জরুরি কিছু সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচন চাইলেও প্রথমবার বিএনপি সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে দলটি জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব বলে জানিয়েছে। আগের দিন সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে মত দেন বিএনপি নেতারা।

সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানিয়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়ে অন্তত ১১টি কমিশন করা হয়েছে। চলতি মাসেই কমিশনগুলো থেকে সংস্কারের প্রস্তাবনা আসবে। এমন সময়ে বিএনপি কেন জুলাই-আগস্টকে নির্বাচনের জন্য বেছে নিচ্ছে– এমন প্রশ্নে দলটির নেতারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচন করার মাধ্যমে সরকার জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাইছে। নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট তত বাড়বে। গণতন্ত্রে উত্তরণের জনআকাঙ্ক্ষাও ব্যাহত হবে। মাঠ নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। 
ফলে দেরি করার যৌক্তিক কারণ নেই।

এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই। নির্বাচন কমিশন হয়েছে; সরকারেও মোটামুটি স্থিতিশীলতা এসেছে। এখন মনে হয় না নির্বাচন এত বিলম্বে করার কোনো কারণ আছে। যত বিলম্ব হচ্ছে, তত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

জুলাই-আগস্ট বর্ষাকাল। প্রচার ছাড়াও অঝোর ধারার বৃষ্টি কিংবা ঝড়ে ব্যাহত হতে পারে ভোটদান। বিষয়টি জেনেও বিএনপির দাবির বিষয়ে দলটির কয়েক নেতা জানান, সরকারের কাছে তারা দাবি করেছেন। এখন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তারিখ নির্ধারণ হতে পারে। তবে তা কোনোভাবেই চলতি বছর অতিক্রম করা ঠিক হবে না।
বিএনপি সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনকে ফোকাস করতে দরকষাকষির অংশ হিসেবে হাইকমান্ড জুলাই-আগস্টে নির্বাচনের দাবি তুলেছে। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে সরকারের আগ্রহে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে দলটির নেতারা। আলাপ সামনে আনার মাধ্যমে চাপ তৈরির পাশাপাশি সরকারের অবস্থানও পরখ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক কিংবা অন্তর্বর্তী– সরকারের ধরন যেমনই হোক, তাদের প্রধান কাজ সংস্কার শেষে সংসদ নির্বাচন করা। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে চায়, এ জন্য নিশ্চয় হালনাগাদ ভোটার তালিকা লাগবে। তালিকা যখন করতেই হবে, তখন সংসদ নির্বাচনে বাধা কোথায়? আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। এখন অংশীজন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে হবে।’

সবই তো প্রস্তুত
স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত জানাতে গতকাল গুলশানে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.

আব্দুল মঈন খান। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটি গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এ কারণে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান– দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এ বছরের মাঝামাঝি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।’
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “ক্রান্তিকালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া অন্য নির্বাচন করার চিন্তা আসে কোত্থেকে? নির্বাচন পেছানোর চিন্তাই বা আসে কোত্থেকে? কারণ এটাই তো আপনার (সরকার) প্রথম কাজ। আপনি দেশকে একটি লাইনের ওপর তুলতে চাইলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। আমরাই তো সংস্কার আগে তৈরি করেছি, জাতির সামনে তা উপস্থাপনও করেছি। ২০১৬ সালে আমরা ‘ভিশন-২০৩০’ এবং ২০২৩ সালে ৩১ দফা দিয়েছি। আমরাই তো সবচেয়ে বেশি সংস্কার করেছি।”

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ গত তিনটি নির্বাচন হতে পারেনি। ফলে মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চাইছে। লোকাল গভর্নমেন্ট দেশ চালায় না। দেশ চালায় জাতীয় সংসদ, আইন প্রণয়ন করে জাতীয় সংসদ, গণতন্ত্রের মূল হলো জাতীয় সংসদ। এটা কার্যকর ছাড়া গণতন্ত্র ফাংশনাল হয় না।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সেটি করতে বেশি দিন লাগার কথা নয়। প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগসহ অন্যান্য কাজেও এক-দুই মাসের বেশি লাগবে না। সবই তো তৈরি। নির্বাচন কমিশনও সংসদ নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত বলেছে। ইসি তো বলেছে, দুটি নির্বাচন একসঙ্গে সম্ভব নয়। তাই আমরা মনে করি, জাতির স্বার্থেই সংসদ নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার।’


