প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে হুমগুটি খেলতে মানুষের ঢল
Published: 15th, January 2025 GMT
২৬৬তম ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলা দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়। মঙ্গলবার বিকেলে সাড়ে ৩টায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় লক্ষ্মীপুর বড়ইআটা স্থানে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলায় অংশ নেন হাজার হাজার খেলোয়াড়।
ঐতিহাসিক এ হুমগুটি খেলা দেখতে সেখানে মানুষের ঢল নামে। শুরুতে প্রশাসন খেলা নিষিদ্ধ করায় উপস্থিতি কম হয়। সময় যত ঘনিয়ে আসে লোক সমাগম তত বাড়তে থাকে।
এর আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় সোমবার (১৩ জানুয়ারি) হুমগুটি খেলা বন্ধ করতে তৎপরতা চালায় পুলিশ। রাত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েও পুলিশ ব্যর্থ হয়। সকাল থেকেই ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ঢাকঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের তালে হাজারও খেলোয়াড় ও দর্শনার্থী আসতে থাকেন। ধীরে ধীরে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় খেলার মাঠ।
তিনি বলেন, খেলায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে এর দায় খেলোয়াড়দেরকেই নিতে হবে। আশপাশে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।
সরেজমিনে খেলার মাঠে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষের সমাগম। বয়স্কদের চেয়ে উঠতি বয়সের তরুণদের সমাগমই বেশি। খেলার মাঠের চারদিকে চলছে হৈ-হুল্লোড়।
এ উপলক্ষ্যে গ্রামীণ মেলাও বসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদেরও উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
খেলা দেখতে আসা ৮০ বছর বয়সী আবুল কাশেম বলেন, ছোটবেলা থেকেই এ খেলা দেখে আসছি, আগে এ খেলা একাধারে এক সপ্তাহ চলতো।
সফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, এ বছর শুরুতে প্রশাসন খেলা নিষিদ্ধ করায় উপস্থিতি কম। তবুও অর্ধ লক্ষ লোকের সমাগম ঘটেছে।
স্থানীয় আবু তাহের জানান, গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম খেলাধুলার মধ্যে হুমগুটি অন্যতম পুরোনো একটি খেলা, যা কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এই খেলা ধরে রাখতেই প্রতিবছর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খেলাটি প্রাচীনকাল থেকে এ এলাকার ঐতিহ্যকে জানান দিয়ে আসছে। প্রতিবছর পৌষের কনকনে শীতের শেষ দিনে তালুক-পরগনা সীমান্তে খেলার আয়োজন করা হয়। জমিদার আমলে শুরু হওয়া আড়াইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ খেলাকে কেন্দ্র করে আনন্দে মেতে ওঠে গ্রামের প্রতিটি মানুষ।
ছোট ছেলে-মেয়েরা পরে নতুন জামা-কাপড়, গ্রামে গ্রামে জবাই হয় শতাধিক গরু-খাসি। ঘরে ঘরে তৈরি হয় শীতকালীন রসাল পিঠা-পায়েস-পুলি; আরও কত.
