কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পরিত্যক্ত আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে শামীম মিয়া (৩৭) নামে এক পিঠা বিক্রেতার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার স্থানীয়রা ভৈরব বাজারের হলুদপট্টি এলাকার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের যুবলীগের কক্ষে লাশটি দেখে থানায় খবর দেন। দুপুর ২টার দিকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করেছে।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি ৫ আগস্ট ব্যাপক ভাঙচুরের শিকার হয়। তখন থেকে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে বলে জানান ওসি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ আওয় ম ল গ
এছাড়াও পড়ুন:
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের ‘অকালীন উত্তরণে লাভবান হবে ভারত’
জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতির ঘাটতি দেখছেন অর্থনীতিবিদ মুশতাক খান।
মুশতাক খানের মতে, বাংলাদেশ যদি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্কছাড় সুবিধা কমবে, বিদেশি ঋণের সুদের হার বাড়বে এবং দেশি শিল্পকারখানা তীব্র প্রতিযোগিতায় পড়ে অনেকগুলো বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
এই অর্থনীতিবিদের মতে, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো চাইবে, এ দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাক। তাহলে তাদের সুবিধা হয়। প্রতিযোগী দেশের মধ্যে অন্যতম ভারত। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে, অর্থাৎ বাণিজ্য–সুবিধা না পেলে ভারতই সবচেয়ে লাভবান হবে। জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশ যদি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করে, সে ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে প্রতিযোগীরা। তারা চাইবে, বাংলাদেশের আবেদন যেন বিবেচনা করা না হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের দ্য স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক মুশতাক খান তাঁর এ মতামত তুলে ধরেন ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ: প্রস্তুতি ও বাস্তবতা’ শিরোনামের একটি গোলটেবিল বৈঠকে।
রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে আজ বুধবার চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ নামের একটি সংস্থা এ বৈঠকের আয়োজন করে। এতে কয়েকজন রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক, গবেষক ও আমলা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষণাপ্রধান ইশতিয়াক বারী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উত্তরণের তিনটি শর্তই পূরণ করেছে। ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ এ তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিছু দেশ ও অঞ্চলে বাংলাদেশের বাণিজ্যে শুল্কছাড় সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত থাকবে। আর ওষুধ উৎপাদনে মেধাস্বত্বে ছাড় সুবিধা থাকবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত।
ইশতিয়াক বারী উপস্থাপনায় বলেন, কোনো দেশ নিজের সিদ্ধান্তে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে পারে না। পেছাতে চাইলে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) কাছে আবেদন করতে পারে। অবশ্য এ জন্য শক্ত যুক্তি থাকতে হয়। আবেদন সিডিপি যাচাই করবে এবং সিদ্ধান্ত হবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার চিন্তা করেছিল। তবে সরকার সেখান থেকে সরে এসেছে। গত ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী বছরেই উত্তরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনএলডিসি থেকে বের না হতে চাওয়া কতটা সঠিক১৩ মার্চ ২০২৫বাংলাদেশ ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানির সুযোগ, কম সুদের বিদেশি ঋণ এবং বিদেশি পণ্য আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করার সুযোগ পায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে এসব সুযোগ থাকবে না। বিদেশি পণ্য আরও কম শুল্ক দিয়ে আমদানি করা যাবে।
মুশতাক খান প্রশ্ন করেন, চীন ও ভারতের পণ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের উৎপাদকেরা কি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে? বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকশিল্প, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যশিল্প, ওষুধ শিল্প—এসব খাত কি প্রস্তুত? সার্বিকভাবে বাংলাদেশ কি প্রস্তুত? উত্তরও তিনিই দেন। বলেন, ‘আমি প্রমাণ দেখছি না।’
ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় দুশ্চিন্তার একটি বিষয় উল্লেখ করেন মুশতাক খান। সেটি হলো রপ্তানি বেড়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুল্ক আরোপ। কোনো নির্দিষ্ট পণ্য ইউরোপের মোট আমদানির একটি নির্দিষ্ট হারের বেশি একটি দেশ রপ্তানি করলে সেই দেশের ওপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুল্ক আরোপ হয়। বাংলাদেশের পোশাক সেই সীমা অতিক্রম করে গেছে। ইউরোপ বাংলাদেশকে আরও তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও স্বয়ংক্রিয় শুল্কের কারণে এ দেশের পোশাক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে।
ইউরোপের একটি বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে মুশতাক খান বলেন, বাংলাদেশের অকালীন (প্রিম্যাচিউর) উত্তরণ নিয়ে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি উদ্বিগ্ন।
বাংলাদেশের কি উত্তরণের জন্য কয়েক বছর বাড়তি সময় চাওয়ার সুযোগ আছে, সে কথাও উল্লেখ করেন মুশতাক খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রমাণভিত্তিক তিনটি যুক্তি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) কাছে তুলে ধরতে পারে। প্রথমত, অকালীন উত্তরণের ফলে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাটি ইকোসক বিবেচনায় নেয়। দ্বিতীয়ত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের কারণে বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের উত্তরণ ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তৃতীয়ত, সাড়ে ১৫ বছরে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশের সময় দরকার।
মুশতাক খান মনে করেন, বাংলাদেশের উচিত নেপাল, ভুটানের মতো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা, যারা উত্তরণ পিছিয়ে দিতে আগ্রহী। বাংলাদেশ একা পিছিয়ে দিতে চাইলে প্রতিযোগীরা সেটা আটকে দিতে পারে। প্রতিযোগীদের মধ্যে ভারত থাকবে। কারণ, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধা না পেলে ভারত সবচেয়ে উপকৃত হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও এখন ভালো নয়।
বাংলাদেশ কয়েকটি দেশকে নিয়ে একটি ব্লক (জোট) করে জাতিসংঘে যেতে পারলে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার সুযোগটি পেতে পারে বলে মনে করেন মুশতাক খান।
আরও পড়ুনএলডিসি থেকে উত্তরণের শেষ ধাপেও পাস, তবে চ্যালেঞ্জ ৪টি ১৯ এপ্রিল ২০২৪অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা অর্থনীতির নানা পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যার ওপর ভিত্তি করে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি আর্থিক খাতের দুরবস্থা, ব্যাংক খাতের সংকটে থাকা, রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য না আসাসহ নানা সংকটের কথা উল্লেখ করেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টিতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে। বিগত ১৫ বছরে দেশে গণতন্ত্র ছিল না। এখন বাংলাদেশ গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের আশা করছে। ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার আসবে। উত্তরণের বিষয়টি নিয়ে সংসদে বিতর্ক হওয়া উচিত। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিত এবং পরে জনগণের প্রতিনিধিদের মধ্যে বিতর্কের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হওয়া দরকার।
বৈঠকে ফ্রান্সের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এএফডির কান্ট্রি ডিরেক্টর সিনথিয়া মেলা, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের চেয়ারপারসন নুরিয়া লোপেজ, ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকসের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেইন খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।