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ জ ল ই আগস ট র অবস থ ন গণতন ত র ন র জন য র জন ত ক সরক র র বছর র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার: তারেক রহমান

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ৩১ দফা জনগণের জন্য তৈরি। জনগণের পক্ষ থেকে আসা প্রশ্ন নিয়েই ৩১ দফা প্রস্তুত করা হয়েছে। যেহেতু জনগণের বাকস্বাধীনতার জন্য আমরা লড়াই করেছি, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। সেই জন্য আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। দেশের সকল সংকটকালে বিএনপি পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মানুষও বিএনপির প্রতি আস্থা রেখেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন।

বুধবার সন্ধ্যায় যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের একটি অভিজাত হোটেলে কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।

তারেক রহমান বলেন, জনগণ যদি আপনার পিছনে না থাকে, তাহলে আপনি কিসের নেতা? মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে। এই আস্থা নষ্ট করার জন্য যদি কেউ কোনো কাজ করে, তাহলে তাকে তো আমি টানবো না। এখানে দলকে স্বার্থপর হতেই হবে।

তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি, কর্মী, নেতার কারণে যদি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়, তাকে আমরা ওন (নিজের) করতে পারবো না। আমরা বহু ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যদিয়ে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। বহু অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যদিয়ে আজকে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। কেউ নিজের স্বার্থ নিয়ে দলের স্বার্থ নষ্ট করলে তাকে আমাদের পক্ষে টানা সম্ভব নয়।

তারেক রহমান আরও বলেন, কেউ কেউ বলে যারা অপরাধ করেছে, ভুল করেছে তাদের সঙ্গে আমাদের দলের সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। এতে কী হবে। কী হবে সেটা পরের ব্যাপার। কিন্তু আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা যতটুকু জানছি, সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। যখন যেটা জানবো ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করছি।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, কেউ যদি বলে, আমরা খারাপ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না। অন্তত এ ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার থাকবো। মুখে বলব একটা, কাজে করব আরেকটা, তা নয়। আমরা যা মুখে বলছি, তা আমরা কাজে প্রমাণ করার চেষ্টা করবো। তার প্রতিফলন থাকবে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে যাতে সর্বোচ্চ করতে পারি, আমরা সেটিই করছি। আমরা যদি সরকারে থাকতাম, তাহলে আমরা যেটা করতে পারতাম, দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি দেশের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম। এই মুহূর্তে আমরা সেই অবস্থানে নেই। কাজেই সেই অবস্থানে যদি আমাদের যাওয়ার সুযোগ হয়, আজকে যেমন শুধু দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছি। তেমন সরকারে থাকলে অন্যায়কারী যেই হোক না কেন, আমরা মুখে যেটা বলি, কাজেও সেটির প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করব।

৫ আগস্ট থেকে দলের নেতাকর্মীদের শিক্ষা নিয়ে জনগণের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, রাজনৈতিক কর্মী, নেতারা যদি জনবিচ্ছিন্ন হয়, জনগণের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে কাজ করলে কী পরিণতি হয়, আমরা ৫ আগস্ট দেখেছি। ৫ আগস্ট থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ৩১ দফার প্রশিক্ষণ আমরা করছি। ৩১ দফা জনগণের কাছে নিয়ে যাবো। ৩১ দফা আমাদের অনুধাবন করতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে। জনগণকে সঙ্গে রাখতে হবে। জনগণ থেকে যদি দূরে সরে যায় আমরা। তাহলে ওই ৫ আগস্টের পরিণতি আমাদের হবে। ৫ আগস্টের পরিণতি থেকে দূরে থাকতে হলে, জনগণের সঙ্গেই থাকতে হবে। আমরা সবাই কষ্ট করছি। আগামী দিনে যাতে দল সুফল পায়, আপনি আমি সুফল পায়, সেইজন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জাবিউল্লাহ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, সহপ্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবীবা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু প্রমুখ। 

এ কর্মশালার দ্বিতীয়ার্ধে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কর্মশালায় যশোর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির সঙ্গে ছাত্রদের ঝগড়া ও দরকষাকষি হচ্ছে: মান্না
  • বিএনপির সঙ্গে ছাত্রদের ‘ঝগড়া’ হচ্ছে, ‘দরকষাকষি’ হচ্ছে: মান্না
  • গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার: তারেক রহমান