এদিন গ্রামের নারী-পুরুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। খেলা শুরুর দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। শেষ বিকেলে হাজারো খেলোয়াড়ের পৃথক মিছিল উপস্থিত হয় বড়ইআটা বন্দে। পার্শ্ববর্তী উপজেলা মুক্তাগাছা, ত্রিশাল ও সদর থেকে শত শত মানুষ মাঠের চারপাশে জড়ো হন। কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর একপর্যায়ে আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যদিয়ে খেলা শুরু হয়।
হাজারো মানুষের ভিড়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায় ৪০ কেজি ওজনের পিতলের গুটি। এক গুটির দখল নিতে গ্রামের লাখো জনতার লড়াই। তবে রেফারিবিহীন এ খেলায় শুরু থেকে গুটি নিয়ে ব্যাপক কাড়াকাড়ি হলেও কোনও মারামারি হয় না। ঘণ্টায় ঘণ্টায় খেলার রং বদলায়।নিজেদের দখলে নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয় খেলায়। খাল-বিল ও মাঠ-ঘাট পেরিয়ে গুটি গুম না হওয়া পর্যন্ত চলে খেলা। অনেক সময় সারা রাত চলার পর শেষ হয় পরদিন ভোরবেলা।
কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। নানারকম প্রচলিত গ্রামীণ আয়োজন এখন অনেক কমে গেছে। দেশের যুবসমাজ শিল্প-সংস্কৃতি ভুলে যেতে বসেছে। পুরোনো সংস্কৃতি তাদের সামনে তুলে ধরতে এ ধরনের প্রতিযোগিতার বিকল্প নেই। ঐতিহ্যবাহী এ হুমগুটি খেলার প্রতি মনের অজানা টানে মানুষ প্রতিবছর তালুক-পরগনা সীমান্তে ছুটে আসে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তাগাছার জমিদার শশীকান্তের সঙ্গে ত্রিশালের হেমচন্দ্র রায় জমিদারের প্রজাদের মধ্যে তালুক-পরগনা জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধ নিস্পত্তির জন্য তালুক-পরগনা সীমান্তে এ খেলার আয়োজন করে। খেলার শর্ত ছিল যেদিকে গুটি যাবে তা হবে তালুক, পরাজিত অংশের নাম হবে পরগনা। সে থেকে প্রজাদের শক্তি পরীক্ষার জন্য জমিদারদের এ পাতানো খেলা চলছে বছরের পর বছর ধরে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ল ক পর উপস থ ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা দৌড়াচ্ছে, ভারী বুট পরা পুলিশ তার পিছনে দৌড়াতে পারে না
কিশোর গ্যাংয়ের অল্পবয়সী ছেলেদের সঙ্গে ভারী বুট পরা পুলিশ দৌড়ে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করছেন বলেও জানান তিনি।
সোমবার (৩ মার্চ) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে খুন-ধর্ষণের পরিসংখ্যান এসেছে- এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, “আমি অস্বীকার করছি না। আগে কী ছিল, এখন কী হচ্ছে, সেটা বলছি। আমরা একটা বিধ্বস্ত পুলিশ বাহিনী পেয়েছি। এই বাহিনীতে আমরা যাদেরকে নিয়ে এসেছি, তারা কোনোদিন ঢাকা শহর দেখেনি। তারা এই জায়গাগুলো চিনে এখন কাজকর্ম করছে। ধীরে ধীরে তারা নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। প্রতিদিনই উন্নতি হচ্ছে। নতুন সমস্যা আসছে, আমরা নতুন কৌশল ব্যবহার করছি।”
আরো পড়ুন:
এবার জিনিসপত্রের দাম গতবারের চেয়ে কম: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আইন-শৃঙ্খলার এত নাজুক অবস্থা স্মরণকালে নেই: জিএম কাদের
তিনি বলেন, “আগে কিশোর গ্যাংয়ের এরকম ব্যাপার ছিল না। অল্পবয়সী ছেলেরা দৌড়াচ্ছে, আমার ভারী বুট পরা পুলিশ তার পিছনে দৌড়াতে পারে না। এজন্য কী ব্যবস্থা করা যায়, সেই বিকল্প ব্যবস্থা আমরা করছি।”
সরকার আরো কঠোর হচ্ছে কি না এ বিষয়ে তিনি বলেন, “কঠোর হওয়ার কিছু নেই, কোমল হওয়ারও কিছু নেই। যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই করছি আমরা।”
অপারেশন ডেভিল হান্ট আরো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমুখী (ফোকাসড ওয়েতে) করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।
