গাজা গণহত্যার অন্ধকারতম অধ্যায় ‘জ্ঞানহত্যা’
Published: 14th, January 2025 GMT
দিন যত গড়াচ্ছে, তত স্পষ্ট হচ্ছে– গাজায় ইসরায়েলি হামলা আর দশটা যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো নয়। হলোকাস্টের সামষ্টিক অপরাধবোধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পাশ্চাত্যের মানুষ ইসরায়েলের প্রতিটি সংকটে এতদিন জোরালো সমর্থন দিয়ে এসেছে। গাজায় নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে বদলাতে শুরু করেছে পাশ্চাত্যের জনমত। গত ৫ জানুয়ারি আমেরিকান হিস্টোরিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সভায় গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব ৪২৮-৮৮ ভোটে পাস হয়েছে। খোদ নিউইয়র্ক টাইমস ঘটনাকে ইসরায়েলি হামলা ঘিরে চলমান সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে নতুন অধ্যায় বলে আখ্যায়িত করেছে। কেননা, এর মধ্য দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিন ইতিহাসবিদ বিশেষত তরুণ প্রজন্ম ফিলিস্তিন ইস্যুতে পাশ্চাত্যে দীর্ঘকাল প্রচলিত বয়ান প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজার শিক্ষা অবকাঠামো, আর্কাইভ ও লাইব্রেরিগুলোর সিংহভাগ ধ্বংস আসলে ‘স্কলাসটিসাইড’ বা পরিকল্পিত জ্ঞানহত্যা। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারবারা ওয়েনস্টাইন বলেছেন, এই প্রস্তাব গাজাবাসীর স্মৃতি মুছে ফেলার প্রতিবাদ। ইতিহাসবিদদের কাছে কোনো জনগোষ্ঠীর স্মৃতি মুছে দেওয়া মানে সেই জনগোষ্ঠীকেই নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। কোনো জনপদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী হত্যা এবং শিক্ষা-সংস্কৃতির অবকাঠামো ধ্বংস করা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে সেই জনপদের স্মৃতি, ইতিহাস, জ্ঞান, আত্মপরিচয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সঞ্চারিত করার উপায় থাকে না। এটাকেই বলা হয় স্কলাসটিসাইড বা জ্ঞানহত্যা। ২০০৮ সালে গাজার স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জ্ঞানচর্চার সঙ্গে সম্পর্কিত ভবনগুলোতে ইসরায়েলের হামলার বিবরণ দিতে গিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কারমা নাবলুসি শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। তবে সাম্প্রতিক ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা অনেক বেশি।
ইসরায়েল যে গাজায় ‘স্কলাসটিসাইড’ চালাচ্ছে– এ অভিযোগ তুলে গত বছরের এপ্রিল মাসে জাতিসংঘও এক রিপোর্টে বলে, গাজার ৮০ শতাংশ স্কুল, ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব এবং অসংখ্য মহাফেজখানা, সাংস্কৃতিক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে আগামীতে ফিলিস্তিনের ইতিহাসের ওপ গবেষণার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের তিন মাস পর জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা জানিয়েছিল, ফিলিস্তিনে তাদের ২৮৮টি স্কুলের মধ্যে ১৮৮টি ইতোমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নির্ধারিত ‘সেফ জোন’-এ অবস্থিত স্কুলগুলোও রেহাই পায়নি। জাতিসংঘের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাই বলা হয়, এসব বিচ্ছিন্ন হামলা নয়; বরং ফিলিস্তিনি সমাজের ভিত্তি তছনছ করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত সহিংসতা।
ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় ১০ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ও পাঁচ শতাধিক শিক্ষক নিহত হয়েছেন। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানে গত বছর ৮ জুন বলা হয়, পিএলও-ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের যেভাবে ইসরায়েল হত্যা করত, গাজার শিক্ষক-গবেষকদের একাংশকেও তেমনিভাবে হত্যা করেছে।
