ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলমের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী বেলাল হোসেন এ তথ্য জানান।

এর আগে গত বছরের ১১ নভেম্বর দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ঠিক করেন।

সাজাপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন– ডেসটিনির পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) হারুনুর রশিদ, প্রধান কার্যালয়ের চেয়ারম্যান মো. হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গোফরানুল হক, মো. সাইদ-উর রহমান, মেজবাহ উদ্দিন স্বপন, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়েবুর রহমান ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস, পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, মিসেস ফারহা দিবা ও জামসেদ আরা চৌধুরী, প্রফিট শেয়ারিং ডিস্ট্রিবিউটর মো. জসিম উদ্দীন ভূইয়া, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ও সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ এস এম আহসানুল কবির বিপ্লব, জোবায়ের সোহেল ও আব্দুল মান্নান এবং ক্রাউন এক্সিকিউটিভ মোসাদ্দেক আলী খান।

আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন– ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল আমীন, ফারহা দিবা ও মোহাম্মদ হোসেন। জামিনে আছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুনুর রশিদ। ১৫ আসামি পলাতক রয়েছেন।

এর আগে গত বছরের ১১ নভেম্বর দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ঠিক করেন।

এরও আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজধানীর কলাবাগান থানায় ২০১২ সালের ৩১ জুলাই মামলা দুটি করে। ২০১৪ সালের ৪ মে একটি মামলায় ১৯ জনের এবং অপর মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তারা গাছ বিক্রির নামে ২,২৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) হিসাবে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪০ টাকা এবং সরাসরি পাচার করা হয় আরও ২ লাখ ৬ হাজার মার্কিন ডলার।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১২ মে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং বেআইনিভাবে অর্থ পাচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়। এছাড়া, হারুন অর রশীদসহ ৪৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

জিম্বাবুয়ের কাছেও হারল বাংলাদেশ

ধারাভাষ্যকার আর ক্যামেরার নড়াচড়া না থাকলে পুরস্কারের মঞ্চকে মনে হতো ভাঙা হাট। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আর জিম্বাবুয়ের ফাস্ট বোলার ব্লেসিংস মুজারাবানি ছাড়া খেলোয়াড়দের কেউ ছিল না পুরস্কার বিতরণীতে।

দোতলায় বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুম থেকে বিমর্ষ ফিল সিমন্স উদাস তাকিয়ে সেই দৃশ্য দেখছিলেন। ছোট দলের কাছে টেস্ট হারলে বড় দলের কোচদের যে অনুভূতি থাকে, সিমন্স কি সেভাবে কল্পনার জগতে ডুবে গিয়েছিলেন? নাকি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মতো তাঁকেও হারের শোক-তাপ স্পর্শ করে না? নাজমুল হোসেন শান্তরাই যেখানে নিজ দেশকে হারিয়ে সেভাবে হতাশা বোধ করেন না, সেখানে বিদেশি কোচের মুখে সন্তাপ দেখতে চাওয়াও ভুল ভাবনা। 

সিলেটে যে দলের কাছে বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচ হেরেছে, সেই জিম্বাবুয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ না। ক্রিকেটের বাণিজ্যের রমরমা বাজার নেই তাদের দেশে। বেতন-বোনাসের দাবিতে মাঝেমধ্যে বিদ্রোহও তো হতে দেখা গেছে অতীতে। সেই জিম্বাবুয়ে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এসে সিলেটে কী দারুণ ক্রিকেটই না খেলেছে! ২০২১ সালের পর আরেকটি জয়ের স্বাদ পাওয়া সত্যিই জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটারদের জন্য বিশাল অর্জন। স্পোর্টিং কন্ডিশন পেয়ে ম্যাচের প্রথম থেকে ভালো ক্রিকেট খেলে তিন উইকেটে ম্যাচ জিতেছে সফরকারীরা। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টো। বাংলাদেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করার কথা না। ২০২৩ সালে সিলেটের এই মাঠেই তো নিউজিল্যান্ডকে হারের স্বাদ দিয়েছিলেন শান্তরা। 