তিনি বলেন, “কোথায় আমাদের ফোকাস বাড়ানো দরকার, কোথায় ফোকাস বাড়ানোর দরকার নাই, কোথায় লোকবলের অপচয়, রোজার মাসে জনবল সাশ্রয় করে আমরা সর্বোচ্চ কী কী কাজ করতে পারি, কোন কোন জায়গায় আমাদের যৌথ টহলের দরকার নেই-সেগুলো আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। মোর ফোকাসড ওয়েতে করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
মোর ফোকাসড ওয়ে মানে কী এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমরা কাজ করছিলাম। সেটা প্রতি মাসেই পরীক্ষা করা হয়, যে ফলাফল কী হচ্ছে, কোথাও নিষ্ফল পেট্রোলিং হচ্ছে কি না, দরকার আছে কি না এসব। যখন দেখা যায় সমস্যা নেই, তখন আমরা সেখান থেকে সরে আসছি। অন্য যেখানে প্রয়োজন হচ্ছে সেখানে কাজ করছি। এখন আমরা ঢাকা শহরের দিকে নজর দিচ্ছি। ছিঁচকে যেগুলো ঘটছে সেগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনার চেষ্টা করছি।”
অভিযানকে সংকুচিত করছেন কি না-এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন- “না, তা নয়। এটাকে আমরা রেশনালাইজ করছি। কোনো জায়গায় হয়তো এতগুলো লোক পাঠানোর দরকার নেই, সেগুলো দেখছি। কোথায় কয়টা পেট্রোল হচ্ছে সেটা আমরা দেখছি।”
অপারেশন ডেভিল হান্টের নাম পরিবর্তন হচ্ছে, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা নেই বলেও জানান নাসিমুল গনি।
তিনি বলেন, “কোর কমিটিতে আমরা এই ধরনের (নাম পরিবর্তন) কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। নিয়মিত এ মিটিংটা হয় কাজকর্মের অগ্রগতি দেখার জন্য।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন কেমন দেখছেন-জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, “আমি গতকাল ইফতার করেছি মোহাম্মদপুর থানায়। সেখানে গত ডিসেম্বর মাসে খুন হয়েছে দুটো। জানুয়ারি মাসে খুন হয়েছে একটি, গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি খুনও হয়নি। কিন্তু গত বছরের জুলাই এর আগে এখানে প্রতি মাসে দশটা করে খুন হতো।”
“এজন্য আমরা প্রতি সপ্তাহে পর্যালোচনা করি। যে ফোর্সের দরকার নেই, সেটা রেখে তো আমার লাভ নেই। একটা প্রসেস আছে। কোনো কিছুই তো আর সারাজীবন থাকে না। রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নানা ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী অ্যাকশনে যাচ্ছে তারা,” বলেন তিনি।
এখনও মব চলছে, লালমাটিয়াতে দুইজন মেয়েকে হেনস্তা করা হয়েছে।এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, “মব অর্গানাইজডভাবে হয় না। কেউ একটা হুজুগ তুলে দেয়। মেয়েগুলো ওখানে অর্গানাইজড ওয়েতে বসেনি বলে আমার ধারণা। লোকগুলো যে সংগঠিত হয়ে সেখানে এসেছে তাও না। এগুলো তো আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব না। আমাদের আরো একটু সময় লাগবে জাতিগতভাবে আরো একটু ওপরে যেতে। তখন এগুলো নিয়ে আর এত ঝামেলা হবে না।”
মবের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, “যেসব জায়গায় এ ঘটনাগুলো হচ্ছে, সেখানে যদি তথ্য-প্রমাণ থাকে, যেসব জায়গায় এগুলো নিয়ে সিরিয়াস ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন হয়, সেগুলো সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অ্যাড্রেস করেন।”
“আমরা ছুটির দিনগুলোতেও বসে থাকি না। আমরা প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা কাজ করি। আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। আমরা আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখব না। এটুকু বলতে পারি, যাতে আগে যে অবস্থা ছিল তার থেকে আরো ভালো অবস্থায় যেতে পারি।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