জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনে ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে সেই আসনে পুনর্নির্বাচনের সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এছাড়া কমিশন নির্বাচন সংক্রান্ত আরও কিছু সুপারিশ করেছে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন বুধবার সকালে তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়। 

প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হলো- দীর্ঘ মেয়াদে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে আইন পরিবর্তনের পাশাপাশি কিছু প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনেরও সুপারিশ থাকছে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ইসির নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতকরণ; প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনে সংশোধন; গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো এবং নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করার জায়গা তৈরি, আরপিওতে শাস্তি ও ব্যবস্থা নেওয়ার বিধানগুলো কিছু ক্ষেত্রে আরও সুনির্দিষ্ট করা, হলফনামার ছকে পরিবর্তন করে প্রার্থীর বিদেশে সম্পদ থাকলে তার বিবরণ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, হলফনামার তথ্য যাচাই বাধ্যতামূলক করা, ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করা, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়ন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে সুপারিশ করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। 

জানা গেছে, সংবিধান সংস্কারের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থার বিষয়টি চিন্তা করে নির্বাচন সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশ সাজিয়েছে। সুপারিশে ইসির ক্ষমতা বৃদ্ধির বিপরীতে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার কথা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্পিকারের নেতৃত্বে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হবে। ইসির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে ওই কমিটি তদন্ত করবে। 

কমিশনের সুপারিশের নির্বাচনী ব্যবস্থা অংশে- নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল; নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত;  কোনো আসনে মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচন আয়োজন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বন্ধ করা, রাজনৈতিক দলগুলোকে সৎ, যোগ্য এবং ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনে ‘না-ভোটে’র বিধান প্রবর্তন করা। নির্বাচনে না-ভোট বিজয়ী হলে সেই নির্বাচন বাতিল করা এবং পুনর্নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাতিল করা নির্বাচনে কোনো প্রার্থী নতুন নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারার বিধান করা।

কমিশনের সুপারিশের হলফনামা অংশে- প্রার্থী কর্তৃক মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রত্যেক দল তার প্রার্থীদের জন্য প্রত্যয়নপত্রের পরিবর্তে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা অনুরূপ পদধারী ব্যক্তি কর্তৃক হলফনামা জমা দেওয়ার বিধান করা যাতে মনোনীত প্রার্থীর নামের পাশাপাশি মনোনয়ন বাণিজ্য না হওয়ার ও দলীয় প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ থাকে; পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেকোনো সময় নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত ব্যক্তির হলফনামা যাচাই-বাছাই করতে এবং মিথ্যা তথ্য বা গোপন তথ্য পেলে তার নির্বাচন বাতিল করা।

এছাড়া কমিশনের সুপারিশে নির্বাচনী ব্যয় অংশে রয়েছে- সংসদীয় আসনের ভোটার প্রতি ১০ টাকা হিসেবে নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারণের বিধান, সকল নির্বাচনী ব্যয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা বা আর্থিক প্রযুক্তির (যেমন বিকাশ, রকেট) মাধ্যমে পরিচালনা, নির্বাচনী আসনভিত্তিক নির্বাচনী ব্যয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবিড়ভাবে নজরদারি, প্রার্থী ও দলের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাবের রিটার্নের নিরীক্ষা এবং হিসাবে অসংগতির জন্য শান্তির বিধান করা।

কমিশনের সুপারিশের মনোনয়নপত্র অংশে রয়েছে- বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আইনি হেফাজতে থাকা ব্যতীত সকল প্রার্থীর সশরীরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা; নির্বাচনী তফসিলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বৃদ্ধি করা, যাতে হলফনামা যাচাই-বাছাই করা ও আপিল নিষ্পত্তি জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় কমানো, যাতে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় সাশ্রয় হয়; প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করা। এ লক্ষ্যে আদালতের হস্তক্ষেপের বিষয়টি শুধু ‘কোরাম নন জুডিস’ ও ‘ম্যালিস ইন ল’-এর ক্ষেত্রে সীমিত করা; মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৫ বছরের আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেওয়ার বিধান করা, নির্বাচনী তফসিলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বৃদ্ধি করা, যাতে হলফনামা যাচাই-বাছাই করা ও আপিল নিষ্পত্তি জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় কমানো, যাতে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় সাশ্রয় হয়।

