আমলাদের চাহিদাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি এবং অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছিল কমিশন। তবে এখন কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে থাকছে না সেই প্রস্তাব। আমলাদের চাপে এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ক্যাডার কর্মকর্তাদের আন্দোলন আমলে নিয়ে নতুন করে সুপারিশ প্রতিবেদন তৈরি করছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ বাস্তবায়নে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জমা দেওয়ার সময় চেয়েছিল কমিশন। গতকাল মঙ্গলবার কমিশনের চাহিদার ভিত্তিতে তাদের এ সময় দিয়েছে সরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের দুই সদস্য সমকালকে জানান, খসড়া প্রতিবেদন তৈরির শুরুতে তারা বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের প্রশাসনের বিষয়টি বিবেচনায় নেননি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সুপারিশ প্রস্তুত করা হয়েছিল। এখন উন্নত রাষ্ট্রের প্রশাসন কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বিশ্বে দুই মডেলে প্রশাসন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যেমন– ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাজ্যের প্রশাসনে পদোন্নতি হয় এসিআর বা কর্মদক্ষতা অনুযায়ী। আর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া প্রশাসনে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিটি পদের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। ডিসি-এসপিসহ সব পদে নিয়োগের জন্য প্রকাশ করা হয় বিজ্ঞপ্তি। সে অনুযায়ী যাদের যোগ্যতা আছে, তারা আবেদন করেন। এরপর স্বাধীন নিয়োগ কমিটি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়। কমিশন উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের পদোন্নতির পদ্ধতিকে বেছে নিতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা দিতে চাইছেন না।
জানা যায়, কমিশনের প্রধান দেশের বাস্তবতা বিবেচনা করে পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে ছিলেন। আমলাদের আন্দোলনের পর কমিশনের কয়েক সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কমিশন।
পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো তথ্য দিতে পারব না। কমিশনের প্রতিবেদন সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর পর জানতে পারবেন।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছিল। ওই সভায় কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেছিলেন, এখন থেকে উপসচিব ও যুগ্ম সচিবরা পরীক্ষা ছাড়া পদোন্নতি পাবেন না। পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা নেবে। ৭০ নম্বর না পেলে পদোন্নতি পাবেন না। এ ছাড়া উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ সুপারিশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিসিএস স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে ক্যাডার সার্ভিস থেকে বের করে দেওয়ার প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী পে-কমিশন এবং অবসরের বয়স বাড়ানোর ব্যাপারে সুপারিশ থাকতে পারে। নিয়োগের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব না করার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা থাকবে। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করা যাবে। তবে রাজনৈতিক কারণে কাউকে নিয়োগবঞ্চিত না করার বিষয়ে প্রস্তাব থাকবে। সেনাবাহিনীর মতো সব ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে সুপারিশ থাকতে পারে। পদোন্নতি ও পদায়নের সময় যোগ্যতা, সততা ও দক্ষতা প্রাধান্য পাবে। কর্মকর্তাদের জবাবদিহি ও স্বাধীনতা থাকবে। কেউ দুর্নীতি করলে থাকতে হবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার বিধান। গবেষণা সেল গঠনের পাশাপাশি দেশের আট বিভাগ থেকে ১০ বিভাগে রূপান্তরের সুপারিশ করা হতে পারে।
সেবা সম্পর্কিত সুপারিশ এখনও যুক্ত হয়নি
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কমিশন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগ, ছয় জেলা এবং চার উপজেলা সফর করে অংশীজনের মতামত ও পরামর্শ নিয়েছে। এ পর্যন্ত ২০টির বেশি সভা করেছে কমিশন। লক্ষাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে জনপ্রশাসন সংস্কার সংশ্লিষ্ট অনলাইনে পাওয়া মতামত এবং নাগরিক পরিসেবা সম্পর্কে নাগরিকের কাছ থেকে পাওয়া সুনির্দিষ্ট অভিমত নিয়ে এখনও যাচাই-বাছাই চলছে। তা ছাড়া কমিশনের সদস্যরা ৬ থেকে ৭ জানুয়ারি কুমিল্লা ও চাঁদপুরের মতলবে অংশীজন এবং মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন বিভাগের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তথ্য সংগ্রহ করেছেন, যা সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত করার কাজও চলমান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনপ্রশাসনে নাগরিক সেবার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এটি সংস্কারের জন্য সবার আগে সুপারিশ করা উচিত।
সরকারি অফিসগুলোতে মানুষ নানাভাবে হয়রানি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঘুষ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। অথচ সংস্কার কমিশনের খসড়ায় মানুষের সেবা সম্পর্কিত বিষয়ে এখনও কোনো প্রস্তাব যুক্ত করা হয়নি। লক্ষাধিক মানুষ তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে যে মত দিয়েছে, সেগুলো এখনও পর্যালোচনা করেনি কমিশন।
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার সমকালকে বলেন, সরকারি অফিসে মানুষ যেন হয়রানি ও ঘুষ ছাড়া সেবা পাই, সে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, মানুষকে সেবা দেওয়ায় জনপ্রশাসনের বড় কাজ। এ বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদনের সামনে রাখতে হবে।
যেভাবে কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন হবে
সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা হবে। এর পর প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ করবেন। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের মতামত প্রাধান্য পাবে। সবার মত নিয়ে সংস্কারের জন্য মূল প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দেশের সংস্কার কাজ চলবে।
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, জনপ্রশাসনের প্রধান সংস্কার হলো– ন্যায়ভিত্তিক কাজ করা সরকারের সদিচ্ছা। নিয়োগ শতভাগ স্বচ্ছ ও মেধাভিত্তিক হতে হবে। পুলিশি প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় নেওয়া যাবে না।
কমিশনের প্রস্তাবেই ক্যাডার কর্তাদের ক্ষোভ