২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর যুদ্ধের প্রথম দিনেই ইসরায়েলি বিমানবাহিনী বোমাবর্ষণে গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় গুঁড়িয়ে দেয়। পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হওয়া ১৯৫টি পাঠাগারের মধ্যে গাজার কেন্দ্রীয় আর্কাইভও রয়েছে, যেখানে ১৫০ বছরের ইতিহাস সংরক্ষিত ছিল। আল-ইসরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত তিন হাজার প্রাচীন পুরাকীর্তি ইসরায়েলি সেনারা লুট করে। ৭০ দিন আর্মি ব্যারাক হিসেবে ব্যবহারের পর ইসরায়েলি সৈন্যরা আল-ইসরা বিশ্ববিদ্যালয় গুঁড়িয়ে দেয়।
২০২৪ সালের মে মাসে গাজার অন্যতম সমৃদ্ধ গ্রন্থশালা আল-আকসা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে ইসরায়েলি সৈন্যরা আগুন ধরিয়ে দেয়। বই পোড়ানোর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করে। কিছুদিন পর গাজার আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময় ধারণকৃত ভিডিওতে ইসরায়েলি মাস্টার সার্জেন্ট উদি বেন তোরাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা এখানে নতুন সেমিস্টার চালু করব, যা কখনও শুরু হবে না।’
ইসরায়েল বলছে, স্কুলগুলোতে হামাস আশ্রয় নেওয়ার কারণে তারা হামলা করতে বাধ্য হয়েছে। যদিও এই দাবির সপক্ষে আইডিএফ কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। বিমান হামলা থেকে প্রাণ রক্ষার জন্য গাজাবাসী এসব স্কুলে আশ্রয় নিয়ে থাকে। যেমন আল-তাবাইন স্কুলে ২৪শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। আগস্ট মাসে নির্বিচার বোমাবর্ষণে শতাধিক আশ্রয়প্রার্থী প্রাণ হারায়।
ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষক ও গবেষকদের বাসস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। যেমন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি ও অধ্যাপক রিফাত আলারিরকে সপরিবারে হত্যা করার আগে তাঁকে ফোনে এক ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা জানান, তিনি কোন স্কুলে অবস্থান করছেন সেটা তারা চিহ্নিত করেছেন এবং রওনা হয়েছেন। রিফাত আলারির অপরাধ, তাঁর কবিতা ফিলিস্তিনিদের বঞ্চনার বিবরণ বহির্বিশ্বে পৌঁছে দিচ্ছিল।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। এ পর্যন্ত আইডিএফ ১০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্স, কামাল আদওয়ান হাসপাতাল এবং আল-আওদা হাসপাতালের পরিচালকরা রয়েছেন। আর ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলি হামলার শিকার একজন চিকিৎসকের অন্তিম বার্তা পড়ে শোনানোর সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর।
মাহমুদ আবু নুজাইলা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের চিকিৎসক। আল-আওদা হাসপাতালে সার্জারির পরিকল্পনা লেখার জন্য দেয়ালে টাঙানো সাদা বোর্ডে মাহমুদ লিখে রেখেছিলেন: ‘শেষ পর্যন্ত যে টিকে থাকবে, সে কাহিনিটা শোনাবে। আমাদের পক্ষে যা সম্ভব ছিল, আমরা করেছি। আমাদের মনে রেখো।’ আরও দু’জন চিকিৎসকের সঙ্গে হাসপাতালেই নিহত হন মাহমুদ। গাজার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অবকাঠামোর ওপর ধারাবাহিক হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি পেশাজীবীদের বার্তা দিচ্ছে: গাজায় তোমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই; পালাও।
গাজার ইতিহাস-ঐতিহ্য মুছে ফেলার অপচেষ্টা মূলত ঔপনিবেশিক প্রকল্পেরই ধারাবাহিকতা। ইউরোপ যেখানেই উপনিবেশ গড়েছে, প্রথম সুযোগেই স্থানীয় জনগোষ্ঠীর গৌরবের স্মৃতিচিহ্ন পদ্ধতি অনুসরণে ধ্বংস করেছে। কেননা, শিকড়-বিচ্ছিন্ন জাতিকে বিভক্ত ও নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ। শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত মানুষ অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে পারে না। তবে দীর্ঘ ৭৫ বছর ঔপনিবেশিক নিপীড়ন চালিয়েও ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা দমনে ব্যর্থ।
শুধু গাজাতেই নয়, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমেও ইসরায়েল জ্ঞানহত্যা চালাচ্ছে। কোনো জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু করে ফেলার ক্ষতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যার শিকার বাঙালি ভালোভাবেই জানে। কিন্তু বাঙালির অগ্রযাত্রা কি রোধ করা গেছে?