কমিশনের সুপারিশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ/গণমাধ্যম অংশে বলা হয়েছে- নিশ্চল পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া, যাতে পর্যবেক্ষকেরা সারা দিন কেন্দ্রে থাকতে পারে, কিন্তু ভোটকক্ষে সার্বক্ষণিকভাবে নয়; নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে প্রাক-নির্বাচনকালীন পর্যবেক্ষণের অফিশিয়াল অনুমতি প্রদান করা; পক্ষপাতদুষ্ট ভুয়া পর্যবেক্ষক নিয়োগ বন্ধ করা; ব্যক্তি পর্যায়ে পর্যবেক্ষক নিয়োগের বিধান চালু করা; পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ভবিষ্যতে নির্বাচন ভালো করার জন্য কাজে লাগানোর বিধান করা; আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধাপগুলো সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষক সংস্থার জন্য সুস্পষ্ট করা। সরকারের পরিবর্তে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া; নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিকদের সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ, অনিয়মের চিত্র ধারণ, নির্বাচনের দিনে মোটরসাইকেল ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করা।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব ধ ন কর স প র শ কর ব যবস থ র জন য র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

নিজের পণ্য বেচতে ধর্মীয় উসকানিমূলক বিজ্ঞাপন দিয়ে বিপদে ভারতের যোগগুরু বাবা রামদেব

ভারতের যোগগুরু বাবা রামদেব দিল্লির একটি আদালতকে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের পানীয় নিয়ে তিনি যে বিতর্কিত বিজ্ঞাপন তৈরি করেছেন, তা তিনি সরিয়ে নেবেন। আদালত রামদেবের ওই বিজ্ঞাপনকে ‘ন্যায়সংগত নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।

সম্প্রতি রামদেব তাঁর কোম্পানি পতঞ্জলির একটি মিষ্টি পানীয়র প্রচারের জন্য একটি ভিডিও তৈরি করেছেন। ওই ভিডিওতে তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করে দাবি করেন, কয়েকটি ব্র্যান্ড তাদের লভ্যাংশ দিয়ে মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করে।

তবে রামদেবের ভিডিওর বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছিল, তিনি রুহ আফজার কথাই বলছেন। হামদর্দ ল্যাবরেটরিজের তৈরি জনপ্রিয় মিষ্টি পানীয় রুহ আফজা শত বছরের বেশি সময় ধরে তৈরি হয়ে আসছে। হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ একটি ইসলামিক দাতব্য সংস্থা।

রামদেবের ওই ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হলে এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। ওই বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিতে হামদর্দ একটি মামলা করে।

রুহ আফজা অ্যালকোহলবিহীন একটি মিষ্টি পানীয়, এটিকে শরবত বলা হয়। রুহ আফজা ফলের সিরাপ আকারে বাজারজাত করা হয়। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এই পানীয়টি বেশ জনপ্রিয়।

১৯০৬ সালে হামদর্দ প্রথম রুহ আফজা বাজারে আনে। সাধারণত দুধ বা পানিতে এই সিরাপ মিশিয়ে শরবত তৈরি করা হয়। মুসলিমদের মধ্যে রুহ আফজার শরবত দারুণ জনপ্রিয়। বিশেষ করে ইফতারিতে রুহ আফজা খাওয়ার প্রচলন থাকায় পবিত্র রমজান মাসে এই পানীয়র বিক্রি বহুগুণ বেড়ে যায়।

রামদেব তাঁর ভিডিওতে ‘শরবত জিহাদ’ শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টের একজন বিচারক রামদেবের ওই মন্তব্যকে ‘অসমর্থনযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেছেন।

আইনবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘লাইভ ল’-তে থাকা তথ্য অনুযায়ী বিচারপতি অমিত বানসাল বলেন, ‘এটা আদালতের বিবেককে নাড়া দিয়েছে।’

আদালত রামদেবকে পাঁচ দিনের মধ্যে একটি হলফনামা দাখিল করতেও বলেছেন। যে হলফনামায় বলতে হবে, তিনি ভবিষ্যতে আর কখনো এমন কোনো বিবৃতি, বিজ্ঞাপন অথবা বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেবেন না।

এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১ মে।

হামদর্দের আইনজীবী মুকুল রোহাতগি বলেন, রামদেবের এই বক্তব্য কোনো পণ্যের সমালোচনা করার চেয়েও বেশি কিছু এবং এমন বক্তব্য ‘সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে’ তুলে ধরে। তিনি রামদেবের মন্তব্যকে ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ বলে উল্লেখ করেন।

রামদেব ও পতঞ্জলির আইনজীবী রাজীব নায়ার বলেন, তাঁর মক্কেল কোনো ধর্মের বিপক্ষে নন এবং ওই বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেওয়া হবে।

আরও পড়ুনপতঞ্জলি নিয়ে ভালোই বিপদে পড়েছেন ভারতের যোগগুরু বাবা রামদেব১১ মে ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ ইয়ার্ণ মার্চেন্টস নির্বাচনে সম্ভাব্য ২৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
  • নিজের পণ্য বেচতে ধর্মীয় উসকানিমূলক বিজ্ঞাপন দিয়ে বিপদে ভারতের যোগগুরু বাবা রামদেব