নলেন গুড়ের প্যারা সন্দেশ যাচ্ছে বিদেশে
Published: 14th, January 2025 GMT
বাঙালির ইতিহাসে নলেন গুড়ের বন্দনা নতুন নয়। দ্বাদশ শতাব্দীতে শ্রীধর দাস তার সংস্কৃত কাব্যগ্রন্থ ‘সদুক্তিকর্ণামৃত’ বলেছিলেন নতুন গুড়ের তথা নলেন গুড়ের কথা। নীহাররঞ্জন রায় ‘বাঙালীর ইতিহাস, আদি পর্ব’ গ্রন্থেও উল্লেখ করেছেন এই গুড়ের কথা। খেজুরের গাছ থেকে সংগৃহীত রস দিয়ে তৈরি নলেন গুড় শত শত বছর ধরে বহন করে চলেছে তার ঐতিহ্য। আর এই গুড়, খাঁটি দুধের ছানা এবং চিনির সংমিশ্রণে নড়াইলে তৈরি হয় নলেন গুড়ের প্যাড়া সন্দেশ। যা এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে।
নড়াইল সদরের রূপগঞ্জ বাজারে রয়েছে ‘কার্তিক কুন্ডু মিষ্টান্ন ভান্ডার’। তারা ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে তৈরি করছে নলেন গুড়ের প্যারা সন্দেশ। নলেন গুড়ের ক্ষীরের সন্দেশ, ক্ষীরের চমচম তৈরি করে তারা। পাশাপাশি কালোজামসহ বিভিন্ন স্বাদের মিষ্টি তৈরি হয় এই দোকানে।
জেলার লোহাগড়া উপজেলার লক্ষীপাশা পুরাতন খেয়াঘাট সংলগ্ন ‘সাহ সুইটস’ এবং লোহাগড়া বাজারের ‘সুরেন্দ্র সুইটস’সহ জেলার আরো কয়েকটি মিষ্টির দোকানে এখন দেদারসে বিক্রি হচ্ছে নলেন গুড়ের প্যাড়া সন্দেশ। শীতের শুরুতেই কদর বাড়ে এর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা অর্ডার দিয়ে তৈরি করিয়ে নিজেদের সঙ্গে নলেন গুড়ের সন্দেশ নিয়ে যান। স্বজনরাও প্রবাসীদের জন্য এই সন্দেশ পাঠিয়ে থাকেন।
আরো পড়ুন:
শতবর্ষী মাছের মেলা, কোটি টাকা বিক্রির আশা
কুষ্টিয়ায় ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা শুরু
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে লোহাগড়া বাজারে সুরেন্দ্র সুইটস মিষ্টি দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিকেজি নলেন গুড়ের প্যাড়া সন্দেশ ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বিয়ে, নববর্ষসহ বিভিন্ন উৎসবে এই মিষ্টির দেখা মেলে। বাড়িতে বন্ধু-আত্মীয়রা এলে এই মিষ্টি দিয়ে তাদের আপ্যায়ণ করা হয়। নলেন গুড়ের প্যাড়া সন্দেশের স্বাদ নিতে নড়াইলের আশপাশের জেলা থেকেও মানুষরা আসেন।
নলেন গুড়ের সন্দেশ কিনতে আসা আনিসুজ্জামান জানান, তার বোনদের পরিবার থাকে আমেরিকায়। তাদের কাছে পাঠানোর জন্য এ মিষ্টি কিনতে এসেছেন। গুণগত মান ভালো হওয়ায় এ মিষ্টি খেয়ে তৃপ্তি পান তারা। মাঝে মধ্যেই তারা এই মিষ্টি পাঠাতে বলেন।
সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা কাজী শওকত আলী বলেন, “পরিবারের সদস্যদের জন্য নলেন গুড়ের সন্দেশ কিনতে এসেছি। ছোটবেলা থেকেই লোহাগড়া বাজারের নলেন গুড়ের প্যাড়া সন্দেশ খাচ্ছি।”
সাহা সুইটসের স্বত্বাধিকারী অভিজিৎ সাহা বলেন, “বংশ পরম্পরায় ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছি আমরা। আমার ঠাকুর দাদা সচিন্দ্রনাথ সাহা নলেন গুড়ের সন্দেশ তৈরি করে বিক্রি করতেন। বাজারে প্রচুর চাহিদা ও সুনাম থাকায় ঠাকুর দাদার মৃত্যুর পর দাদি নমিতা রাণী সাহা হাল ধরেন।”
তিনি আরো বলেন, “নলেন গুড়ের সন্দেশ তৈরি ও বিক্রি আমাদেরও পৈত্রিক ঐতিহ্য বহন করে। অতুলনীয় স্বাদ ও গুণগত মানের কারণে এই মিষ্টি ধরে রেখেছে তার ঐতিহ্য। দীর্ঘ সময়েও ভাটা পড়েনি চাহিদায়। এখন এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এই মিষ্টি যাচ্ছে বিদেশেও।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রোজা শুরুর আগেই লেবু শসা ও বেগুনে উত্তাপ
অন্য বছরের তুলনায় এবার রোজার আগে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম বলা চলে এক প্রকার স্বাভাবিক। তবে কয়েকটি পণ্যে রোজার আঁচ লেগেছে। বিশেষ করে এ তালিকায় রয়েছে লেবু, বেগুন, শসাসহ ইফতারিতে ব্যবহার হয় এমন পণ্য। চাহিদা বাড়ার সুযোগে পণ্যগুলোর দর কিছুটা বেড়েছে।
