Samakal:
2025-01-31@13:42:56 GMT

অর্থনীতি কোন পথে?

Published: 14th, January 2025 GMT

অর্থনীতি কোন পথে?

সম্প্রতি বেশ কিছু ভোগ্য ও সেবা পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টজন ও দাতাগোষ্ঠী অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশের অতি নিম্ন পর্যায়ের কর-জিডিপি অনুপাত কিংবা অপরাপর সমপর্যায়ের বা প্রতিযোগী দেশের তুলনায় আমাদের অতিনগণ্য রাজস্ব আয় বিবেচনায় করের পরিধি বাড়ানোর সব উদ্যোগের ওপর জোর দিয়ে আসছে। তবে কর বাড়ানোর কথা তাদের কেউই বলেনি। বরং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রায়ই করের হারে সামঞ্জস্য বিধানের কথা বলেছে। এমনকি ট্রেড বেজ্ড মানি লন্ডারিং বা বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ পাচার কমানোর জন্য অনেক আন্তর্জাতিক সামষ্টিক অর্থনীতির গবেষক করের হার হ্রাসের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন। অথচ আমাদের এখানে দেখছি ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ মেরে ফেলার সর্ববিধ উদ্যোগ। 

লাতিন আমেরিকা কিংবা মধ্য ইউরোপের কিছু দেশে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্ররোচনা বা সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতায় ‘হাইপার ইনফ্লেশন’ বা অতিমাত্রায় মূল্যস্ফীতির কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ওইসব দেশে অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষত ছাড়াও ব্যাপক জনঅসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। দাতাগোষ্ঠীর প্রেসক্রিপশন বাংলাদেশে কেন কাজে আসছে না বা আসবে না– এ নিয়ে অনেকেই ইতোমধ্যে বলেছেন। আমাদের এই ব্যাপক আয়বৈষম্য আর দারিদ্র্যের দেশে গরিব মানুষদের ‘বোকা’ ভাবা গুরুতর অন্যায় ছাড়াও শাসককুলের জন্য হঠাৎ শনি বয়ে নিয়ে আসতে পারে।

দুই.


বাংলাদেশে যেমন একদিকে অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে আকাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে; অন্যদিকে বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়ে সভা-সমিতির সংখ্যাও বেড়েছে। এগুলোর সম্ভবত বহুলাংশে সরকারের তরুণতর অংশের তাড়নাজাত। এটি অবশ্যই ভালো। তবে এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী অনেককেই বলতে শুনেছি, সরকারের তরুণতর অংশ লেখাপড়ায় মেধাবী ও স্মার্টদের বাচনভঙ্গি আর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের ওপর খুব বেশি জোর দেন। অনেকে কিছুটা বিহ্বলিত হয়ে ইংরেজিতে তাদের তোড়ের কথা বলছেন। বক্তৃতায় ‘সারবস্তু’ নিয়ে ভাবছেন না।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে আমাদের মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান ছিলেন গ্রিক-আমেরিকান জন ফিলমেরিডিস। তিনি ছিলেন অনেকটা ডিএনএ (ডেইলি নাম্বার অলওয়েজ)। তিনি আমাদের প্রায়ই বলতেন, ‘ডোন্ট স্পিক ইংলিশ, স্পিক নাম্বারস।’ আমরা ইদানীংকার বাংলাদেশে আবার দেখছি শুধু ইংরেজিতে ‘ভুজুং ভাজুং’ (আমাদের ক্যাডেট কলেজের পিটি-প্যারেডে হাবিলদার মেজর ওস্তাদজিরা এটি ব্যবহার করতেন) করছেন। ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়’ প্রশ্নটির উত্তরে জোর দিচ্ছেন না। বাংলা প্রবাদে আছে ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত’। আলোচ্যদের দৌড়ও কেন জানি শুধু লিংকডইন পোস্টের বাইরে যেতে পারছে না। 

মোটেও আশ্চর্য হবো না, আলোচ্যরা যদি শিগগিরই বিদেশে অযথা বিনিয়োগ সম্মেলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আমি আপাতত বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কিছুটা ক্ষ্যামা দিয়ে যারা ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করেছেন কিংবা স্থানীয় বড় ব্যবসায়ী আছেন, তাদের দিকে দৃষ্টি দিতে বলব। এতে লাভ হবে; অনেক লাভ হবে। বাংলাদেশে অনেক কষ্ট করে বিরাট একটি ব্যক্তি খাত বিকাশ লাভ করেছে। যে কোনো জাতীয়তাবাদী শক্তির উচিত নীতি-পরিবেশ উন্নত করে সত্যিকার অর্থে তাদের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে দেওয়া।

