প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংস্কার প্রস্তাব জমা দিলো ৪ কমিশন
Published: 15th, January 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে চার কমিশন।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কমিশন প্রধানরা এসব প্রতিবেদন জমা দেন।
বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানোর কথা রয়েছে।
প্রতিবেদন জমা দেওয়া কমিশনগুলো হলো- ড.
এসব কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার। চলতি মাসেই এ আলোচনা শুরু হতে পারে। সংস্কার প্রস্তাব এবং এগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য হলে সংলাপ থেকে একটি রূপরেখা আসতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, “হস্তান্তরের পর রিপোর্ট নিয়ে আলাপ হবে, পুরো জিনিসটি তারা বলবেন কী কী পাওয়া গেছে।”
পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের জন্য সর্বশেষ সময় নির্ধারণ ছিল ১৫ জানুয়ারি। জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগের জন্য সময় বাড়ানো হয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে বেশি মনোযোগ সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থার দিকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গুরুত্বপূর্ণ এ দুই বিষয়ে কী ধরনের সংস্কার হবে তার ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাওয়া নতুন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
এই কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার কমিশনগুলোর প্রধানদের নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ গঠন করতে যাচ্ছে। এই কমিশনের মাধ্যমে সংস্কারের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ করার চেষ্টা হতে পারে। একই সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ নকশাও ঘোষণার সিদ্ধান্ত হতে পারে এ মাসেই।
গত ১৬ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা অন্তর্বর্তী সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, তা বিবেচনা করে আমি এই কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করব। আমার সঙ্গে এই কমিশনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।”
ঢাকা/হাসান/ইভা
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগের আহ্বান গণ অধিকার পরিষদের
অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ও আস্থা ধরে রাখতে দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনসহ চারটি দাবিও জানিয়েছে তারা।
দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে আল রাজি কমপ্লেক্সে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করে গণ অধিকার পরিষদ। এতে লিখিত বক্তব্যে পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর উল্লিখিত আহ্বান ও দাবি জানান।
গণ অধিকার পরিষদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেড় দশকের ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু দেশি-বিদেশি অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের কারণে সেটি হয়নি। একটি নির্দিষ্ট বলয়কেন্দ্রিক সরকার গঠিত হয়েছে। ফলে গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছিল, আজ তাতে ফাটল ধরেছে।
সরকারের থাকা তিন ছাত্র উপদেষ্টার মধ্যে একজন পদত্যাগ করে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন উল্লেখ করে গণ অধিকার পরিষদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ও জনগণসহ রাজনৈতিক নেতাদের আস্থা ধরে রাখতে সরকারে থাকা অন্য দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী সব ছাত্রের পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি।’
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের দাবি, আন্দোলনকেন্দ্রিক পরিচিত ছাত্র নেতাদের তদবির, নিয়োগ, টেন্ডার–বাণিজ্যসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অসংখ্য ঘটনা ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি গতকাল (জাতীয় নাগরিক পার্টি) আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানেও জেলা প্রশাসকের নোটিশে ঢাকার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মতো বিষয় দেখা গেছে। গাড়ি সরবরাহে মালিক সমিতি ও পরিবহন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কোনো একক সংগঠন বা নেতাদের দ্বারা সংঘটিত হয়নি উল্লেখ করে গণ অধিকার পরিষদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক নেতাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপ, ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। কাজেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী চেতনার বয়ানের মতো কোনো অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক ভাষ্য তৈরি না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
দেশের চলমান সংকট ও সামগ্রিক পরিস্থিতিতে চার দফা দাবি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। দাবিগুলো হলো জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন। আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং শহীদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন। গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা।
সংবাদ সম্মেলন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ফারুক হাসান, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতিমা তাসনীম, জসিম উদ্দিন, মাহফুজুর রহমান খান, খালিদ হাসান, রবিউল হাসান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আবদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।