প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে গণঅভ্যুত্থানের চার্টার (সনদ) এবং সেই চার্টারের ভিত্তিতে পরবর্তী নির্বাচন হবে। ঐক্যমত্য নিয়ে এসে আমরা নতুন সরকারের দিকে চলে যাব। বুধবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চার সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কমিশন প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে গণঅভ্যুত্থানের চার্টার (সনদ) এবং সেই চার্টারের ভিত্তিতে পরবর্তী নির্বাচন হবে। সংস্কার কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বহু রকমের কমিটি হয়, রিপোর্ট আসে, গ্রহণ করি, আনুষ্ঠানিকতা পালন করি, আজকের ঘটনাটা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কেন ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে আমরা সবাই জানি। কারণ ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই কমিশনগুলো সৃষ্টি হয়েছে। একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরুত্থান হয়েছে।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা ইতিহাসের অংশ, কোনো বিচ্ছিন্ন রিপোর্ট দেওয়ার বিষয় না। আমরা সেই ইতিহাসকে ধারণ করতে পারছি কিনা এবং সেটা সামনে নিয়ে যেতে পারছি কিনা। ইতিহাসের যে অঙ্গীকার ছিল, সেই অঙ্গীকার আমরা পূরণ করতে পারছি কিনা সেটাই আজকে আমাদের প্রশ্ন। আমাদের আত্মবিশ্বাস হতে হবে যে, আমরা পারবো।’

তিনি বলেন, ‘আজকে যে রিপোর্টগুলো আমরা হাতে নিলাম, নিশ্চিতভাবেই এটা একটা বড় ইনটেলেকচুয়াল এক্সারসাইজ দেশের জন্য। কেউ এটাকে অস্বীকার করবে না। কিন্তু আজকের গুরুত্বটা ইনটেলেকচুয়াল এক্সেলেন্সের জন্য না। ‘আমরা মানুষের মনোভাবকে, মানুষের স্বপ্নকে এর মধ্যে ধারণ করতে পারছি কিনা সেটাই হলো মূল প্রশ্ন। যে বিচার হবে, আমরা সেই স্বপ্নকে ধারণ করতে পেরেছি কিনা? সেটার যাত্রা শুরু হলো, এই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রবাহে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করার স্বপ্ন নিয়ে এটার কাঠামো রচনা করার কাজ আপনাদের হাতে দিয়েছিলাম কমিশনের মাধ্যমে। স্বপ্ন আছে, সেটার রূপরেখা তুলে ধরার জন্য।’ সবার সঙ্গে আলোচনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটার মাধ্যমে আমরা আলোচনা শুরু করব সবার সঙ্গে যে- সবার মন সায় দিচ্ছে কিনা। অধিকারগুলো পূরণ হচ্ছে কিনা। আলোচনার পরবর্তী অধ্যায়ে মতৈক্য প্রতিষ্ঠা হবে। এতে গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি হবে। সেই চার্টার মতৈক্যের ভিত্তিতে হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছু হবে। এই চার্টার থেকে যাবে। ইতিহাসের অংশ হিসেবে এটা আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট, দলীয় কমিটমেন্ট না। আমরা আশা করছি, সব দল এই চার্টারে সই করবে।’

‘এটা বাঙালির একটা সনদ, যে সনদ আমরা বুকে নিয়ে অগ্রসর হবো। যত তাড়াতাড়ি পারি, যত বেশি পরিমাণে এটা বাস্তবায়ন করতে পারি, বাস্তবায়ন করতে থাকব। ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে এটার ভিত্তিতে, এই চার্টারের ভিত্তিতে, সেটাও যেন ঐক্যমত্যের সরকার হয়- যে চার্টারকে আমরা ধরে রেখেছি, যত কিছুই হোক, এটা যেন আমরা হাত থেকে ছেড়ে না দেই। তাহলে এই স্বপ্নের যে ধারাবাহিকতা সেটা থাকবে কী করে? আমরা সেই স্বপ্নের ধারাবাহিকতা চাই, বাস্তবায়ন চাই। নির্বাচন তারই একটা অংশ হবে, চার্টারের একটা অংশ হবে,’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, ‘ঐক্যমত্যের নির্বাচন হবে, তা না হলে চার্টার তো হারিয়ে যাবে, যদি ঐক্য না থাকে। কাজেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমাদের সেই গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। এই যে পরবর্তী অধ্যায় শুরু হবে, আলোচনা, সেটা কীভাবে আমরা করব, ঐক্যমত্য নিয়ে এসে আমরা নতুন সরকারের দিকে চলে যাব।’

