জুলাই আন্দোলন বিরোধীদের বহিষ্কারসহ ৯ দাবিতে উত্তাল রুয়েট
Published: 15th, January 2025 GMT
জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের বহিষ্কারসহ নয় দফা দাবিতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এছাড়া পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান রিপনের রুমেও তালা দেন তারা।
বুধবার বেলা ১১টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে নয় দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা।
এর আগে, বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আব্দুর রাজ্জাক। শিক্ষার্থীরা তার কাছে ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
পরে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা শেষে তিন সপ্তাহের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘এডমিন যদি ছাত্র চালায়, শিক্ষক কেন বেতন পায়?’, ‘আমার ভাইয়ের জীবন নাই, শিক্ষকের হুশ নাই’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘দালালের ঠিকানা, রুয়েটে হবে না’, ‘ফ্যাসিস্টের কুলাঙ্গার, হুশিয়ার সাবধান’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- পরবর্তী সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার খাতায় কোডিং সিস্টেম চালু করতে হবে; সেমিস্টারের রেজাল্ট ও গ্রেডশিট দ্রুত প্রকাশ করতে হবে ও খাতা রিভিউ করার সুযোগ দিতে হবে; রুয়েটের যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে গত ফ্যাসিস্ট আমলে বিভিন্ন অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ছাত্রলীগ নেতাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে; শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাস পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে এবং শিক্ষকের ব্যস্ততা বা অনুপস্থিতির কারণে ক্লাস মিস গেলে সব শিক্ষার্থীকে ওইদিনের অ্যাটেনডেন্স দিতে হবে; প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা সেশন আয়োজন করতে হবে এবং শিক্ষকদের নিয়ে প্রতি মাসে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সেমিনার করতে হবে।
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- নগরীর হজোর মোড়ে শিক্ষার্থী মারধর ঘটনায় দ্রুত মামলার বাকি কার্যক্রম শুরু করতে হবে এবং রুয়েট ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে; ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্য করার দায়ে গোলাম মোস্তাকিম ও সিভিল ফ্যাকাল্টির ডিন কামরুজ্জামান রিপনসহ অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের সদাচরণ করতে হবে এবং শিক্ষকদের কার্যক্রমের মূল্যায়ন ও জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে; অনতিবিলম্বে গত আগস্টে দেওয়া ১২ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ বিষয়ে কেমিক্যাল প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহান উদ্দিন বলেন, “গত আগস্ট মাসে আমরা প্রশাসনের কাছে বেশকিছু দাবি তুলে ধরি। সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু পূরণ হলেও আমাদের প্রধান দাবিগুলোর ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এজন্য প্রশাসনকে সাতদিনের আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়েছিল, দাবি মানা না হলে প্রশাসন ভবনে তালা দেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “আল্টিমেটাম অনুযায়ি আজ আমরা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছি। আর কত আন্দোলন করতে হবে? আর কত ক্লাস বর্জন করতে হবে? এটা আমাদের শেষ আন্দোলন। অতিদ্রুত আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে।”
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মেনে নেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীরা যে দুজন শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে, সেটি আজকের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।”
গত ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে নগরের পদ্মা আবাসিক এলাকার পাশে হজোর মোড়ে স্থানীয়দের হামলায় রুয়েটের অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া ১০ জানুয়ারি রাতে নগরের একটি ছাত্রাবাস থেকে রুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের (২৪) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রুয়েটে গত দুই বছরে তিন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা/মাহফুজ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনে শিক্ষার্থীরা, তিতুমীরের কর্মকর্তারা
বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে ঢাকার মহাখালীর রাস্তায় অনশনে বসা তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধ ২৮ ঘণ্টা গড়িয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে কথা বলে তাদের অনশন ভাঙাতে আসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সেখানে আসা যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নুরুজ্জামানসহ অন্যরা এখনো অবস্থান করছেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনঢ় রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্তও শিক্ষার্থীদের অনশনে দেখা গেছে। অনশনের পাশাপাশি তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি করতে দেখা গেছে।
আন্দোলনরত এসব শিক্ষার্থীদের কাছে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নুরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের তাদের দাবিগুলো জানতে চান। দাবি শোনার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আন্দোলনটি, সেটা যৌক্তিক ও নায্য উল্লেখ করে সেগুলো রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরার আশ্বাস প্রদান করেন।
এ সময় আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীরা জানান, রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদের সঙ্গে গত ২ মাসে অনেক দ্বিচারিতা করেছেন। তারা এখন কোন ধরনের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করতে রাজি নন।
তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরের প্লাটফর্ম তিতুমীর ঐক্যের উপদেষ্টারা বলেন, আমাদের এ দাবি দীর্ঘ বছরের। আজ সেই দাবির মর্যাদা দিয়ে তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দিতে হবে।
তারা বলেন, প্রয়োজনে রাষ্ট্রের যে পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করে আজকের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দিতে হবে। অন্যথায় এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এখনো আলোচনা করছেন। তবে কি ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে তা জানা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে গত ১৮ নভেম্বর মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার ও রেলক্রসিংয়ে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। পরদিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ‘ক্লোজডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ৩ ডিসেম্বর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে এর আগে নানা কর্মসূচি পালনের পর গত ৭ জানুয়ারি কলেজের প্রধান ফটকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
গত সোমবার মধ্যরাতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তা না হলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। এরপর বুধবার রাত থেকে অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে তিনজন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঢাকা/হাফছা/মেহেদী