জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রস্তুত, আগামী বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সর্বদলীয় বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

এই ঘোষণাপত্রের খসড়া অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি, জামায়াতসহ গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল ও অংশীদারদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা মাহফুজ। অধিকাংশ বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও কিছু বিষয়ে তারা দ্বিমত-পোষণ করেছে বলে জানান তিনি।  

মাহফুজ আলম বলেন, ‘‘ঘোষণাপত্র দেওয়া নিয়ে সবাই একমত। কিন্তু ঘোষণাপত্রের ভেতরে কী কী কনটেন্ট থাকবে, সে বিষয়ে আমরা এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। ফলে আগামী বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক হবে। স্থান এখনো নির্ধারিত হয়নি। কিন্তু বৈঠকটি হবে।’’  

তিনি বলেন, ‘‘যাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন পক্ষ; এরিমধ্যে তারা বলেছে বা তাদের কাছ থেকে বক্তব্য পেয়েছি, এভাবে করা সম্ভব।’’  

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথাটি উল্লেখ করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘‘সরকার এ বিষয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে ঘোষণাপত্র দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দেয়। শিক্ষার্থীদের ঘোষণাপত্র অবলম্বনে গত ১২-১৩ দিন ধরে একটি খসড়া তৈরির চেষ্টা করেছি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। অভিমত নেওয়ার চেষ্টা করেছি। সবার সঙ্গে কথা বলা হয়ে উঠেনি।’’  

তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার বৈঠকে ঐকমত্যের মাধ্যমে দলিল প্রণীত হবে। আমরা কবে ঘোষণাপত্রটি জারি করব এবং সরকার কীভাবে ভূমিকা রাখবে, সেদিন তা স্পষ্ট করা হবে। আশা করি, বাংলাদেশের জনগণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে যে গণঅভ্যুত্থান পরিচালনা করেছে, তার প্রেক্ষাপট ও প্রত্যাশা ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হবে। সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মতামত নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটি ঘোষিত হবে।’’  

ঘোষণাপত্র নিয়ে জাতীয় পার্টির কোনো পরামর্শ নেওয়া হবে না বলে জানান উপদেষ্টা মাহফুজ। তিনি বলেন, ‘‘তাদের পরামর্শ যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয় বলে মনে করছি না। গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা হবে।’’  

তিনি বলেন, ‘‘গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি ও স্পষ্ট অবস্থান যাদের ছিল, তাদের সবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করব। তাদের প্রতিনিধি যাতে থাকে সেই চেষ্টা করব।’’  

জুলাই ঘোষণাপত্র কোন ব্যানারে আসবে এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘৩ ও ৫ আগস্ট কোনো ব্যানার ছাড়া জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিল, সেই অবস্থাটা আমরা রিক্রিয়েট করতে চাচ্ছি। আমরা আশা করি, প্রধান উপদেষ্টাসহ সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।’’  

বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহফুজ আলম বলেন, ‘‘আজ (মঙ্গলবার) এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য দিয়েছেন। মনে হয় তিনি ইতিবাচক আছেন। তবে তারা সময় নিতে পারেন। কিন্তু দুই পৃষ্ঠা বা তিন পৃষ্ঠার বিষয়ে পর্যালোচনা নিয়ে এমন সময় নিতে না হয়, যাতে অন্যদের ভেতরে উত্তেজনা বা সংশয় তৈরি হয়।’’  

তিনি বলেন, ‘‘সবাইকে সংযমে যেতে হবে। শিক্ষার্থীরা একটা ডেডলাইন দিয়েছে। এতে তো সরকার চাপ অনুভব করছে। আমরা মনে করি, তারা সব পর্যালোচনা করে আগামী পরশু আমাদের সঙ্গে বসবেন। কথা বললে স্পষ্ট হয়ে যাবে, আমরা কোথায় দাঁড়াতে চাচ্ছি; কতটুকু কাটছাঁট বা যোগ-বিয়োগ হবে। আমরা মনে করি, এটা হয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার আমরা জানতে পারব, এর ভেতরে কী আছে, কী হবে।’’  

ঘোষণাপত্র সংবিধানে যুক্ত হবে কি না, এমন প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, ‘‘ঘোষণাপত্র অবলম্বনে একটি আইনি ডকুমেন্ট তৈরি করার বিষয়টি সরকারের পর্যালোচনায় আছে। এ ঘোষণাপত্র ধরে একটি আইনি ডকুমেন্ট তৈরি করব সরকারের ন্যায্যতা ও সবকিছু মিলিয়ে। এটি অনেক আগে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জনগণের কাছ থেকে আসার আগে করতে পারছি না।’’  

তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানে যুক্ত করার বিষয়টি গণপরিষদ বা সংবিধান সংশোধন থেকে শুরু করে সবকিছুর ওপর নির্ভর করবে। জনগণ যদি আমাদের এ দায়িত্ব দেয়, তাহলে আমরা করব। আর পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে এর দায়বদ্ধতা থাকবে বলে আমরা মনে করি। আগামী নির্বাচনে যারাই নির্বাচিত হবে, তারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তি হবে এবং ঘোষণাপত্রকে ধারণ করে জনগণের কাছে যাবে।’’

