এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলমসহ তার পরিবারের নামে থাকা ৮৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) এবং তার ১৬টি স্থাবর সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি বগুড়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর স্ত্রী মোহসীনা আকতারের পাঁচটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও স্থাবর সম্পত্তিও জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতির পৃথক মামলায় ছেলেসহ সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ও তার ছেলে এবং সাবেক উপমন্ত্রী ও ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল জ্যাকব ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। 

ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো.

জাকির হোসেন গালিব গতকাল মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে এসব আদেশ দেন। এদিন দুদকের উপপরিচালক সিফফাত উদ্দীন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ এবং সম্পদ ক্রোকের আবেদন করেন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। 

আদালতের আদেশে এস আলমের জব্দকৃত ১৬টি সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে—গুলশানের এস আলম টাওয়ারে ১০ তলা ভবন, ধানমন্ডিতে এক বিঘা জমিসহ ৬ তলা ভবন, ধানমন্ডি লেক সার্কাসে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমিসহ ৪ তলা ভবন, গুলশানের ২৬৫৮ বর্গফুট জমির ওপর নির্মিত ফ্ল্যাট, গুলশান ২ এর প্লট দশমিক ৭৮৮৮ একর জমি। উত্তরা আবাসিক এলাকায় ৭ তলা ভবন, ভাটারাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১০৩ দশমিক ০৩ কাঠা জমির প্লট, এক দশমিক ৭২০০ একর জমি, ৯৬ কাঠার জমি, ১ দশমিক ৯৫৩৬ একর জমি, ১১ দশমিক ১০৬১ বিঘা, ১৩১ দশমিক ০৪ কাঠা জমি।

পৃথক আদেশে সাবেক এমপি জিন্নাহর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ, সম্পদও ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনে বলা হয়, মোহসীনা আকতার দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৪২ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্দে দুই কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭২ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রাখারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। পরে আদেশে আদালত জিন্নাহর স্ত্রীর ৫টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৩০ লাখ ৯১ হাজার ৭০৯ টাকা অবরুদ্ধ এবং ২৪ লাখ ২৪ হাজার ৪০০ টাকা মূল্যের ১১২ দশমিক শূন্য চার শতাংশ জমি ও ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি মিনি ট্রাক ক্রোক করার আদেশ দেন।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ঠিকাদার বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ২ প্রকৌশলীকে হুমকির অভিযোগ

খুলনা নগরীর খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোল্লা সোহাগের বিরুদ্ধে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) দুই প্রকৌশলীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কুয়েটের একটি ভবনের ছাদের ওয়াটারপ্রুফিংয়ের কাজে ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে লাভ আরও বেশি নির্ধারণের কথা বলেছিলেন ওই ঠিকাদার। এ নিয়ে প্রকৌশলীদের তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এ প্রেক্ষাপটে কুয়েটের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) শেখ আবু হায়াত ও নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. গোলাম কিবরিয়া সোমবার কুয়েট উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করে নিরাপত্তা চেয়েছেন। 

সূত্র জানায়, কুয়েটের ১৩ নম্বর ভবনের ছাদের ওপর ওয়াটারপ্রুফিংয়ের কাজ নিয়েছেন মোল্লা সোহাগ। কাজটি কয়েকদিন আগে শুরু হয়। গত রোববার বিকেল ৩টার দিকে ঠিকাদার সোহাগ প্রথমে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়ার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এ বি এম মামুনুর রশিদ এবং অন্য নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াতকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেন। গালাগাল করতে নিষেধ করলে তিনি গোলাম কিবরিয়াকেও গালাগাল ও হুমকি দেন। পরে তিনি একই পরিচয় দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াতকে ফোনে গালাগাল ও হুমকি দেন।

উপাচার্যের কাছে দুই নির্বাহী প্রকৌশলী লিখিত অভিযোগে বলেন, ওয়াটারপ্রুফিংয়ের কাজের দর প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের প্রকৌশলীরা বাজারদরের সঙ্গে সরকারি নিয়মে ভ্যাট, আইটি ও ১০ শতাংশ প্রফিট বা লাভ (পূর্বনির্ধারিত) যুক্ত করে নির্ধারণ করেন। ঠিকাদার সোহাগ ১০ শতাংশ লাভ কেন যুক্ত করে দর নির্ধারণ করা হয়েছে, তাঁকে আরও বেশি লাভ দিতে হবে বলে ফোনে প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়াকে জানান। এ কথা বলার পর প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু কোনো কথা না শুনে ফোনে প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ও শেখ আবু হায়াতকে গালাগাল ও মারধরের হুমকি দেন সোহাগ। এ অবস্থায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াত বলেন, রোববার বিকেল ৩টার কিছু আগে খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বলে– ‘তুই চেয়ারের পরে বসে সবাইরে ১০ লাখ ২০ লাখ টাকার কাজ দিস। আমাকে দিছিস টেন পারসেন্ট লাভে।’ এই বলে আমাকে যাচ্ছেতাই বলে গালাগাল করেন। পাঁচ মিনিট পর ফোন দিয়ে আমাকে দেখে ছাড়বেন, আমার বাড়ি আক্রমণ করবেন, ফুলবাড়িগেটে গেলে আমাকে দেখে নেবেন– এসব বলে হিুমকি দেন। 

নিজের সাংগঠনিক পরিচয় ও প্রকৌশলীকে ফোন দেওয়ার কথা স্বীকার করেন মোল্লা সোহাগ। তবে কোনো ধরনের ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলে দাবি করেন। মোল্লা সোহাগ বলেন, আমার নেতার অর্ডার আছে– আমি কোনো জায়গায় কোনো টেন্ডারেও যাই না, কোনো ঠিকাদারিতেও নেই। আমার কোনো কাজ কুয়েটে চলে না। আমার ট্রেড লাইসেন্সই নেই, কাজ পরের কথা। আমি তাদের (প্রকৌশলী) ফোন দিয়েছিলাম, কথা হয়েছে, তবে কোনো হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়নি।

কোনো কাজ চলছে না, তাহলে প্রকৌশলীদের কার হয়ে ফোন দিয়েছিলেন– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আবু হায়াত ও গোলাম কিবরিয়াকে ফোন দিলে ভালোভাবে জানতে পারবেন।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