অনেকেই মনে করেন মন খারাপ হলে তা থেকে বের হওয়া কঠিন! অথচ মন খারাপ করার এ সময়টা কাটিয়ে উঠতে খুব বড় কিছু করার দরকার নেই কারও। শুধু ছোট কিছু অভ্যাসই আপনার বিষাদমাখা মনকে এক নিমেষেই ভালো করে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওয়েবসাইটে এমন কিছু সহজ উপায় জানানো হয়েছে, যেগুলোর নিয়মিত চর্চায় আমাদের মনের স্বাস্থ্য অনেকটাই ভালো থাকবে।
কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটান: কাছের মানুষ বা প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো সময়টুকু আমাদের অন্যরকম এক মানসিক শান্তি এনে দেয়। খেয়াল করে দেখবেন, কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটালে মন খারাপের সময় কীভাবে কেটে যায় আপনি টেরও পান না।
আপনি যা করতে পারেন: প্রতিদিন পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান। একসঙ্গে খাবার খাওয়া বা গল্প করা হতে পারে ভালো শুরু। অনেকদিন দেখা হয়নি এমন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করুন।
ঘরে বসে টিভি না দেখে পরিবারের সঙ্গে বোর্ড গেম খেলুন বা পুরোনো গল্পগুলোর স্মৃতিচারণ করুন।
সহকর্মীর সঙ্গে একসঙ্গে লাঞ্চ করুন, এতে বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।
সময় পেলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করুন, এতে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে এবং মানসিক প্রশান্তি আসবে।
এড়িয়ে চলুন: শুধু ফোনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যাট করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন না। সামনাসামনি দেখা করার আনন্দ অন্যরকম।
শরীরচর্চা করুন: শরীরচর্চা শুধু ওজন কমানোর জন্য নয়, এটি মনের ওপরেও অসাধারণ প্রভাব ফেলে। ব্যায়াম করলে শরীরের পাশাপাশি মনও প্রশান্ত হয়।
আপনি যা করতে পারেন: প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো বা নাচ করুন; যা আপনার মনকে উজ্জীবিত বা প্রফুল্ল করবে।
যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচ করে শরীরের নমনীয়তা বাড়ান। ব্যায়ামকে কষ্টের কাজ মনে না করে এমন কিছু করুন যা আনন্দ দেয়– যেমন সাইকেল চালানো বা সুইমিং।
এড়িয়ে চলুন: জিমে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে হবে– এমন চিন্তা বাদ দিন; যা করতে ভালো লাগে সেটিই করুন।
নতুন কিছু শিখুন: নতুন কিছু শেখা মানে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা। এতে শুধু আত্মবিশ্বাসই বাড়ে না, বরং জীবনে অর্থপূর্ণ অনুভূতি আসে।
আপনি যা করতে পারেন: নতুন কোনো খাবার রান্না করতে শিখুন।
কর্মক্ষেত্রে নতুন দায়িত্ব নিন বা কোনো সহকর্মীকে মেন্টরিং করুন।
ডিআইওয়াই প্রকল্পে হাত দিন– যেমন পুরোনো বাইক ঠিক করা বা ঘরের গেট রং করা।
নতুন ভাষা শিখুন বা পছন্দের কোনো অনলাইন কোর্সে যোগ দিন। ছবি আঁকা, ব্লগ লেখা বা গিটার বাজানোর মতো নতুন শখ গড়ে তুলুন।
এড়িয়ে চলুন: শুধু সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি অর্জনের দিকে মনোযোগ দেবেন না। নতুন কিছু শেখার আনন্দটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যের জন্য কিছু করুন: অন্যের জন্য কিছু করা আমাদের ভেতর আনন্দের অনুভূতি জাগায়। এটি মনের মধ্যে নিখাদ ভালোবাসা ও সহমর্মিতাবোধ তৈরি করে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি যা করতে পারেন: কাউকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান। পরিচিতজনের খোঁজ নিন এবং মন দিয়ে তার কথা শুনুন। আত্মীয় বা বন্ধু যাদের সহযোগিতা প্রয়োজন তাদের পাশে দাঁড়ান।
বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দিন; জীবন উপভোগ করুন: আমরা প্রায়ই ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত থাকি বা অতীতের ভুল নিয়ে আফসোস করি। এসব চিন্তা না করে বর্তমানকে গুরুত্ব দিন।
আপনি যা করতে পারেন: প্রতিদিনের ছোট ছোট আনন্দ উপভোগ করুন– সকালে সূর্যোদয় দেখা বা বিকেলে পাখির ডাক শোনা।
খাওয়ার সময় ফোন দূরে রেখে খাবারের স্বাদ উপভোগ করুন। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন এবং চারপাশের ছোট জিনিসগুলো খেয়াল করুন। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সেই মাহুত বললেন, ‘হাতির কাছে গেলে আমার কইলজা ফাইটা যায়’
গত বছর ঈদুল ফিতরে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানার মাহুত আজাদ আলী ও তাঁর ছেলে জাহিদ হাসান একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। পরে একসঙ্গে ভাত খান। খাওয়া শেষে নিজেই ছেলেকে নিয়ে হাতির খাঁচায় যান আজাদ। সেখানে রাজা বাহাদুর নামের হাতির আক্রমণে ছেলের মৃত্যু হয়।
আজ জাহিদ হাসানের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় গ্রামের বাড়িতে মৃত্যুবার্ষিকীতে ছোট পরিসরে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মাহুত আজাদ আলীর সঙ্গে আজ মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে জানান, ছেলের মৃত্যুর পর থেকে চিড়িয়াখানার হাতি শাখায় কাজ করতে ইচ্ছে করে না তাঁর। তাই অন্য শাখায় স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছেন। তবে কাজ হচ্ছে না।
আজাদ আলী বলেন, ‘প্রতিদিন সকালবেলা আমি হাতির কাছে গেলে আমার কইলজা (কলিজা) ফাইটা টুকরা টুকরা হই যায় ভাই। যে হাতিডা আমার ছেলেরে আছাড়িয়া মারছে, এই জিনিসটা ব্যবহার করিয়া, এই জিনিস পালিয়া আমি ভাত খাইমু ভাই। আল্লায় কি মানুষরে দুনিয়ায় একটাই কর্ম দিছে, আর কোনো কর্ম দেয় নাই?’
অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে আজাদ আলী চিড়িয়াখানায় কর্মরত আছেন। তাঁর দুই-আড়াই লাখ টাকা ঋণ আছে বলে জানান। হাতি শাখায় কাজ করতে ইচ্ছে না করলেও ঋণের কারণে চাকরিও ছাড়তে পারছেন না বলে জানান তিনি।
চিড়িয়াখানায় আগে তিনটি হাতি ছিল। চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে রাজধানীর হাতিরঝিলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দুটি হাতি জব্দ করে র্যাব। সেই হাতি দুটি দিয়ে চাঁদাবাজি করা হতো। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জব্দের পর সেই হাতি দুটি চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসেন আজাদ।
সেই হাতি দুটির নাম রাজা বাহাদুর ও পান্না বাহাদুর। এর মধ্যে গত বছর ঈদুল ফিতরের দিন রাজা বাহাদুরের আক্রমণে জাহিদ হাসানের মৃত্যু হয়।
আজাদ আলীর অভিযোগ, অতিরিক্ত দুটি হাতি চিড়িয়াখানায় আনা হলেও তার জন্য পর্যাপ্ত জনবল ছিল না। ফলে ছেলের মৃত্যুর পর থেকে হাতি দুটি সরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানান তিনি।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে বলেছে, মাহুতের ছেলের মৃত্যুর পর হাতি দুটি মূল মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া যায় কি না, সেই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চেয়েছিল তারা। মন্ত্রণালয় বলেছিল, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় রায়ের আগে হস্তান্তর করার সুযোগ নেই।
আজাদ আলীকে অন্য শাখায় স্থানান্তর প্রসঙ্গে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, আজাদ অন্য শাখায় যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তবে তিনি প্রশিক্ষিত মাহুত। তাঁর কাজ অন্য কেউ করতে পারে না। তাই তাঁকে অন্য শাখায় দিলে যে শূন্যতা তৈরি হবে, সেই জায়গা পূরণ করা যাচ্ছে না।
তবে আজাদ আলীর দায়িত্বের জায়গায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানান রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আজাদের ছেলেকে যে হাতি মেরেছে, সেটির কাছে না গিয়ে অন্য হাতির পরিচর্যা করতে বলা হয়েছে তাঁকে।
যে দুটি হাতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চিড়িয়াখানার কাছে এসেছে, সেগুলো হস্তান্তর করা গেলেও চাপ কমে যাবে। তখন আজাদ আলীকে অন্য জায়গায় দেওয়া সম্ভব হবে বলেও জানান জাতীয় চিড়িয়াখানার এই পরিচালক।
দুর্ঘটনা হলে ক্ষতিপূরণ দেয় না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষজাতীয় চিড়িয়াখানায় এর আগেও এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০২৩ সালের ৮ জুন হায়েনার কামড়ে মো. সাইফ আহমেদ নামে এক শিশুর ডান হাতের কনুই পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাইফ যখন দুর্ঘটনার শিকার হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল দুই বছর তিন মাস। এখন তার বয়স চারের কোঠায়। আজ সে তার বাবা সুমন মিয়ার সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছে।
সুমন মিয়া আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তিনি ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। ছেলে যখন আক্রান্ত হয়, তখন তিনি পরিবার নিয়ে গাজীপুর থাকতেন। সেখানকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সংসার ভালোভাবে না চলায় মাসখানেক আগে রংপুরের পীরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। সেখানে এসে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন।
আরও পড়ুনজাতীয় চিড়িয়াখানায় হাতির আক্রমণে মাহুতের ছেলের মৃত্যু১১ এপ্রিল ২০২৪সুমন মিয়া বলেন, একদিকে তাঁর সংসার ঠিকমতো চলে না, অন্যদিকে ছেলে প্রতিবন্ধী হয়ে আছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েও পাননি।
মাহুত আজাদ আলী জানান, তিনিও চিড়িয়াখানার কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে পাননি। জাহিদ তাঁর একমাত্র ছেলেসন্তান ছিল। এখন তাঁর দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। এ অবস্থায় পরিবারের সুরক্ষার স্বার্থে তাঁর চাকরি রাজস্ব খাতে নেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলেন তিনি। তা-ও পূরণ হয়নি।
এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে বলেছে, চিড়িয়াখানায় কাউকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো বিধান বা তহবিল নেই। এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঝুঁকি ভাতা দেওয়ার বিধানও নেই। সে কারণেই কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সহযোগিতা করার সুযোগ থাকে না।
আরও পড়ুনচিড়িয়াখানায় হাতির আক্রমণে মাহুতের ছেলের মৃত্যু, কী ঘটেছিল তখন১২ এপ্রিল ২০২৪