখন আর কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ নেই। মুনাফা লুটছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা আত্মহত্যার ঘটনা দেখছি; কিন্তু কৃষক যখন পেশা পরিবর্তন করে ভ্যান চালানো শুরু করেন, তা কি আত্মহত্যা নয়?
ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কৃষকরা মহাজনের কাছ থেকে, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে চড়া সুদে ঋণ নেন। প্রতি সপ্তাহে তাঁকে তা পরিশোধ করতে হয়। যখন ফসল ঘরে আসে, তখন মহাজন ও এনজিও প্রতিনিধিরা এসে হাজির হয় ঋণের টাকার জন্য। তখন বাধ্য হয়ে তাঁকে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি সরকারের পক্ষ থেকে কৃষককে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার পথ সহজ করা ও মৌসুমি ঋণ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা চরম অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সম্প্রতি সরকার যে ধানের দাম নির্ধারণ করেছে, সেটা কৃষকের জন্য লাভজনক হবে না।
কৃষক দাদন নেন মহাজনের কাছ থেকে; কিন্তু ব্যাংকে যান না উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ব্যাংকে এত কাগজপত্র দিতে হয় যে, কৃষক ঋণ নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। ব্যাংক ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়াটা কৃষকের জন্য সহজতর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে খানির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠক উম্মে সালমা। সেখানে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে– লোকসান ঠেকাতে সরকারের সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ও চাল কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করা, কৃষকের ফসল বিক্রির সুবিধার্থে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা, ফসল সংরক্ষণের জন্য কৃষি জোনভিত্তিক কমিউনিটি সংরক্ষণাগার নির্মাণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য শস্য বীমা চালু, ফসলহানি হলে ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা।
পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক-প্রানের নির্বাহী প্রধান নুরুল আলম মাসুদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ইনসিডইন বাংলাদেশের অপারেশন অফিসার মো. মুশফিকুর রহমান ও একশনএইডের উপব্যবস্থাপক অমিত রঞ্জন দে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এক কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ২২ থেকে ২৫ টাকা হলেও কৃষকদের ১৪ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। প্রতি বিঘায় খরচ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হলেও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় মণ। ভেজাল পেঁয়াজ বীজ ও কীটনাশক প্রয়োগ করে দেশব্যাপী কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।