গত বছর রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করা, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে হারিয়ে দেওয়া দলই দেশের মাটিতে হেরে গেছে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের ১২ নম্বর দলের কাছে। ২০১৮ সালেও এই ভেন্যুতে হ্যামিলটন মাসাকাদজারা হতবিহ্বল করে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানদের। সাত বছর পর সিলেটে আরেকটি জিম্বাবুয়ে শকে শোকাহত ক্রিকেটানুরাগীরা। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেটার বা কোচিং স্টাফের পুরস্কারের মঞ্চে দাঁড়াতে পারার কথা না। বিসিবি পরিচালকদেরও মঞ্চে দেখা মেলেনি। পরিচালক নাজমুল  আবেদীন ফাহিমকে যেখানে মেয়ের ক্রিকেট লিগের পুরস্কার বিতরণীতে নিয়মিত দেখা যায়, তাঁকেও গতকাল দেখতে পায়নি কেউ। সিলেট টেস্টের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চকে তাই ভাঙা বিয়েবাড়ির মতোই দেখায়। 

এই টেস্টের প্রথম দিন থেকেই ইতিবাচক একটা চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা ছিল বাংলাদেশ দলের সদস্যদের। প্রথম দিন সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হওয়া সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ইতিবাচক কথা বলার  চেষ্টা করে গেছেন। দ্বিতীয় দিনের সংবাদ সম্মেলনে মেহেদী হাসান মিরাজ স্মরণ করিয়ে দেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে পিছিয়ে থেকেও টেস্ট জেতার ঘটনা। গত পরশু মুমিনুল হক জোর গলায় বলেছিলেন, ২৭০ থেকে ৩০০ রানের টার্গেট দিয়ে জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করতে পারবেন তারা।

ব্যাটারদের ব্যর্থতার মিছিলের পরও টেল এন্ডারদের ওপর ভরসা করে স্বপ্ন দেখেছিলেন অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটার। এই ‘স্টোরি টেলার’দের ভুল প্রমাণ করে জিম্বাবুয়ে সত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুজারাবানি বলেছিলেন, ২০০ রানের লক্ষ্য পেলেও ম্যাচ জিতবেন। লক্ষ্য ২০০ পৌঁছানোর আগেই বেঁধে ফেলতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে। সফরকারী দলের পেসার আরও বলছিলেন, প্রতিপক্ষ দলের রানের কথা না ভেবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে চতুর্থ দিন খেলবেন তারা। নিজেদের কাজটা পরিকল্পনা মতোই করে যেতে পেরেছেন তারা। 

ছয় উইকেট আর ১৯৪ রান নিয়ে চতুর্থ দিন ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। আগের রাতের অপরাজিত থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকের আলী জুটি অক্ষত রেখেছিলেন মাত্র এক বল। দিনের দ্বিতীয় বলেই মুজারাবানির শিকার অধিনায়ক। ৬০ রানে শান্তর আউটে বিশাল লিড নেওয়ার স্বপ্নে ভেস্তে গেছে। গতকাল খেলা দেখে থাকলে পরের গল্প জানা থাকার কথা। উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকের একা লড়াই করে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৫ রানে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশকে। তিনি এক প্রান্ত আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তের ব্যাটাররা মিছিল করে আউট হয়েছেন। ১১১ বলে ৫৮ রান করে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন তিনি।

মিডলঅর্ডার এ ব্যাটার হাফ সেঞ্চুরি না পেলে ১৭৩ রানের লক্ষ্য দেওয়া সম্ভব হতো না। বৃষ্টিও তো বাংলাদেশকে কম সহযোগিতা করেনি। বৃষ্টি না হলে চতুর্থ দিন সকালের সেশনেই ম্যাচ শেষ হয়ে যেতে পারত।

এই টেস্টে বাংলাদেশকে ১৯১ রানে অলআউট করে জিম্বাবুয়ে করেছিল ২৭৩ রান। ৮২ রানে এগিয়ে থাকাই জিম্বাবুয়েকে জয়ের পথ ঠিক করে দিয়েছে। পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৫ রান করার পরও তাই লো টার্গেট হয়েছে। এই টেস্টে হাতাশার মধ্যেও প্রাপ্তি বলতে মেহেদী হাসান মিরাজের ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার। এই  ম্যাচ দিয়েই ৫২ টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক পেলেন তিনি। সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের পর তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেট প্রাপ্তি ক্লাবের সদস্য হলেন মিরাজ। যদিও ম্যাচ হেরে যাওয়ায় ব্যক্তিগত অর্জন গুরুত্ব হারিয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