সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে জানুয়ারিতে। বছরের শুরুতে তেমনটাই অনুভূত হয়েছিল। শীতের সেই তীব্রতা ছিল সপ্তাহ খানেক। ধীরে ধীরে হিম কমে এখন একেবারে গা-সওয়া হয়ে গেছে। রোদও আছে বেশ। শীত কি তাহলে বিদায় বলছে? বাংলা ঋতুচক্রে পৌষ বিদায় নিয়েছে গতকাল। তবে এখনও দিনে গরম লাগছে। মাঝেমধ্যে ঘামও ঝরছে। আজ থেকে শুরু হয়েছে মাঘ। এখন দেখার বিষয়, ‘মাঘের শীতে বাঘ পালানোর দশা’ হয় কিনা।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীত এখনও শেষ হয়নি। জানুয়ারি অর্ধেক পড়ে আছে। এখন দেশের বিভিন্ন স্থানের আকাশে মেঘ আছে। মেঘ কেটে গেলে শীত বাড়ে। তাই শীতের তীব্রতা বাড়ারও সম্ভাবনা রয়ে গেছে।
গতকাল একমাত্র পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ছিল। এ জেলায় এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৯ ডিগ্রির ঘরে নেমেছে। কনকনে ঠান্ডায় বিপাকে পড়েন নিম্নআয়ের মানুষ। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায়। সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল যশোরে, ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই অনুযায়ী গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে গেছে। তবে দেশের অন্যত্র তাপমাত্রা মোটামুটি গতকালের মতোই আছে। কিছু স্থানে বেড়েছে। গতকাল শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন সোমবার তা ছিল ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের আরেক শীতপ্রবণ এলাকা চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন এ তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নওগাঁর বদলগাছীতে গতকালের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এক দিন আগে ছিল ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতেও তাপমাত্রা খানিকটা বেড়েছে। গতকাল এ নগরীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার তা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত ডিসেম্বরের একেবারে শেষ দিকে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। কয়েক দিন থাকার পর তা আবার কমে আসে। মাঝে দিনতিনেক ঘন কুয়াশাও ছিল। এরপর শীত কমেছে আবার বেড়েছে। তিন দিন মাঝারি থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর গত রোববার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এ বছর এখন পর্যন্ত দেশের কোনো স্থানেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়নি। মাঝে এক দিন শুধু তেঁতুলিয়ায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে।
এ বছর দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেশি থাকার জন্যই এমনটা হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকাল রেকর্ড করা হয়েছিল ফেনীতে, ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় তা ২৯ দশমিক ১ ডিগ্রি। শীতের দিন অনুযায়ী সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আসলে কিছুটা বেশিই বলা যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, আজ থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে। তবে দু’দিন পর তাপমাত্রা আবার বাড়তে পারে। আবার শনিবার থেকে তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। তখন তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা কম। ২০ জানুয়ারির পর আবার একটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবার শীতের তীব্রতা কমে গেছে। দেশের অভ্যন্তরে শিল্পায়ন বেড়েছে। এসব কারণে আবহাওয়ায় অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে।
শীতকাল, অথচ শীতের তীব্রতা নেই– এমন প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কারণ বললেন আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ। তিনি বলেন, সাধারণত জানুয়ারি আমাদের দেশের সবচেয়ে শীতলতম মাস। এই সময়ে এক থেকে তিনটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়, এবার ব্যতিক্রম। এবার মাত্র একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। ডিসেম্বরে তাপমাত্রা গতবারের থেকে অনেক বেশি ছিল। সাধারণত নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় হয়। ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় না। এ বছর ব্যতিক্রম দেখা গেছে।
এদিকে দিন দিন শীতহীন নগরীতে পরিণত হচ্ছে ঢাকা। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ৯ বছরে ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে মাত্র একবার। আর আশপাশের এলাকা থেকে মূল ঢাকায় তাপমাত্রা থাকছে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। অর্থাৎ সাভার বা টাঙ্গাইলের চেয়ে ঢাকায় শীত পড়ছে কম। আমাদের গবেষণায় দেখেছি, দিনে ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহের তাপমাত্রা আর হচ্ছে না। রাতে যে শীত নামে, তা শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে নামছে না। গত দুই যুগে ঢাকার সবুজ এলাকা ও জলাভূমি কমে গিয়ে বেশির ভাগ এলাকা কংক্রিটে ঢেকে গেছে। ফলে সেখানে দিনের বেলা সূর্যের তাপ আসার পর তা রাতেও জমে থাকছে। ফলে রাতেও তাপমাত্রা খুব বেশি কমছে না। গত ৩০ বছরে ঢাকার আবহাওয়ার গড় তাপমাত্রার রেকর্ড বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ার কথা। তবে গত ৯ বছরে ঢাকার গড় তাপমাত্রা নিলে তা কোনোভাবেই ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। ব্যতিক্রম ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি। ওই দিন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামে অনশনে বৈষম্যবিরোধীরা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জড়িত সবার ফাঁসির দাবিতে অনশন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ অনশন শুরু করেন তারা। পরে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ৮টা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনশন চলছিল। এর আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিপ্লবের ছয়মাস পূরণ হতে যাচ্ছে। আমরা এখনও এ সরকারের কাছে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। আমাদের ভাইদের রক্ত এখনও রাজপথে লেগে আছে। আমি এখানে বসলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে না আমরা এখান থেকে উঠব না। আমাদের লড়াই চলছে, চলবে। আমরা আমাদের আমরণ অনশন চালিয়ে যাব। আমরা বিচার চাই। বিচার ছাড়া কোনো কথা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকার আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় বসেছে। ইউনূস সরকার কি করে। খুনি বাইরের দেশে বসে আছে। তাদের ধরে এনে ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে হবে। এটাই আমাদের শেষ কথা।’
রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে যেভাবে ফ্যাসিবাদী কাঠামো গড়ে উঠেছিল, সেটাকে ভেঙে দিয়ে খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে নেমে এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আমরা ন্যূনতম সংস্কার ও বিচার পাইনি। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আমাদের দুই হাজারের অধিক ভাই জীবন দিয়েছে। তারা রাজপথে সাহসিকতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।’
রাসেল আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এখনও আমাদের খুনি হাসিনা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের বিচারের দাবিতে রাজপথে নামতে হয়। আমাদের এ মুক্ত বাতাসে এখনও লাশের গন্ধ ভেসে বেড়ায়। বারবার আমাদের তাদের বিচারের দাবিতে আওয়াজ তুলতে হচ্ছে। এ অন্তর্বর্তী সরকারকে সেসব খুনিদের বিচার করার জন্যই ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। আজও ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণ্ডাবাহিনী বীর চট্টলার বুকে মিছিল করেছে। খুনি হাসিনাসহ আমাদের ভাইদের যারা খুন করেছে, তাদের বিচার ও ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে এখন থেকেই আমরণ অনশন পালন করব।’
আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘এখনো তারা সড়কে আছেন। তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।’
অনশনকারীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রুত বিচার আইনে বিভাগীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও উস্কানিদাতাদের গ্রেপ্তার-বিচার করা, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে বিচার করা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা, সব হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, অপরাধ ও নির্যাতনের বিচার করা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, আওয়ামী লীগ নেতাদের অবৈধভাবে অর্জিত সব অর্থ ও সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজেয়াপ্ত করা, বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জীবনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে গ্রহণ করতে হবে ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন করাসহ রাষ্ট্রের যাবতীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারের রূপরেখা প্রদান করতে হবে।