সব বিনিয়োগ সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার পরামর্শ
Published: 14th, January 2025 GMT
দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সমস্ত বিনিয়োগ প্রচার সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার পরামর্শ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) কোরিয়ান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং এবং অন্য শীর্ষস্থানীয় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ পরামর্শ দেন।
কিহাক সুং, যার দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক। বেশ কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করে দেশে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের অবস্থার উন্নতি করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, আগামী মাসের প্রথম দিকে কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের ভূমি অধিকার সমস্যা সমাধান এবং দেশে আরো বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সমস্ত বিনিয়োগ প্রচার সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার কথা।
প্রধান উপদেষ্টা সুংকে বলেন, ‘‘কোরিয়ান ইপিজেডের জমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। যা শিল্প পার্কে এফডিআইর মূল প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এটা সমাধান করা হবে।’’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমরা চাই কোরিয়ান ইপিজেড বাংলাদেশের সবার জন্য মডেল হোক। আমরা আশা করি এটি বড় বিনিয়োগে আকর্ষণ করবে এবং প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।’’
কিহাক সুং কেইপিজেডের সঙ্গে জড়িত দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘কোরিয়ান বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের জন্য দরজা খুলে দেবে। কেইপিজেড অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি মডেল।’’
ইয়ংওন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দ্রুত শিপমেন্টের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘দেশের বৃহত্তম বন্দরে ধীর গতিতে টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম মূলত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের হাই অ্যান্ড এবং ফ্যাশন পোশাকের অর্ডারের অভাবের জন্য দায়ী।’’
অধ্যাপক ইউনূস বন্দরের কার্যক্রম দক্ষ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী চট্টগ্রামকে এ অঞ্চলের শীর্ষ বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ধারাবাহিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।’’
এ ছাড়া বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির প্রধান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনকে পাঁচটি বিনিয়োগ সংস্থাকে একটি অফিসের অধীনে আনতে বলেছেন তিনি।
কিহাক সুং এবং ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ এ মতিন সমস্ত বিনিয়োগ প্রচার সংস্থাগুলোকে এক ছাতার নিচে আনার প্রয়োজনীয়তার জন্য কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য দক্ষ ওয়ান-স্টপ পরিষেবা সরবরাহ করবে।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, বিনিয়োগ প্রচারের জন্য পাঁচটি ভিন্ন সংস্থা সাম্প্রতিক অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের উত্তরাধিকার। এজেন্সিগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে বিডিএ পদক্ষেপ নিয়েছে।
সুং বলেন, ‘‘ইয়ংওন দেশে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট তৈরি করছে। যেটি প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণ দেবে।’’ অধ্যাপক ইউনূসকে তিন মাসের মধ্যে অনুষ্ঠাতব্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি।
শ্রম আইন সহজিকরণ এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে সোলার প্যানেলের জন্য নেট মিটারিং সিস্টেম চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন মতিন। তিনি বলেন, ‘‘বৈষম্যমূলক নীতির কারণে ইপিজেডে বিনিয়োগকারীরা সোলার প্যানেল আমদানিতে অন্তত ২৬ শতাংশ কর দিতে হয়। দেশ থেকে দ্রুত রপ্তানি করার জন্য সরকার চট্টগ্রাম বন্দরে গ্রিন চ্যানেল চালু করবে।’’
পোশাক জায়ান্ট ইন্ডিটেক্সের কান্ট্রি হেড জাভিয়ের কার্লোস স্যান্টনজা ওলসিনা ব্যবসায়িক সংস্কার পরিচালনা এবং বাংলাদেশে ব্যবসা করার শর্ত সহজ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি সত্যিই মুগ্ধ। নতুন বাংলাদেশ আমাদের প্রয়োজন।’’
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা পরিচালনাকারী ডিওয়ার্স্টের পরিচালক পল অ্যান্থনি ওয়ারেনও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের কৃষিখাতে ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটি
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব ফেলে এমন উদ্যোগে অর্থায়নকারী আন্তর্জাতিক তহবিল ‘পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটি’। কৃষকদের সহায়তা করতে দেশীয় প্রতিষ্ঠান আই-ফার্মারকে পাঁচ লাখ ডলারের এই সহায়তা দিচ্ছে তহবিলটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নেক্সাস ফর ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এই তহবিলের অর্থায়ন আই-ফার্মারের মাধ্যমে দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের সরাসরি উপকৃত করবে। এই তহবিল কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
এই বিনিয়োগের মাধ্যমে পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটি ২০২৪ সালে তাদের আঞ্চলিক কার্যক্রমে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার পর প্রথমবারের মতো এই খাতে প্রবেশ করল। ক্ষুদ্র কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করে তুলছে আই-ফার্মার। প্রতিষ্ঠানটি কৃষকদের উচ্চমানের কৃষি উপকরণ, আর্থিক সহায়তা, কৃষি পরামর্শ, বিমা সুবিধা ও ন্যায্য বাজার সংযোগ নিশ্চিত করছে। কৃষক, সরবরাহকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে আই-ফার্মার উৎপাদন বাড়াতে, আয় বাড়াতে ও টেকসই কৃষি চর্চা প্রসারে ভূমিকা রাখছে।
নেক্সাস ফর ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক লরা আলসেনাস বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র কৃষকেরা এখনও সহজ শর্তে অর্থ ও মানসম্মত কৃষি উপকরণ পাওয়ার জন্য নানারকম বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। আইফার্মারের উদ্ভাবনী মডেল কৃষি সরবরাহ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে এবং কৃষকদের জন্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করছে। পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটির এই বিনিয়োগের ঘোষণা তাদের প্রভাব আরও বিস্তৃত করতে এবং বাংলাদেশে আরও টেকসই ও স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
আইফার্মারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ ইফাজ বলেন, পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটির এই অর্থায়নের ঘোষণা আমাদের আরও বেশি কৃষককে সহায়তা দিতে সক্ষম করবে। এর মাধ্যমে আমরা আরও ভালো মানের কৃষি উপকরণ, সহজতর আর্থিক সহায়তা ও শক্তিশালী সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করতে পারবো, যা সরাসরি কৃষকের আয় ও জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে নেক্সাস ফর ডেভেলপমেন্ট জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গ সমতা ও দারিদ্র্য বিমোচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করা প্রভাবশালী উদ্যোগগুলোকে সহায়তা করে আসছে। সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত এই তহবিলটি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও বাংলাদেশে জলবায়ুবিষয়ক উদ্যোগগুলোর জন্য এই তহবিল আর্থিক সাহায্য প্রদান করে থাকে। এখন পর্যন্ত এই তহবিল থেকে ৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।