সংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তে বিশেষ কমিটি গঠনের দাবি
Published: 15th, January 2025 GMT
একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করতে বিশেষ কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক ও রাজনৈতি নেতারা। তারা বলেছেন, একের পর এক সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনায় স্বাধীন সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের পরিকল্পনাকারী, পৃষ্ঠপোষক, অর্থদাতাসহ অন্যান্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিক মানিক সাহার সুহৃদের পক্ষ থেকে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে এ সব কথা বলেন তারা। সিনিয়র সাংবাদিক আশীষ কুমার দের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল ও সাবেক নির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ, সাংস্কৃতিক সংগঠক পুলক রাহা, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মো.
সাংবাদিক মানিক সাহা খুনের মামলার পুনঃতদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করে সিপিবি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মানিক সাহা নিজেও জানতেন, তিনি যেভাবে সত্যের সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার উপর আক্রমণ আসবে। তবে তিনি কখনোই মৃত্যুর ভয়ে ভীত ছিলেন না। যারা মানিক সাহার মতো সাংবাদিকদের হত্যা করে তারা সত্যের শত্রু।
মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পকারীদের উন্মোচন করতে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের হস্তক্ষেপ দাবি করেন সাবেক ছাত্র নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, মানিক সাহা আমৃত্যু জনমুখী সাংবাদিকতা করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমতার পক্ষে আপোষহীন ছিলেন। অথচ তার হত্যাকাণ্ড মামলার বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে চাঞ্চল্যকর ওই মামলার পুনঃতদন্ত হতে হবে।
সাংবাদিক নেতা খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হবে না, এমনই অলিখিত নিয়ম চালু হয়েছে। শুধু মানিক সাহা নয়, সাগর-রুনিসহ অন্যান্য সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার হয়নি। এখনো সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যে কারণে সুস্থ সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সকল সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারে বিশেষ কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে আইনজীবী নেতা হাসান তারিক বলেন, আইন অন্যায্য হলে সুষ্ঠু বিচার অসম্ভব। মানিক সাহাসহ অন্যান্য সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের পেছনে আইনের সীমাবদ্ধতা ও সঠিক প্রয়োগের অভাবই দায়ী। বর্বর ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় মানিক সাহা নিহত হন। সমাবেশের শুরুতে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ফ্যাসিস্ট বিচারপতি’দের অপসারণ দাবিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সমাবেশ
‘ফ্যাসিস্ট বিচারপতি’দের অপসারণের দাবিতে সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আজ সোমবার দুপুরে এই সমাবেশ হয়।
‘ফ্যাসিস্ট বিচারপতিদের অপসারণ দাবিতে আইনজীবী সমাবেশ’: জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, সুপ্রিম কোর্ট—ব্যানারে ওই সমাবেশ হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, হাইকোর্টের যাঁরা বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়া করেছিলেন, দীর্ঘদিন আটকে রেখে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন, আপনারা এখনো কীভাবে বসে আছেন? আমরা তো চিন্তা করেছিলাম, এই যে ফ্যাসিস্টের দোসররা পালিয়েছে, সেই সঙ্গে আপনারাও চলে যাবেন; কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আপনারা এখনো যাননি। আপনাদের জন্য আবার আইনজীবী ফোরামকে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেরা নিজে থেকে পদত্যাগ করে চলে যান।’
ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা একদিনে ফ্যাসিস্টে পরিণত হননি। রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ তাকে ফ্যাসিস্টে পরিণত করতে কাজ করেছে প্রত্যক্ষভাবে। অনেক বিচারপতি নির্লজ্জভাবে দলীয় মতাদর্শকে ধারণ করে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমকে প্রলম্বিত করার জন্য স্বেচ্ছায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়, তাকে কারাগারে প্রেরণ সব কিছু ছিল শেখ হাসিনার নির্দেশে, কিছু কিছু বিচারক সে কাজটা করেছিলেন।’
ফ্যাসিস্ট হাসিনা ৫ আগস্ট পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন উল্লেখ করে কায়সার কামাল বলেন, ‘আজ এপ্রিল মাস শেষের পথে। আমরা আশা করেছিলাম, ধারণা করেছিলাম, সেসব বিচারক—যাঁরা নিজেরাও জানেন শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমকে প্রলম্বিত করার জন্য দিনে–রাতে মেধা–মনন দিয়ে পরিশ্রম করেছেন, কোনো কোনো বিচারক স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ জিয়াকে তাদের রায়ে ডাকাত বলে সম্বোধন করেছিলেন, আমরা বলেছিলাম বিবেকের তাড়নায় স্বেচ্ছায় এই পবিত্র অঙ্গন থেকে তারা চলে যাবেন। দুঃখনজক হলেও সত্য তারা এখনো বাড়িতে যাননি; বরং কিছু কিছু বিচারক আরও প্রমোশনের আশায় বহাল তবিয়তে আছেন। অনতিবিলম্বে তাদের ব্যাপারে যেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদলের সভাপতিত্বে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মো. রুহুল কুদ্দুস, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম এবং সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জামিল আক্তার এলাহী ও মাহমুদুল আরেফিন বক্তব্য দেন। সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্য সচিব গাজী তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ সমাবেশে বাংলাদেশ আইন সমিতির আহ্বায়ক মনির হোসেন, ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক মনিরুজ্জামান আসাদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদ আল মামুন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক মো. মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।