ফ্লোর, ক্যামেরা ও যন্ত্রাংশের ভাড়া কমিয়ে এফডিসিতে শুটিং ফেরানোর উদ্যোগ
Published: 15th, January 2025 GMT
মাসের পর মাস খালি পড়ে থাকে বিএফডিসি বা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন; যাকে সংক্ষিপ্ত আকারে বলা হয় এফডিসি। সেখানে হয় না সিনেমার শুটিং। এক সময় যার শুটিং ফ্লোরের শিডিউল পেতে হিমশিম খেতেন পরিচালক-প্রযোজকরা। শুটিংয়ের লাইট-ক্যামেরায় আলোকিত থাকত। এমনও দিন গেছে, অর্ধডজন সিনেমার শুটিং একসঙ্গে চলেছে। সেই ফ্লোরগুলো এখন বেকার।
মাঝে মাঝে সেখানে টিভি চ্যানেলগুলোর নানা আয়োজনের শুটিং হয় কিন্তু সিনেমার শুটিং হয় কালেভদ্রে। ঝরনা স্পট, ক্যান্টিন চত্বর, গার্ডেন, মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্স চত্বর কিংবা কড়ইতলা– এক সময়ে এ জায়গাগুলো শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক আর কলাকুশলীদের পদচারণায় গমগম করত। এখানে আবার প্রিয় তারকার শুটিং দেখতে আসা উৎসুক মানুষের ভিড় সামলাতে মূল ফটকে নিরাপত্তাকর্মীরা হিমশিম খেতেন; যা এখন কেবলই অতীত। সারা বছর না হোক আগামী কয়েক মাস পরই ঈদ। ঈদের আগের এ সময়টাতেও উৎসবের সিনেমার শুটিংয়ে এফডিসি সরগরম থাকার কথা। কই! যে ছবিগুলো ঈদে মুক্তির ঘোষণা দিয়ে শুটিংয়ে নেমেছে সে ছবিগুলোর শুটিং এফডিসিতে যেন ছিটেফোঁটাও নেই!
কেন এফডিসি থেকে শুটিং বিমুখতা? প্রশ্ন রাখলে চলচ্চিত্রের লোকজনের মুখ থেকে একবাক্যে উত্তর এসেছে এফডিসিতে শুটিং করাটা ব্যয়বহুল, ফ্লোর ভাড়া থেকে শুরু করে ক্যামেরা, লাইট, সম্পাদনা, কালার গ্রেডিংয়ে যে খরচ, বাইরে তা অনেক কম, সুযোগ-সুবিধাও অনেক বেশি। তাই এফডিসির বাইরে কাজ করতে আগ্রহ বেশি তাদের।
এদিকটা বিবেচনা করে চলচ্চিত্রের এ আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত এফডিসিতে কোলাহল ফেরাতে শুটিংয়ের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণে শুটিঙের যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা ভাড়ার হার পরীক্ষমূলকভাবে ৬ মাসের জন্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
বছরের শুরুতেই এফডিসির পরিচালক (প্রকল্প) মো.
তথ্য অনুযায়ী, সেট নির্মাণের সময়ে এফডিসির খালি জায়গা, ছাদ ও সুইমিংপুলের ভাড়া ছিল ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা; যা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
ইনডোরে রেড ড্রাগন ক্যামেরার শুটিং ভাড়া ছিল প্রতি শিফট ৬, ১২০ টাকা। এখন সেটি করা হয়েছে ৩০০০ টাকা। একই ক্যামেরায় আউটডোরে শুটিংয়ে আগে ছিল ৬৬৩০ টাকা। এখন সেটি করা হয়েছে ৩৫০০ টাকা। একই ক্যামেরায় দেশের বাইরে শুটিং করতে আগে লাগত ১৯,৫০০ টাকা, এখন সেটি কমিয়ে ১০০০০ টাকা করা হয়েছে।
সনি ক্যামেরায় ইনডোরে আগের শুটিং ভাড়া ছিল ৫,১০০ টাকা, এখন ২,০০০। একই ক্যামেরায় আউটডোরে শুটিং ভাড়া ছিল ৫,৬১০ টাকা; এখন ২,৫০০ টাকা। এ ছাড়াও দেশের বাইরে এ ক্যামেরায় শুটিং প্রতিদিন গুনতে হতো ১৬,৫০০ টাকা। এখন ১০ হাজার টাকা।
সনি ক্যামেরায় ইনডোরে আগের শুটিং ভাড়া ছিল ৫,১০০ টাকা এখন সেটা করা হয়েছে ২,০০০ টাকা। একই ক্যামেরায় আউটডোরে শুটিং ভাড়া ছিল ৫,৬১০ টাকা। এখনে সেটা করা হয়েছে ২,৫০০টা। এ ছাড়াও দেশের বাইরে এই ক্যামেরায় শুটিং প্রতিদিন গুণতে হতো ১৬,৫০০ টাকা। এখন সেটা হয়েছে ১০ হাজার টাকা।
ডিজিটাল সম্পাদনা মেশিন চার্জ (প্রতি শিফট) আগে ছিল ২১০০ টাকা। এখন সেটা ১৫০০ টাকা। ডিজিটাল কালার গ্রেডিং (প্রতিশিফট) আগে ছিল ৩১ ৫০ টাকা। এখন সেটা কমিয়ে হয়েছে ২৫০০ টাকা।
এই ছাড়াও শুটিংয়ের নানা যন্ত্রাংশের ভাড়া কমানোর পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের শুটিংয়ে সর্বোচ্চ ২০% ভাড়া ছাড় দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে বিজ্ঞাপ্ততে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও কিছু শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে
* কোন যন্ত্রপাতি এফডিসি ব্যতিত অন্য কোন উৎস থেকে এনে ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে শিফট ভিত্তিক বিদ্যুৎ বিল প্রযোজ্য হবে।
