সানোড়ার মেলা শুধু মেলা নয়, যেন ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা এক জীবন্ত কাব্য। ধামরাইয়ের সানোড়া ইউনিয়নের বটতলায় এ মেলাকে ঘিরে জেগে উঠেছে এক রঙিন স্বপ্নে। এ স্বপ্ন পৌষ সংক্রান্তির, এ স্বপ্ন ঐতিহ্যের।

মকর সংক্রান্তির প্রাচীন আয়োজনের অংশ হিসেবে বটতলার এ মেলা বহু বছর ধরে বয়ে আনে বাঙালি ঐতিহ্যের সুর। এদিন আশেপাশের দু’চার গ্রামের মানুষ বের হয় শুধু কেনাকাটার উদ্দেশ্যে নয়, মাটির গন্ধ মাখা এক চিরায়ত ঐতিহ্যের টানে। 

প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিন সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়। সকাল থেকেই বটতলার বিশাল বটগাছগুলোর ছায়ায় জমে ওঠে মেলা। মেলার প্রধান আকর্ষণ গ্রামীণ হস্তশিল্পের পসরা। কামার-কুমারদের তৈরি দা, বটি, মাটির পাত্র, বাঁশ-বেতের সামগ্রীসহ সবকিছুই পাওয়া যায় এখানে।

এছাড়া খই, বিন্নি, বাতাসা, চিনির খেলনা, ভাজা পেঁয়াজু, চানাচুর, বাদামসহ নানা পিঠা-পুলির স্টল মেলায় আগত ভোজনরসিকদের তৃপ্ত করে। 

বটতলার এ মেলা এক দিনের হলেও, এর প্রস্তুতি যেন সপ্তাহব্যাপী। সকালের প্রথম আলো ফোটার আগে থেকেই আশপাশের গ্রামগুলো থেকে মানুষে ভরে যায় মেলার চৌহদ্দি। কেউ আসে হেঁটে, কেউ আসে ভ্যানগাড়িতে, আর কেউ-বা সাইকেলের। ফেরার সময় সবাই কিছু না কিছু কিনে নিয়ে যায়ই।

মেলার আগের দিনই বেশিরভাগ দোকান বটতলার গাছের ছায়ায় বসে যায়। কিছু আবার মেলার দিনও বসে। এক পাশে মাটির খেলনার সারি, আরেক পাশে হরেক রকমের মিষ্টি। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে খাবারের ঘ্রাণ, যা শীতের সকালটা আরও সজীব করে তোলে। সকালবেলা অনেকেই মেলার মিষ্টি আর গরম রুটি দিয়ে নাস্তা সেরে নেন। 

এ মেলার ঐতিহ্য বেশ পুরোনো। কথিত আছে, প্রায় ৪০০ বছর আগে এ মেলার সূচনা। প্রাচীন এই বটগাছের তলায় শুরু হওয়া এ মেলা কালের বিবর্তনে আজও তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিন এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা স্থানীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৌষ সংক্রান্তির সঙ্গে বাঙালির যে মাটির টান, এ মেলা তারই উদাহরণ।

মেলার দিন এ বটের ছায়া যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে নানা আয়োজন। নাগরদোলার কড়কড় শব্দ, ঢাক ঢোলের বাজনা—সব মিলিয়ে এক প্রাণবন্ত পরিবেশনা। শিশুদের জন্য থাকে মাটির খেলনা, বাঁশের বাঁশি, রঙিন বেলুনের দোকান।

মেলায় আসা গ্রামীণ ও হস্তশিল্পের দোকান থেকে নারীরা নানা পণ্য ক্রয়ে মগ্ন থাকেন। আর পুরুষরা খুঁজে নেন কৃষি কাজে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। 

প্রতি বছর এই মেলা নতুন করে মনে করিয়ে দেয় আমাদের শিকড়ের কথা, ঐক্যের কথা, আমাদের সংস্কৃতির গভীরতা। এমন উৎসব আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে, সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও মজবুত করে।

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

পয়লা বৈশাখের পর বৈশাখী ভাতা পেলেন মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সরকারি চাকরিজীবীরা পয়লা বৈশাখের আগেই বৈশাখী ভাতা পেলেও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বিভিন্ন মাদ্রাসায় কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতার চেক ছাড় হয়েছে উৎসব শেষ হওয়ার ছয় দিন পর। পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপিত হয়েছে গত সোমবার (১৪ এপ্রিল)। আর মাদ্রাসায় কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতার চেক ছাড়া হয়েছে গতকাল রোববার (২০ এপ্রিল)।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অর্থ) কে এম শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর (মাদ্রাসা) শিক্ষক-কর্মচারীদের ২০২৫ সালের উৎসব ভাতা (বৈশাখী বোনাস) বাবদ ৪টি চেক বণ্টনকারী অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, প্রধান কার্যালয় এবং জনতা ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের স্থানীয় কার্যালয়ে ২০ এপ্রিল তারিখে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুনস্কুলে দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়াশোনা শিকেয় ওঠে১৯ এপ্রিল ২০২৫

শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০ এপ্রিল তারিখের পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে উৎসব ভাতার (বৈশাখী বোনাস) অংশ উত্তোলন করতে পারবেন।

২০১৬ সাল থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন। বেসরকারি খাতের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানও বৈশাখী ভাতা দেয়।

আরও পড়ুনএসএসসি–২০২৫ পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের শেষ মুহূর্তের করণীয়০৬ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কানের ইতিহাসে এবারই প্রথম
  • অষ্টগ্রামের বিস্তীর্ণ হাওরের বুকে ধান কাটার উৎসব
  • এবার রিশাদের ২ উইকেট ও ২ রান, রান উৎসবের ম্যাচে হেরে গেল লাহোর
  • ভেড়াডহর গ্রামে উরিগানের আসরে
  • এমপিওভুক্ত পৌনে ৫ লাখ শিক্ষকের বোনাস বাড়ছে
  • প্রথম আলোর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি উৎসব আগামী ১৫ ও ১৬ মে
  • পয়লা বৈশাখের পর বৈশাখী ভাতা পেলেন মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা
  • আরাকান আর্মির বাংলাদেশের আকাশীমা লংঘ‌নের প্রতিবাদ
  • আইইউবি থিয়েটারের আয়োজনে শেষ হলো দুই দিনের বৈশাখী নাট্যোৎসব
  • অনুপ্রবেশ করে আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে: জামায়াত