পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে কাজ করছে কমিশন: আইজিপি
Published: 15th, January 2025 GMT
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, ‘‘পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে একটি দল নিরপেক্ষ সংস্থায় উন্নয়ন করতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। পুলিশের মনোবল পুনরুদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৪০তম ক্যাডেট উপ-পরিদর্শক (এসআই) ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, ‘‘অপরাধ দমন, জনগণের সম্পত্তির নিরাপত্তা প্রদান ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা পুলিশের প্রধান দায়িত্ব।’’
আরো পড়ুন:
ব্যাংক কর্মচারীকে হাতকড়া পরিয়ে ১৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ
কুষ্টিয়ায় জামায়াতকর্মী নিহত: ৩ আসামি গ্রেপ্তার
শিক্ষানবিশ এসআই ক্যাডেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘পরিবর্তিত সমাজের সারথী হিসেবে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় জনসেবায় আপনারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। পুলিশের উপ-পরিদর্শক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পদ; কারণ ৯০ ভাগ ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত আপনারা করে থাকেন। আর ন্যায়বিচার পাওয়া নির্ভর করে পুলিশের তদন্তের ওপর।’’
এর আগে, প্রশিক্ষণে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন আইজিপি। এর মধ্যে, বেস্ট একাডেমিক হিসেবে ক্যাডেট এসআই মো.
কুচকাওয়াজে ২২ জন নারীসহ ৪৮০ জন শিক্ষানবিশ ক্যাডেট এসআই অংশগ্রহণ করেন। এ সময় পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভূঁঞা, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আলমগীর রহমান ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর পুলিশ একাডেমিতে ৮২৩ জন ক্যাডেট এসআইয়ের এক বছর মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শুরুর পরই নানা অভিযোগে ডিসচার্জ হন ২২ জন। গত বছরের ৪ নভেম্বর ৮০১ জনের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। এরই মধ্যে সম্প্রতি চার দফায় মোট ৩২১ জন ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতি পাওয়া এই ৩২১ জন আছেন আন্দোলনে। তারা তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আন্দোলনরত অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের ওপর জলকামান নিক্ষেপ করে তাদের সচিবালয়ের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরদিন সকালে অনুষ্ঠিত হলো টিকে থাকা ৪৮০ জনের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ।
ঢাকা/কেয়া/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এক ড ম আইজ প
এছাড়াও পড়ুন:
গায়েবি মামলায় ভুগছেন জবির ১১ শিক্ষার্থী
হঠাৎ গ্রেপ্তার হন ১১ শিক্ষার্থী। তিন দিনের মধ্যে সাময়িক বহিষ্কার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। তিন থেকে পাঁচ মাস জেল খাটেন। শিক্ষাজীবনে পিছিয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঘটনা সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না। তিন বছর আগের গায়েবি মামলায় এখনও ভুগছেন।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন ইসলাম জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১ মার্চ পুরান ঢাকার একটি মেসে ওঠেন। ২৪ দিন পর আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তিন মাস জেল খাটেন। বর্তমানে তিনি তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। মামলা চালাতে পরিবারের খরচ হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৯ মার্চ যাত্রাবাড়ী থানার এসআই জাহিদুজ্জামান বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার টোলপ্লাজা-সংলগ্ন এলাকায় লেগুনা ভাঙচুর এবং বোমাবাজির ঘটনায় মামলা হয়। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে ফাঁসানো হয় শাহিনকে। ঘটনার সময় তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে ছিলেন।
এ ছাড়া ২০২২ সালের ২৫ মার্চ কোতোয়ালি থানার এসআই রুবেল খান বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করেন। এ দুই মামলায় জবির ১১ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভুক্তভোগী আল মামুন রিপন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি লক্ষ্মীবাজারে সবজির দোকান চালাতেন। মিথ্যা মামলায় তিন মাস কারাগারে ছিলেন। মানসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিন বছরে মামলার পেছনে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া আব্দুর রহমান অলি, শ্রাবণ ইসলাম রাহাত এবং রওশন-উল ফেরদৌসকে ফাঁসানো হয়। প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ২০২২ সালে ঢাকায় আসেন তারা। তিন মাস না পেরোতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় ওলির খরচ হয় সাড়ে ৪ লাখ, রাহাতের ৪ লাখ, ফাহাদের ৪ লাখ ও রওশনের ৬ লাখ টাকা।
রাহাত বলেন, ২০২২ সালের ৭ মার্চ গেণ্ডারিয়ায় বড় ভাই মো. ফাহাদ হোসেনের মেসে ওঠেন তিনি। এর ১৭ দিনের মাথায় পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পাঁচ মাস কারাভোগ করতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। তদন্ত ছাড়া তাদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। এক বছর পিছিয়ে পড়েন। তিন বছর পার হলেও নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাহাদি হাসান জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক সপ্তাহ জানতেন না কী অভিযোগ। জেল থেকে আদালতে নেওয়ার পর জানতে পারেন ঘটনাটি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির দপ্তর সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রলীগের আসিফ। এ নির্বাচনে ছাত্রলীগের একাধিক প্রার্থী ছিলেন, এর মধ্যে অনেকে ডিবেট করতেন না। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় ডিবেটিং সোসাইটির প্রার্থিতা বাতিলের উদ্দেশ্যে, যেন ছাত্রলীগের আসিফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী হাসিব মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন এবং ছাত্রলীগের শাইদুল ইসলাম সাঈদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হন। এর সঙ্গে সাবেক প্রক্টর মোস্তফা কামাল জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।
দুটি মামলার এজাহারে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর আট মাস পার হলেও সুরাহা হয়নি। কোতোয়ালি থানা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়েছে। এ মামলা নিষ্পত্তির জন্য আজ আদালতে উঠবে। যাত্রাবাড়ী থানার নথিপত্র পুড়ে যাওয়ায় অগ্রগতি জানাতে পারছে না পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের গায়েবি মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। খুব দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. রিফাত হাসান বলেন, এর আগেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত এই মামলা সমাধানে প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ নেব। প্রক্টর ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘১১ শিক্ষার্থীর গায়েবি মামলা নিষ্পত্তির জন্য একাধিকবার থানায় যোগাযোগ করেছি। এ বিষয়ে আবার কথা বলব।’