* সুটিং স্পটে বা সুটিংয়ের ক্ষেত্রে কোন ল্যাম্প বা বাল্ব ফেটে গেলে/হারানো গেলে/খোঁয়া গেলে সংশ্লিষ্ট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে আদায় যোগ্য তবে ফিউজ হলে যৌক্তিকতা নির্ণয় সাপেক্ষে বিলের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
* সকল প্রকার ভাড়া/বরাদ্দ সিডিউলের মাধ্যমে প্রদান করা হবে।
* প্রচলিত অন্যান্য নিয়ম কানুন অপরিবর্তিত থাকবে।
* সুটিং ও পিকনিক ব্যতিত পর্যটকগন কক্ষ ব্যবহার করলে সুটিং এর নির্ধারিত রেট প্রযোজ্য হবে।
* যে সকল যন্ত্রপাতি/যন্ত্রাংশের সেবার হার এ রেট কার্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়নি তা পূর্বের ন্যায় বহাল থাকবে।
* বিএফডিসির বাহিরে নির্মিত চলচ্চিত্রের অনাপত্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে বিএফডিসি বরাবর ২০,০০০/- টাকা অনাপত্তি ফি জমা দিতে হবে।
* কর্পোরেশনের ফ্লোর, চত্ত্বর, বিভিন্ন কক্ষ, ষ্টোর রুম, মেকাপ রুমসহ স্থাবর স্থানে বা কোন সুটিং স্পটে সুটিং ও সেট নির্মাণ করলে উক্ত স্পটের ভাড়া সার্ভিস চার্জের আওতায় থাকবে। ক্যামেরা এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সার্ভিস চার্জের আওতার বহিঃর্ভূত থাকবে
* রকারী বিধিমালা মোতাবেক ভ্যাটসহ অন্যান্য কর্তন প্রযোজ্য হবে।
* সেবার হার পুনঃনির্ধারণ, পুনঃ মূল্যায়ন, সংযোজন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা যে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এফড স একই ক য ম র য় চলচ চ ত র এফড স র এখন স ট ব এফড স ৫০০ ট ক এফড স ত
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্ঘটনায় আহত অভিনেত্রী খুশি, চোখের ওপর পড়েছে ১০ সেলাই
দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ছোটপর্দার অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। বুধবার সকালে রমনা পার্ক থেকে বাড়ি ফেরার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় তিনি আহত হন। অভিনেত্রীর ছেলে সৌম্য জ্যোতি সমকালকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বুধবার সকালে আম্মু রমনা পার্কে হাটতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাসায় ফেরার সময় গলির মধ্যে একটি অটোরিকশা তাকে ধাক্কা দিলে আম্মু ছিটকে পড়ে যায় এবং তার ঠিক চোখের ওপর জখম হয়। পরে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন তিনি আপাতত ভালো আছেন।’
এদিকে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান শাহনাজ খুশি। সেখানে তিনি বলেন, ‘বেশি না, মাত্র ১০টা সেলাই পড়েছে। এ আর এমন কি বলেন? চোখটা অন্ধ হয় নাই, হয় নাই ব্রেইন হ্যামারেজের মত শেষ অবস্থা! সেটাই তো অনেক বেশি পাওয়া! এ তেমন কিছু না, চোখের উপরের সেনসেটিভ জায়গায় মাত্র ১০ টা সেলাই লেগেছে! আমি যে প্রাণে বেঁচে আছি এ জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা কাছে শুকরিয়া আদায় করছি!’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কিচ্ছু চাই না আমি, শুধু যে মায়েরা/বাবারা ছোট্ট বাচ্চাটার হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে স্কুলে আসেন অথবা নানান প্রয়োজনে রাস্তায় যান, তাদের সতর্ক করতে পোস্টটা দিলাম। আমি হয়ত ভেঙেচুরে বেঁচে গেছি। কোন বাচ্চা এ আঘাত নিতে পারবে না! ব্যাটারি চালিত অসভ্য/বর্বর যানবাহনটি এবং তার অসভ্য চালক থেকে সর্বদা সতর্ক থাকবেন। যদিও আমি গলির ভেতরের রাস্তায়, প্রাতঃ ভ্রমণ শেষে অতি সর্তকতার সাথেই একেবারে কিনার দিয়ে হেঁটে ফিরছিলাম! ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বীরদর্পে চলে গেছে! ওরা মেধাবী যান চালক, কারো জীবনের ক্ষতির তোয়াক্কা করে না! আপনার এবং আপনার সন্তানের দায়িত্ব একান্তই আপনার। আজ চারদিন পরও মাথার অর্ধেকে কোন বোধশক্তি নাই!
সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘জানি না স্বাভাবিক চেহারায় ফিরবো কিনা, সেটা যদিও ফিরি রক্তাক্ত সেই পথে পড়ে থাকা সকালের ট্রমা অনেককাল ভুলবো না! কাতর অবস্থায় বিছানায় পরে থেকে বারবার একটা প্রশ্ন মনে আসছে, এই যে যত্রতত্র কুপিয়ে জখম, ট্রেন-বাস, রিকশা কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে দিনেরাতে ছিনতাই। কার কাছে চাইব আমাদের সন্তানদের নিরাপদ পথচলা।’