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে চারটি কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়েছে বুধবার। অন্য দুটি কমিশনের জন্য ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে প্রয়োজন মনে করলে জমা পড়া চারটি কমিশনের রিপোর্টেরও পুনর্মূল্যায়ন কমিটিগুলো করতে পারবে। আজ যারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তারা হলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সরফরাজ হোসেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। পরে রিপোর্টের সারসংক্ষেপ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কমিশন প্রধান ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন সরক র র পরবর ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যবসায়িক আমন্ত্রণ করে অপহরণ, সেই ৩ শ্রীলঙ্কান নাগরিক উদ্ধার

বাগেরহাটের মোল্লাহাটে অপহৃত ৩ শ্রীলঙ্কান নাগরিককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৩ এপ্রিল) গভীর রাতে উপজেলার দক্ষিণ আমবাড়ি গ্রামের এমদাদ কাজীর বাড়ি থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। এসময় অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া তিন শ্রীলঙ্কান নাগরিক হলেন- মালাভি পাথিরানা, পাথিরানা ও থুপ্পি মুদিইয়ানসেল্যাগ নীল।

আটককৃতরা হলেন- আমবাড়ি গ্রামের সেরাত কাজীর ছেলে কাজী এমদাদ হোসেন (৫২), সবুর শেখের ছেলে শহিদুল শেখ (২৪), চর কুলিয়া এলাকার এস এম শামসুল আলম (৪৫) ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার খাটিয়াগড় গ্রামের জাকির শেখের ছেলে জনি শেখ(৩৮)।

আরো পড়ুন:

বিমানবন্দর থেকে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ফুলবাড়ীতে ট্রাকের ধাক্কায় ভ্যানের চালক ও যাত্রী নিহত

অপহরণের অভিযোগে আটক ৪ জন

পুলিশ জানায়, শহিদুল শেখের ব্যবসায়িক আমন্ত্রণে গত ২২ এপ্রিল বাংলাদেশে আসেন তিন শ্রীলঙ্কান নাগরিক। পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কায় তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে বাংলাদেশের একটি নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে স্বজনেরা শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ হাই-কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ বলেন, ‘‘হাই-কমিশনে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে আটকে রাখা তিন শ্রীলঙ্কান নাগরিককে উদ্ধার করেছে। সেই সঙ্গে অপহরণের সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’

ঢাকা/শহিদুল/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যবসায়িক আমন্ত্রণ করে অপহরণ, সেই ৩ শ্রীলঙ্কান নাগরিক উদ্ধার
  • বাঘ প্রতীকে ফের ভোট করতে চায় পিডিপি
  • আন্দোলন চালিয়ে যাবেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
  • আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা প্রত্যাহার পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের
  • বরিশালে মেয়র হতে চান জাপা প্রার্থীও, করলেন মামলা
  • আন্দোলনে ফিরছেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা, ঢাকায় আসছেন প্রতিনিধিরা
  • ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা বাতিল
  • গুম হত্যার চেয়েও ভয়াবহ অপরাধ, বিচার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: আইন উপদেষ্টা
  • তালিকায় ১ হাজার ৪১৫ নদী, এবার কি বাঁচবে
  • যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরবর্তী বৈঠক মাসকটে