পৃথক তিনটি স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে ৫ কোটি ৫০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল কিনছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আসন্ন পবিত্র রোজায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভর্তুকি দামে বিক্রির জন্য এসব তেল কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৯২৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা টিসিবির ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় ২৮ কোটি লিটার ভোজ্যতেল কেনার লক্ষ্যমাত্রা আছে। এসব তেলের মধ্যে সোনারগাঁও সিডস ক্রাশিং মিলস লিমিটেড সরবরাহ করবে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৭১ টাকা ৯৫ পয়সা। সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৭১ টাকা ৫০ পয়সা। শবনম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড সরবরাহ করবে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার পাম ওলিন। 

মোট চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বাংলাদেশে (সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাসহ) ফ্যামিলি কার্ডধারী  প্রায় ১ কোটি নিম্নআয়ের পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে তিনটি দরপ্রস্তাবের মাধ্যমে ৫ কোটি ২০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিসিবি। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি-১৬ (৫ক) অনুযায়ী প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ১৭২ টাকা ৫৬ পয়সা।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। মূল্যায়ন কমিটি প্রাপ্ত একটি দরপত্র, তুলনামূলক বিবরণী এবং সংযুক্ত দাখিলকৃত কাগজ পর্যালোচনা করে। পর্যালোচনা শেষে দেখা যায়, দরদাতা প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁও সিডস ক্রাশিং মিলস লিমিটেডে দরপত্রে প্রতি লিটার তেল সব খরচসহ ১৭১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৭৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা।  

অপর এক প্রস্তাবে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী প্রায় ১ কোটি নিম্নআয়ের পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে টিসিবি কর্তৃক স্থানীয়ভাবে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার পরিশোধিত পাম ওলিন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে দুটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। দরপ্রস্তাবের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান শবনম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লিটার পাম ওলিন কেনার সুপারিশ করে। প্রতি লিটারের দাম ১৬২ টাকা হিসেবে ২ কোটি ২০ লিটার পাম ওলিন কিনতে ব্যয় হবে ৩৫৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে আরো ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ক্রয় প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে মাত্র একটি দরপত্র জমা পড়ে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি দরপত্রের দলিলাদি পর্যালোচনা করে সেটি রেসপন্সিভ হিসেবে বিবেচনা করে এবং দরদাতা সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের নাম সুপারিশ করে। দরপ্রস্তাবে দরদাতা প্রতিষ্ঠান প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬২ টাকা ৯৫ পয়সা উল্লেখ করে। সে হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়বিন তেল কিনতে ব্যয় হবে ৩৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

এ সংক্রান্ত পৃথক তিনটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দরপত র

এছাড়াও পড়ুন:

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

এবারের রোজায় পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, আলুসহ কিছু ভোগ্যপণ্য ক্রেতাদের স্বস্তি দিলেও তাঁরা বিপাকে রয়েছেন ভোজ্যতেল নিয়ে। ভোজ্যতেল, বিশেষ করে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট চলছিল কয়েক মাস আগে থেকে। রোজা চলে এলেও বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।

ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন রমজানে বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহে কোনো সংকট হবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের দাম স্থিতিশীল আছে বলেও তারা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু রোজার শুরুতে এসে দেখা গেল বোতলজাত সয়াবিন বাজার থেকে প্রায় উধাও।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি বাজার ঘুরে শুক্রবার দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই বললেই চলে। বিশেষ করে পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক সপ্তাহ ধরেই এই সংকট চলছে। এই সুযোগে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাসে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ১৮৫-১৯০ টাকা লিটার দরে। এই দর সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে লিটারে ২৮ থেকে ৩৩ টাকা বেশি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, চাহিদার তুলনায় দেশে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত আমদানি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, তাহলে ক্রেতারা কেন বাজারে গিয়ে বোতলজাত তেল পাচ্ছেন না?

ভোজ্যতেলের সংকট নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করা হচ্ছে। ভোজ্যতেল উৎপাদন ও পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর দাবি, তারা নিয়মিত বাজারে তেল সরবরাহ করছে; কিন্তু ডিলার ও খুচরা পর্যায়ে তেল মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। আবার খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, সরবরাহ কম বলে তাঁরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না।

কয়েক দিন আগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মীরা কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০ কার্টন ভোজ্যতেল উদ্ধার করেন। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এ অভিযানে ২০২৩ সালের মে থেকে অক্টোবর উৎপাদিত পাঁচ লিটারের ছয় কার্টন সয়াবিন তেলও জব্দ করা হয়, যার মেয়াদ ২০২৪ সালের মে থেকে অক্টোবরে শেষ হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ তেল স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

মনে রাখতে হবে, মজুত প্রবণতা তখনই শুরু হয়, যখন সরবরাহে ঘাটতির আশঙ্কা থাকে। কোম্পানিগুলো যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করলে বোতলের তেল মজুত করার ঝুঁকি কেউ নিত না। যেমন এবার চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়নি, কারণ সরবরাহ ভালো।

অন্যান্য দেশে ব্যবসায়ীরা রোজা, ঈদ, নববর্ষ ও বড়দিন উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়ে দেন; কিন্তু আমাদের দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা এটাকে নেন মওকা হিসেবে।

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা করে থাকে; এই শাস্তি গুরু পাপে লঘু দণ্ডই মনে হয়। বাজারে সরবরাহব্যবস্থায় কী সমস্যা তৈরি হলো, কী উপায়ে তার সমাধান করা যায়, সরকারকে সেটার ওপর জোর দিতে হবে। বোতলজাত তেল সরবরাহের সংকটটি অনেক দিন ধরেই চলছিল। সেটা কেন সমাধান করা গেল না, খোলা তেল সরবরাহ করা গেলে বোতলের তেল সরবরাহ কেন বাড়ানো যাবে না, ব্যবসায়ীরা কি এবার অতিরিক্ত মুনাফার জন্য ভোজ্যতেলকে বেছে নিয়েছিলেন—এসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।

ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে যাঁরা ক্রেতাদের পকেট কাটছেন, তঁাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। এমন যাতে না হয়, সেই বাজার কৌশল খুঁজে বের করা সরকারেরই দায়িত্ব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের ফুটপাত বাণিজ্যে চসিক
  • বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কিছুটা কম, স্বীকার করলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • দুই দিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • দুইদিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • ২ মাস চলে গেল, আর কবে বই পাবে শিক্ষার্থীরা
  • বিকাশ–রকেট–ডেবিট কার্ডে কেন মেট্রোরেলের রিচার্জ সুবিধা চালু হচ্ছে না
  • গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধে জাতিসংঘ ও আরব দেশের নিন্দা
  • সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার বাস্তবায়নে প্রকল্প, ব্যয় হবে ৫০৩৩ কোটি টাকা
  • অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
  • বর্ধিত সভায় উপস্থিত না হয়ে ‘দরপত্র জমা দিতে’ যাওয়া শ্রীপুর বিএনপির সভাপতিকে শোকজ