বাদীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখালেন ওসি
Published: 14th, January 2025 GMT
মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার ওসির বিরুদ্ধে জব্দ করা স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা ফেরত না দিয়ে বাদীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।
রোববার জেলা পুলিশ সুপার বরাবর সিংগাইর থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন সিংগাইর উপজেলার চর আজিমপুর গ্রামের কাজী গোলাম হোসেনের ছেলে কাজী আরিফুর রহমান (৩৫)।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, অভিযোগকারীর ছোট ভাই সৌদি আরব প্রবাসী কাজী শরিফুর রহমান (৩৪) প্রায় ৯ বছর আগে উপজেলার চর দুর্গাপুর গ্রামের সিদ্দিক খানের মেয়ে চাঁদনী আক্তারকে (২৬) বিয়ে করেন। গত ১ জানুয়ারি শরিফুর এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে আসেন। ৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শরিফুর বাড়িতে না থাকার সুযোগে তাঁর স্ত্রী চাঁদনী অজ্ঞাত এক যুবকের প্ররোচনা ও সহযোগিতায় বিদেশ থেকে স্বামীর দেওয়া ৮ ভরি স্বর্ণালংকার, ৪৫ হাজার সৌদি মুদ্রা (রিয়াল) ও দুটি স্মার্টফোন নিয়ে পালিয়ে যান।
এ ব্যাপারে ওই দিনই আরিফুর সিংগাইর থানায় অভিযোগ করতে গেলে ওসি জাহিদুল অভিযোগ না নিয়ে উল্টো চাঁদনীকে খুন করে লাশ গুম করার অভিযোগে তাঁর স্বামীর পরিবারকে গ্রেপ্তারের ভয়ভীতি দেখান। চাঁদনীর মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে দেখার জন্য ওসিকে অনুরোধ করা হয়। এর পাঁচ দিন পর ওসি জাহিদুলের সহযোগিতায় পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে সাভার উপজেলার বিরুলিয়ায় পাঁচ তলা একটি ভবন থেকে চাঁদনীকে তাঁর প্রেমিকসহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
কাজী আরিফুর রহমান জানান, তিনি চাঁদনী ও অজ্ঞাত পরিচয়ের যুবককে আসামি করে থানায় অভিযোগ করতে গেলে ওসি মামলা না নিয়ে বরং থানায় বিভিন্ন সময়ের পেন্ডিং মামলায় আমাদের পরিবারের সদস্যদের আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারের ভয়ভীতি দেখান। জব্দ করা স্বর্ণালংকার, নগদ বৈদেশিক মুদ্রা আত্মসাৎ করে মামলা না নিয়ে চাঁদনী ও তাঁর কথিত প্রেমিককে গত শুক্রবার থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রিয়ালের বৈধতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৬০ হাজার রিয়ালের ওপরে হলে পাসপোর্টে উল্লেখ করতে হয়। যেহেতু ৬০ হাজারের নিচে ছিল, তাই রিয়ালের বিষয়টি পাসপোর্টে উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে সিংগাইর থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর জানান, চাঁদনী আক্তার নিখোঁজ ও গুমের ব্যাপারে তাঁর বাবা সিদ্দিক খান ৫ জানুয়ারি একটি অভিযোগ দেন। এর পর চাঁদনীর স্বামী তাঁর স্ত্রী টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ দেন। পুলিশ চাঁদনীর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে তাঁর প্রেমিকসহ সাভার থেকে উদ্ধার করে। এ সময় চাঁদনীর কাছ থেকে এক জোড়া স্বর্ণের দুল, নগদ ১৬ হাজার টাকা ও তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসেট ছাড়া কোনো কিছু উদ্ধার করা হয়নি। বিষয়টি বাদীসহ অন্যদের সামনে ভিডিও করে রাখা হয়েছে। বাদী পুলিশ সুপারের কাছে যে অভিযোগ করেছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। চাঁদনী বাদীর উপস্থিতিতে বলেছেন, তিনি তাঁর স্বামীর বাড়ি থেকে কিছুই নেননি। তাঁর স্বামী বিদেশে থাকার সময় তাঁকে কোনো ভরণপোষণ দেননি। গত ৫ জানুয়ারি চাঁদনী স্বামীকে তালাক দিয়ে তাঁর পছন্দের ছেলের সঙ্গে চলে যান। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে চাঁদনীকে তাঁর বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের অভিযোগ দেওয়া প্রসঙ্গে ওসি বলেন, কোনো দুষ্টচক্রের প্ররোচনায় বাদী মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুন জানান, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চাঁদনী, তাঁর পরিবার, বাদী ও ওসির সঙ্গে কথা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দেবীগঞ্জে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে লেখা হয়েছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে পৌরসভার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এই লেখা সাধারণ মানুষের নজরে আসে। তবে, কারা এই স্লোগান লিখেছেন, তা কেউ দেখেননি।
পৌরসভার শহীদ আব্দুল মান্নান সড়ক সংলগ্ন উপজেলা পরিষদ চত্বর, নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের দেয়ালে লাল, কালো ও নীল রঙের কালি দিয়ে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় শেখ হাসিনা’ এবং ‘শেখ হাসিনা তুমি আস্থা’- এমন স্লোগান লেখা হয়েছে।
এদিকে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অফিসিয়াল পেজ থেকে আজ দুপুর ১টায় দেবীগঞ্জের বিভিন্ন দেয়ালে লেখা স্লোগানের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয়। এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
দেবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাতের আঁধারে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লিখছে তারা। উপজেলা ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সজাগ রয়েছে।"
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, “গত ৫ আগস্টের পর শুধু দেবীগঞ্জ নয়, পুরো পঞ্চগড়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেবীগঞ্জ, বোদা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এসব দেওয়াল লিখন লক্ষ্য করা গেলেও প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। এসব লেখা ’২৪ বিপ্লবের চেতনাকে ম্লান করার চেষ্টা করছে। যা রুখতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান- তাদের (ছাত্রলীগ নেতাকর্মী) দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের অপতৎপরতা রুখে দিতে পঞ্চগড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।”
দেবীগঞ্জ থানার ওসি সোয়েল রানা মোবাইলে বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে আসছে। এখনি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। বিষয়টি দেখছি আমরা।”
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