সহকর্মীর ‘হাত ধরে’ হাঁটছেন প্রেমিকা, প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে নিহত যুবক
Published: 15th, January 2025 GMT
সহকর্মীকে হাত ধরে প্রেমিকাকে হাঁটতে দেখে ক্ষুব্ধ প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে পোশাকশ্রমিক সৈকত ইসলাম (২০) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ আপেল মাহমুদ আমিনুর (২৪) নামে ওই প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নয়ন কর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত সৈকত ইসলাম বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাওড়াখালী গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে। তিনি স্থানীয় এমএইচসি অ্যাপরেলস (পোশাক কারখানা) কোয়ালিটি অপারেটর পদে চাকরি করতেন। আর পৌরসভার পশ্চিম ভাংনাহাটি এলাকায় মোশারফের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
আর গ্রেপ্তার আপেল মাহমুদ আমিনুর বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা (টেপাবাড়ী) গ্রামের খোকা মিয়ার ছেলে। তিনি প্রায় দুই মাস আগে চাকরির উদ্দেশে পশ্চিম ভাংনাহাটি এলাকায় এসে স্থানীয় রফিকুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।
আমিনুর জানান, প্রায় ৫ মাস আগে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার এক তরুণীর সঙ্গে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় মেসেঞ্জারে কথা হয়। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে তারা শ্রীপুর পৌরসভার পশ্চিম ভাংনাহাটি এলাকায় এসে আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। এর মধ্যে ওই তরুণী (প্রেমিকা) স্থানীয় এমএইচসি অ্যাপরেলসে কোয়ালিটি অপারেটর পদে চাকরি নেন। চাকরির সুবাদে নিহত সৈকত ও ওই তরুণী একসঙ্গে কারখানায় আসা-যাওয়া করতেন। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি প্রেমিক আমিনুর। এরপর থেকে প্রায়ই ওই দুজনকে অনুসরণ করতেন তিনি।
মঙ্গলবার রাত ৯টায় কারখানা ছুটি হলে তারা (সৈকত ও তরুণী) একে অপরের হাত ধরে বৈরাগীরচালা-মাধখলা সড়ক দিয়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিল। বিষয়টি প্রেমিক আমিনুর দেখে ফেললে সৈকত তাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘আমাদের ফলো করছো কেন?’ এ সময় প্রেমিক আমিনুর সৈকতকে গলায়, পিঠে ও বুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। পরে ওই তরুণীর চিৎকারে আমিনুর দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে ওই রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামি আপেল মাহমুদ আমিনুরকে পৌরসভার ২ নম্বর সিঅ্যান্ডবি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, এ ঘটনায় নিহতের চাচা রেজাউল করিম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দেখে এলাম প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বদিকে অবস্থিত বান্দরবান জেলা। এই জেলা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য যেন এক স্বর্গরাজ্য। এখানে প্রকৃতিতে রূপের পসরা সাজিয়েছে পাহাড়, ঝরনা, নদী। শহুরে কোলাহল ছেড়ে বান্দারবানে পৌঁছালে প্রকৃতি আর সেখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি ভ্রমণকারীর মনে অবারিত শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। সম্প্রতি সহকর্মীদের সঙ্গে উপভোগ করে এলাম নীলাচলের নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত এবং নীলগিরি কুয়াশায় মোড়া ভোরে ভাসমান মেঘের খেলা আমাদের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে।
শুরুতেই আমরা গিয়েছিলাম নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে। বান্দরবান শহরের কাছেই অবস্থিত এই পাহাড়ি স্থানটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের প্রতীক। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে মনে হয় পৃথিবী হাতের মুঠোয়। সূর্য তখন ঢলে পড়ছে পশ্চিমে। আকাশে রঙের খেলা, কমলা আর লাল রঙের অপূর্ব মিশ্রণ। এ সময় বাতাসে এক ধরনের প্রশান্তি। দূর পাহাড়ের সারি আর নীলাচলের চারপাশে মেঘের আনাগোনা আমাদের মুগ্ধ করে। ‘ইকোসেন্স’ নামক একটি স্পটে বসে চা খাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল সত্যিই স্বর্গীয়। প্রকৃতির এই অনবদ্য দৃশ্য জানিয়ে দেয় জীবন কতটা সুন্দর ও উপভোগ্য।
এরপর আমাদের গন্তব্য ছিল নীলগিরি, যা বান্দরবানের সবচেয়ে উঁচু পর্যটন কেন্দ্র। পথে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা আমাদের ভ্রমণকে আরও দারুণ করে তোলে। নীলগিরির চূড়ায় পৌঁছে মেঘের ভেলায় ভেসে যাওয়ার মতো অনুভূতি হলো। মনে হলো যেন আকাশের কাছে চলে এসেছি। হিমেল হাওয়া আর মেঘের ভেতর দিয়ে হাঁটা সত্যিই এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
নীলগিরি থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথটা অসাধারণ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ধরে যেতে যেতে চোখে পড়ে পাইন গাছের সারি। যা ভ্রমণকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে। চিম্বুকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকালে মনে হয় সবুজ পাহাড়ের ঢেউ সমুদ্রের মতো দুলছে। ঠান্ডা বাতাসে ভেসে আসা প্রকৃতির মিষ্টি গন্ধ আর সূর্যের আলোয় ঝলমলে পাহাড়ি গ্রামের দৃশ্য এক অন্যরকম শান্তি দেয়। এখানকার স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের সরল জীবনযাত্রা আরও মুগ্ধ করে।চিম্বুকের সৌন্দর্য শুধু চোখ নয়, মনও ছুঁয়ে যায়। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির বিশালতা অনুভব করাই চিম্বুক ভ্রমণের সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ।
সবশেষে আমরা যাই সাঙ্গু নদীর তীরে। পাহাড়ি স্রোতস্বিনী সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ ছিল পুরো সফরের সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ। পাহাড়ি নদীর শীতল স্রোতে ভেসে চলার সময় মনে হলো প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে গেছি। নদীর দুই পাশে সবুজের সমারোহ, পাহাড়ি গ্রামের চিত্র আর নদীর বয়ে চলার মৃদু শব্দ আর নদীর দুই পাড়ে স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠীর কর্মব্যস্ততা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। আমরা ছোট্ট নৌকায় নদীতে ভেসে প্রকৃতির নির্জনতা উপভোগ করি। সাঙ্গুর মায়াবী সৌন্দর্য যেন মনকে গভীর প্রশান্তি এনে দেয়।
এই ভ্রমণ শুধু পাহাড়, নদী আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না এটি ছিল সহকর্মীদের সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা আর বন্ধনের মুহূর্ত তৈরি করারও সুযোগ। বান্দরবানের এই সৌন্দর্যময় ভ্রমণ আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দে যে প্রশান্তি, তা আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়।
ঢাকা/লিপি