বনি ইসরায়েলের ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে নবজাতক প্রতিটি ছেলেশিশুকে হত্যা করেও ফেরাউন কি মুসার উত্থান আটকাতে পেরেছিল? দাসত্বের বেড়ি ছিন্ন করে বনি ইসরায়েল কি মুক্তির সোপানতলে পৌঁছেনি? দুনিয়ার উদ্দেশে গাজার শিক্ষাবিদদের লেখা খোলা চিঠিতে সেই দৃঢ়তাই ফুটে উঠেছে। তারা লিখেছেন: ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমরা তাঁবু থেকে গড়ে তুলেছিলাম। আমাদের শুভানুধ্যায়ীদের সমর্থনে আমরা আবার তাঁবু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনর্নির্মাণ করব।’
গাজা গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক পরিসরে স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন একদিকে যেমন বাড়ছে, ইসরায়েলের নৈতিক অন্তঃসারশূন্যতা স্পষ্টতর হচ্ছে। হলোকাস্টের ওপর নির্মিত সিনেমার গলায় গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার ঝুলিয়েও খোদ পাশ্চাত্যে ইসরায়েলের প্রতি ধিক্কারের আওয়াজ ধামাচাপা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
রেজওয়ানুর রহমান কৌশিক:
লেখক ও গবেষক
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনসহ চার দফা দাবি গণঅধিকার পরিষদের
সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে ছাত্র উপদেষ্টাসহ সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় নাগরিক পার্টি সংশ্লিষ্ট ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে দেশের চলমান জাতীয় সংকট ও সামগ্রিক পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ।
শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর বিজয়নগরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে যেসব দাবি তুলে ধরা হয় তা হলো-জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুর্নগঠন। আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং শহীদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন। গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা।
আরো পড়ুন:
পাগলেও ‘মুজিব কোট’ নিতে চায় না: নুর
৫ মাসের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে: নুর
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
তিনি বলেন, “ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড় দশকের ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হলেও দেশি-বিদেশি অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের কারণে সেটি হয়নি। একটি নির্দিষ্ট বলয়কেন্দ্রীক সরকার গঠিত হয়েছে। যার ফলে গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছিলো আজ তাতে ফাটল ধরেছে, বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। যা এই মুহূর্তে জাতির জন্য কোনভাবেই কাম্য ছিলো না। এমতাবস্থায় সরকারের থাকা ৩ ছাত্র উপদেষ্টাদের মধ্যে ১ জন পদত্যাগ করে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে।”
তিনি বলেন, “তারুণ্যের রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদ রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণকে সব সময় উৎসাহিত করে, নতুন দলকে স্বাগত জানায়। তবে গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গুটিকয়েক ছাত্রনেতা সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় অযাচিত হস্তক্ষেপে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জনগণের মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। যেহেতু আন্দোলনের পরিচিত মুখ থেকে সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে সেহেতু সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ও জনগণসহ রাজনৈতিক নেতাদের আস্থা ধরে রাখতে সরকারে থাকা অন্য দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী সব ছাত্রদের পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি।”
“আমরা বার বার বলে আসছি ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা গণঅভ্যুত্থানের সরকারের ব্যর্থতা জাতিকে নতুন বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে গত ৬ মাসে গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের দুর্বলতায় গণহত্যাকারীদের পুনর্বাসন হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ জনগণের নিরাপত্তা ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়েও সংকট তৈরি হচ্ছে”।
গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক নতুন রাজনীতি ও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তার বাস্তবায়নে রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কার জরুরি মন্তব্য করে নুর বলেন, “আন্দোলনকেন্দ্রিক সেন্টিমিটারের জায়গায় থেকেও ছাত্রনেতারা যদিও পুরানো পথেই হাঁটে সেটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য গত ৬ মাস সেটিই অবলোকন করা গেছে। আন্দোলনকেন্দ্রীক পরিচিত ছাত্রনেতাদের তদবির, নিয়োগ, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অসংখ্য ঘটনা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।এমনকি গতকালকের নতুন আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানেও জেলা প্রশাসকের নোটিশে ঢাকার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মতো বিষয় দেখা গেছে, গাড়ি সরবরাহে মালিক সমিতি ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বা জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো একক সংগঠন বা নেতাদের দ্বারা সংগঠিত হয়নি দাবি করে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর বলেন, “রাজনৈতিক নেতাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপ, ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়। কাজেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী চেতনার বয়ানের মতো কোনো অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক ন্যারেটিভ তৈরি না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ফারুক হাসান, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতিমা তাসনীম, জসিম উদ্দিন আকাশ, মাহফুজুর রহমান খান, খালিদ হাসান, রবিউল হাসান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সম্পদ প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