তিন.
বড়দের বেশির ভাগ যদিও নয়; সরকারের তরুণতর অংশের অনেকেই অনেকটা দাম্ভিকতায় সবজান্তা ভাব করছেন। প্রায় সব বিষয়ে যেন ‘হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল’। এটি মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। একেকজন নির্দিষ্ট নিজ নিজ দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করলেই অধিকাংশের জন্য মঙ্গল হবে। যা সবার মঙ্গল তা কোনো একজনের একক দায়িত্ব হতে পারে না। কেউ চেষ্টা করলেও তিনি ব্যর্থ হবেন– ইতিহাস বলে । হয়তো বাতির নিচেই থেকে যাবে অন্ধকার। তারা যদি জনকল্যাণে ব্রতী না হয়ে নিজের খ্যাতি বা সুগন্ধ ছড়ানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে সাধারণ মানুষ আরও পিছিয়ে পড়বে।

চার.
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকে অনিয়ম খুঁজে বের করার জন্য কয়েকটি আন্তর্জাতিক হিসাব ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, তারা অতীতের মতো কিছু ‘টায়ার্ড’ হয়ে ‘রিটায়ার্ড’ হওয়া সরকারি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে এ জন্য বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। অতীতে এসব তদন্ত কমিটি ‘বিরাগ’ কিংবা ‘অনুরাগ’–এর বশবর্তী না হয়ে কোনো কাজ করতে পারেনি কিংবা তাদের হয়তো বিশেষ বিশেষ বিষয়ে সক্ষমতা বা জ্ঞানেরও অভাব ছিল। এখন থেকে আমাদের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) উচিত স্থানীয় হিসাব প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ফরেনসিক অডিটে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উৎসাহিত বা প্রণোদিত করা।

পাঁচ
নতুন সরকারের সময় অনেক বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আপদে পড়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা হয়তো সংগত কারণেই হয় জেলে গেছেন কিংবা বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে সমস্যায় পড়েছে তাদের হাজার হাজার কর্মী, জোগানদার, ঋণদাতা ব্যাংক আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে তাদের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী। এতে কর্মীদের মধ্যে যেমন ‘প্যানিক’ সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছেও ভুল বার্তা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রকদের অনেক বুঝে-শুনে এগোতে হবে। জোর করে যেনতেন প্রশাসক বা স্বতন্ত্র পরিচালক বসিয়ে দিলেই হবে না; তাদের অতীতে সমপর্যায়ের কাজের দক্ষতা বা ‘কোর কম্পিটেন্স’ বিবেচনায় নিতে হবে। কিছুতেই ‘বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল’ বা ব্যবসায়ের চলতি ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।
তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রচলিত বিধি-নিষেধ আবার খতিয়ে দেখতে হবে। বিবিধ প্রচলিত চুক্তির ব্যত্যয় ঘটছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। বিশ্বায়নের এই যুগে কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে ‘উট পাখি’তুল্য ব্যবহার মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। সব দেশি-বিদেশি অংশীজনকে সমঝোতায় নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। বন্ধ ব্যাংকের একটি ট্যাগলাইন আমার অনেক মনে ধরেছে– ‘সবাকার ভালা, আপনার ভালা’।

মামুন রশীদ: অর্থনীতি বিশ্লেষক 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের আগেই বিচার করতে হবে: সাদ্দাম

ফ্যাসিস্ট সরকারের গুম, খুন, দুর্নীতিসহ রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে গণমিছিল ক‌রে‌ছে ছাত্রশিবির।

রাজধানী‌তে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে জুমার নামাজের পর গণমিছিল শুরু হয়। বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগে গিয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম।

মি‌ছিল শে‌ষে শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম ব‌লেন,  “জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও যারা বাংলাদেশের মানচিত্রকে কলুসিত করেছে, বাকশাল কায়েম করে এদেশকে ভঙ্গুর দেশে পরিণত করেছিল, জুলাই আন্দোলনে যাদের হাতে নির্বিচারে সাধারণ ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন, সেই পতিত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচরি সরকারের বিচার হতে দেখিনি। আমরা বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা লক্ষ্য করছি। আমরা হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই, এই বাংলার মাটিতে তাদের বিচার করেই পরবর্তী নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। নির্বাচনের আগেই পতিত স্বৈরাচারের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কিছু রাজনৈতিক দল এই দাবিতে সরব না থেকে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও দখলদারিতে লিপ্ত হয়েছে।”

আরো পড়ুন:

দনিয়া কলেজের সামনে প্রকৌশলীকে কুপিয়ে হত্যা

‘নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হবে বিশ্বে রোল মডেল’

উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম, মানবাধিকার সম্পাদক সিফাত আলম, ঢাকা মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নেতারা।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