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিসিএস প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্য, আলোচনা, সমীক্ষা ও মতামত ছাড়াই কমিশন একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিল, যা কাম্য নয়। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কমিশনকে খসড়া প্রস্তাব থেকে সরে আসার জন্য একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কমিশনের সুপারিশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৬৪ জেলার ডিসিরা।
গত ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে প্রতিবাদ সভার নামে শোডাউন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানকে আলটিমেটাম দেন প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। ২৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিজ নিজ দপ্তরের সামনে ‘কলমবিরতি’ করেন ২৫ ক্যাডারের সমন্বয়ে গঠিত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কর্মকর্তারা। কর্মসূচি শেষে পরিষদের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, দাবি আদায় না হলে ৪ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। তবে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে ওই সমাবেশের বদলে ‘জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস বিনির্মাণে করণীয়: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এসব কারণে কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সিভিল সার্ভিসের প্রত্যেক ক্যাডারের জন্য গঠন করা হয়েছে। অথচ এই কমিশন এককভাবে শুধু প্রশাসন ক্যাডারের মত নিয়েছে। অন্য ক্যাডারের এককভাবে মত নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, তারা কি সংস্কার প্রস্তাব দেবেন জানি না। তবে আমরা আমাদের দাবি কয়েকজন উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। তারা বলেছেন, আগে সুপারিশ আসুক, এর পর বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজ বুধবার সংস্কার কমিশনগুলোর প্রধান ও সদস্যদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদ কক্ষে বেলা ১১টায় সভাটি শুরু হবে। এ সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশন তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।
গত ৯ অক্টোবর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এর পর তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির আগে খসড়া সুপারিশমালা অধিক পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের মেয়াদ ১৫ দিন বাড়ানো হয়।
বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধানসহ বিভিন্ন বিষয় সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এর পর দ্বিতীয় পর্যায়ে পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আমল ক য ড র কর র জন য প কর ত দ র র র জন য আমল দ র পর ক ষ সরক র সদস য আবদ ল
এছাড়াও পড়ুন:
৯০ দিনের মধ্যে গণহত্যার বিচার ও অবিলম্বে আ.লীগের নিবন্ধন বাতিল দাবি
আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই গণহত্যার বিচার, ফ্যাসিবাদী অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবিলম্বে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধকরণের দাবি জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বরাবর এক স্মারকলিপিতে তারা এ দাবি জানান। জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স, অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি নামের সংগঠনগুলোর পাঁচ প্রতিনিধিরা এ দাবি তুলে ধরেন।
আইন উপদেষ্টার কাছে ওই স্মারকলিপিতে তারা লিখেছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যৌথ নির্দেশনায় এদেশের সাধারণ নাগরিকদের ওপর চালানো হয়েছে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ, যার ফলে দুই সহস্রাধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং বহু মানুষ এখনও পঙ্গু ও নিখোঁজ। এই গণহত্যার বিচার এখনও শুরু হয়নি। বিচার প্রক্রিয়া হচ্ছে চরম ধীরগতির, নানাভাবে প্রতিহত করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে। বিচারহীনতার এই ধারাবাহিকতা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৩২ ধারার অপব্যবহারের মাধ্যমে, যা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি গ্রহণের বিধান দেয়। এই ধারা বর্তমানে রাষ্ট্রীয় খুনিদের বিচার এড়ানোর আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বহু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে। হাজার হাজার ভুক্তভোগী এখনও মামলা ও হয়রানির মুখোমুখি, অনেক নিরীহ নাগরিককে গুম-খুনের শিকার হতে হয়েছে, যাদের অধিকাংশের নামই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা মামলা ও মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত।
স্মারকলিপিতে দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফৌজদারি কার্যবিধি ১৩২ ধারা অবিলম্বে বাতিল বা সংস্কার করতে হবে, যাতে সরকারি কর্মকর্তারা দায়মুক্তি না পান। আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে সংগঠিত গণহত্যার বিচার, শাপলায় সংঘটিত গণহত্যা, পিলখানা, ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ২৬ মার্চসহ সকল হত্যাকাণ্ডের দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গসংগঠন এবং ১৪ দলের যেসব নেতা গত তিন নির্বাচনে ক্ষমতায় ছিলেন-তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বিগত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। গণহত্যা তদন্তে অসহযোগিতাকারী সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখনও গুম থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান দিতে হবে এবং আয়নাঘর এবং গুমে জড়িতদের শাস্তির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিগত জুলাই আন্দোলনে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মামলাগুলোসহ গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দায়ের করা ষড়যন্ত্র, প্রহসন এবং রাজনৈতিক হয়রানিমূলক সকল মামলা বাতিল করতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে, অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনসমূহকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নামক দলটি বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে নিজস্ব স্বার্থে এবং জনগণের ওপর চালিয়েছে ফ্যাসিবাদী নিপীড়ন। এই মুহূর্তে এ দলটিকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল করা না হলে ভবিষ্যতে দেশকে আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা আশাবাদী, আপনি এই সংকটময় সময়ে সাহসী ও ন্যায়নিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। ইতিহাসের আদালতে আপনি ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।