মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার ওসির বিরুদ্ধে জব্দ করা স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা ফেরত না দিয়ে বাদীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।

রোববার জেলা পুলিশ সুপার বরাবর সিংগাইর থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন সিংগাইর উপজেলার চর আজিমপুর গ্রামের কাজী গোলাম হোসেনের ছেলে কাজী আরিফুর রহমান (৩৫)।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, অভিযোগকারীর ছোট ভাই সৌদি আরব প্রবাসী কাজী শরিফুর রহমান (৩৪) প্রায় ৯ বছর আগে উপজেলার চর দুর্গাপুর গ্রামের সিদ্দিক খানের মেয়ে চাঁদনী আক্তারকে (২৬) বিয়ে করেন। গত ১ জানুয়ারি শরিফুর এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে আসেন। ৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শরিফুর বাড়িতে না থাকার সুযোগে তাঁর স্ত্রী চাঁদনী অজ্ঞাত এক যুবকের প্ররোচনা ও সহযোগিতায় বিদেশ থেকে স্বামীর দেওয়া ৮ ভরি স্বর্ণালংকার, ৪৫ হাজার সৌদি মুদ্রা (রিয়াল) ও দুটি স্মার্টফোন নিয়ে পালিয়ে যান।

এ ব্যাপারে ওই দিনই আরিফুর সিংগাইর থানায় অভিযোগ করতে গেলে ওসি জাহিদুল অভিযোগ না নিয়ে উল্টো চাঁদনীকে খুন করে লাশ গুম করার অভিযোগে তাঁর স্বামীর পরিবারকে গ্রেপ্তারের ভয়ভীতি দেখান। চাঁদনীর মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে দেখার জন্য ওসিকে অনুরোধ করা হয়। এর পাঁচ দিন পর ওসি জাহিদুলের সহযোগিতায় পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে সাভার উপজেলার বিরুলিয়ায় পাঁচ তলা একটি ভবন থেকে চাঁদনীকে তাঁর প্রেমিকসহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।

কাজী আরিফুর রহমান জানান, তিনি চাঁদনী ও অজ্ঞাত পরিচয়ের যুবককে আসামি করে থানায় অভিযোগ করতে গেলে ওসি মামলা না নিয়ে বরং থানায় বিভিন্ন সময়ের পেন্ডিং মামলায় আমাদের পরিবারের সদস্যদের  আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারের ভয়ভীতি দেখান। জব্দ করা স্বর্ণালংকার, নগদ বৈদেশিক মুদ্রা আত্মসাৎ করে মামলা না নিয়ে চাঁদনী ও তাঁর কথিত প্রেমিককে গত শুক্রবার থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রিয়ালের বৈধতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৬০ হাজার রিয়ালের ওপরে হলে পাসপোর্টে উল্লেখ করতে হয়। যেহেতু ৬০ হাজারের নিচে ছিল, তাই রিয়ালের বিষয়টি পাসপোর্টে উল্লেখ নেই।

এ বিষয়ে সিংগাইর থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর জানান, চাঁদনী আক্তার নিখোঁজ ও গুমের ব্যাপারে তাঁর বাবা সিদ্দিক খান ৫ জানুয়ারি একটি অভিযোগ দেন। এর পর চাঁদনীর স্বামী তাঁর স্ত্রী টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ দেন। পুলিশ চাঁদনীর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে তাঁর প্রেমিকসহ সাভার থেকে উদ্ধার করে। এ সময় চাঁদনীর কাছ থেকে এক জোড়া স্বর্ণের দুল, নগদ ১৬ হাজার টাকা ও তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসেট ছাড়া কোনো কিছু উদ্ধার করা হয়নি। বিষয়টি বাদীসহ অন্যদের সামনে ভিডিও করে রাখা হয়েছে। বাদী পুলিশ সুপারের কাছে যে অভিযোগ করেছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। চাঁদনী বাদীর উপস্থিতিতে বলেছেন, তিনি তাঁর স্বামীর বাড়ি থেকে কিছুই নেননি। তাঁর স্বামী বিদেশে থাকার সময় তাঁকে কোনো ভরণপোষণ দেননি। গত ৫ জানুয়ারি চাঁদনী স্বামীকে তালাক দিয়ে তাঁর পছন্দের ছেলের সঙ্গে চলে যান। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে চাঁদনীকে তাঁর বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। 

এ ধরনের অভিযোগ দেওয়া প্রসঙ্গে ওসি বলেন, কোনো দুষ্টচক্রের প্ররোচনায় বাদী মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুন জানান, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চাঁদনী, তাঁর পরিবার, বাদী ও ওসির সঙ্গে কথা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

এই কঠিন সময়ে ঐক্য ধরে রাখা প্রয়োজন: ঢাবি উপাচার্য

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির ঐক্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান।

উপাচার্য বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি। এক অর্থে জাতির জন্য এটি একটি ক্রান্তিকাল। এই সময়ে আমাদের ঐক্য ধরে রাখা একান্তই প্রয়োজন।’

আজ রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে নিয়াজ আহমেদ খান এ কথা বলেন।

ঢাবি উপাচার্য বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতির জন্য পরম শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও মমতার দিন। এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। তাঁদের সেই চূড়ান্ত আত্মত্যাগ ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে আছে।

নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, যুগে যুগে ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ এ জাতিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং সাহস জুগিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতি ১৯৯০ ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আজও জাতির ঐক্য ধরে রাখার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোকবর্তিকা। একই সঙ্গে ১৯৫২, ১৯৬৮, ১৯৬৯, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে যাঁরা রক্ত ও জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।

নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ১৯৫২ থেকে ২০২৪—এর প্রতিটি দিন ও ঘটনাপ্রবাহ জাতির মৌলিক পরিচয়ের মাইলফলক। এর কোনো অংশ বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ইতিহাসই যুগে যুগে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে, আর বর্তমান সময়ে সেই ঐক্য ধরে রাখাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