ঢাকা/হাসান

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

কাতারে ড. ইউনূস: পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ

 প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেছেন, “আমরা পৃথিবীর জন্য আশার এক বাতিঘর হিসেবে দাঁড়াতে চাই।”

তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি করার সুযোগ এসেছে। এটি এমন এক চুক্তি যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, ঐতিহ্য, ন্যায়বিচার, মর্যাদা এবং সুযোগের ভিত্তিতে একটি ভবিষ্যৎ একত্রে গড়ে উঠবে।”

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কাতারের দোহায় ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলে ‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় বিশ্ববাসীর প্রতি এই আশার বার্তা শোনান প্রধান উপদেষ্টা।

আরো পড়ুন:

কাতারের আমিরের মায়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

কাতারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

ড. ইউনূস বলেন,  “আমাদের বন্ধু ও অংশীদারদের অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক চুক্তি পুনর্লিখনের জন্য, পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের ভূমিকা অন্বেষণ করতে আহ্বান জানাই, যা প্রান্তিক জনগণের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক।”

তিনি বলেন, “এটি এমন এক সামাজিক চুক্তি, যেখানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও প্রান্তিক জনগণের ক্ষমতায়ন মৌলিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তৃতায় একটি সহনশীল, সমৃদ্ধ ও টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “তবে এখন এমন নানা হুমকি রয়েছে, যা আমাদের উন্নয়নকে বিপথে ঠেলে দিতে পারে।”

তিনি বলেন, “আমরা এমন এক সময় পার করছি, যেখানে বহুপাক্ষিকতা হুমকির মুখে, জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে এবং মানবিক সংকট গভীরতর হচ্ছে। নতুন নতুন নীতিমালা, প্রযুক্তি এবং শাসন পদ্ধতি আমাদের পৃথিবীকে দ্রুত রূপান্তরিত করছে, যা অতীতের অনেক অনুমানকে অচল করে দিচ্ছে।”

“এখন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি,” যোগ করেন তিনি।

বিশ্ববাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান রেখে ড. ইউনূস বলেন, “আসুন আমরা সাহসী হই। একটি এমন পৃথিবী গড়ি, যেখানে কেউ এতটা দরিদ্র না হয় যে, সে স্বপ্ন দেখতে না পারে এবং কোনো স্বপ্ন এত বড় না হয় যে, তা অর্জন করা যায় না।”

“ভবিষ্যৎ এমন কিছু নয়, যা আমরা উত্তরাধিকার হিসেবে পাই। এটি এমন কিছু, যা আমরা তৈরি করি। এবং আমাদের প্রত্যেকেরই এতে একটি করে ভূমিকা রয়েছে,” বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের উদ্ভাবন, সহমর্মিতা এবং সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের সক্ষমতাও ব্যাপক।”

কাতারের প্রশংসা করে ড. ইউনূস বলেন, কাতার যেভাবে আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে, তা দেখাচ্ছে কীভাবে একটি দেশ উদ্ভাবন, ঐতিহ্য ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট, সামাজিক বৈষম্য এবং কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ মোকাবিলা করতে পারে।”

ড. ইউনূস তার মূল বক্তব্যে সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন।

তিনি কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেখ মোজা বিনতে নাসের এবং ভাইস চেয়ারপারসন ও সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানিকে সময়োপযোগী ও চমৎকার এই শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান।

দোহায় মঙ্গলবার শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়ীত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’।

এই শীর্ষ সম্মেলন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ও উদ্ভাবনী পন্থাগুলো আধুনিক টেকসই উন্নয়নে কীভাবে অবদান রাখতে পারে, তা অনুসন্ধান করা হয়, যা একটি আরো সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা করবে।

প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীরা সোমবার কাতারের স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে দোহায় হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। প্রধান উপদেষ্টাকে বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা জানান কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম। 

সোমবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে ঢাকা থেকে সফরসঙ্গীদের নিয়ে কাতারের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

আর্থনা সম্মেলনের ফাঁকে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন ড. ইউনূস।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে: তাহির জামান প্রিয়র মা
  • প্রস্তুত ইসি, উন্মুখ ভোটার, কী করবে সরকার?
  • ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য সবাই উদ্‌গ্রীব: আমীর খসরু
  • পোপের মৃত্যুতে দেওয়া শোকবার্তা মুছে ফেলল ইসরায়েল
  • অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চীন: রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন
  • ৩১ দফা বাস্তবায়নই হবে বিএনপির ওপর নির্যাতনের প্রতিশোধ: তারেক রহমান
  • প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সাবধান করলেন মির্জা আব্বাস
  • ঢাকার দুই সিটিকে এক করার প্রস্তাব
  • কাতারে ড. ইউনূস: পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ
  • জুলাই আন্দোলনকে ‘তথাকথিত’ বলায় ঢাবি ছাত্রদল সভাপতির দুঃখপ্রকাশ