শুক্রবার ছুটির দিনে কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। শনিবার চাঁদ দেখা গেলে রোববার থেকে শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান। এর আগে সবাই অগ্রিম বাজার করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এর কিছুটা প্রভাবও পড়েছে বাজারে।
খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন লেবুর মৌসুম নয়। ফলে প্রায় এক মাস ধরে দর বাড়তি। এ ছাড়া বেগুন, শসাসহ যেগুলোর দাম বেড়েছে তার মূল কারণ ক্রেতাদের বেশি পরিমাণে কেনা। রোজার আগমুহূর্তে প্রতিবছরই এসব পণ্যের দর বাড়ে। তবে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সামনের দিনগুলোতে দর বাড়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন তারা।
শরবত তৈরির অন্যতম উপাদান লেবু। রমজানে ইফতারে কমবেশি সবাই শরবত খাওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। আর এ সুযোগে বাড়তি দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে প্রতি হালি শরবতি বা সুগন্ধি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং আকারভেদে অন্য লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। মাসখানেক আগে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে কেনা গেছে লেবুর হালি। তবে এখনও বাড়লেও গত বছরের এ সময়ের তুলনায় কিছুটা কম রয়েছে দাম।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি লেবু ব্যবসায়ী জালাল আহমেদ সমকালকে বলেন, লেবুর উৎপাদন কম। কারণ, এখন লেবুর মৌসুম নয়। তাছাড়া অনেক দিন ধরে বৃষ্টিপাত নেই। এ জন্য ফলন ভালো হচ্ছে না। সেজন্য বাজারে লেবু কম আসছে। কিন্তু রোজার কারণে মানুষ আগেভাগে লেবু কিনছেন। মূলত এ জন্য দর বাড়তি।
বাজারে এখন ভরপুর শসা রয়েছে। হাইব্রিড ও দেশি শসার পাশাপাশি ছোট আকারের খিরাও পাওয়া যাচ্ছে। হাইব্রিড শসা ও খিরার কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেনা গেলেও দেশি জাতের শসা কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে এসব শসা অন্তত ১০ থেকে ৩০ টাকা কমে কেনা গেছে। অবশ্য, এ দর গেল রমজানের চেয়ে বেশ কম। গত বছর এ সময় শসার কেজি সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ছুঁয়েছিল।
এখনও টমেটোর ভর মৌসুম চলছে। ফলে বাজারে দেশি টমেটোর পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। সেজন্য দাম এখনও নাগালে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকায়।
বেগুনি তৈরি করতে লম্বা বেগুনের দরকার হয়। সেজন্য রোজার সময় লম্বা বেগুনের চাহিদা বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়েছে দামে। পাঁচ-ছয় দিন আগেও প্রতি কেজি লম্বা বেগুন কেনা গেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রায় দ্বিগুণের মতো দর বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লায় ভ্যান থেকে কিনতে গেলে ক্রেতাকে কেজিতে বাড়তি গুনতে হচ্ছে অন্তত আরও ১০ টাকা। বছরের অন্য সময়ে গোল বেগুনের দর বেশি থাকলেও এখন স্বাভাবিক। প্রতি কেজি কেনা যাবে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা ইয়াকুব আলী বলেন, এখনও শীতের সবজিতে বাজার ভরপুর। লম্বা বেগুনের চাহিদা বেশি। এ কারণে কেউ কেউ দর বেশি নিচ্ছে। তবে অন্য জায়গায় দর বাড়লেও কারওয়ান বাজারে বাড়েনি বলে দাবি করেন এই বিক্রেতা।
গাজরের সরবরাহ রয়েছে বেশ ভালো। ফলে দর বাড়ার তালিকায় উঠতে পারেনি মিষ্টি জাতীয় সবজিটি। প্রতি কেজি গাজর কেনা যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর কম দরে মিলছে পেঁয়াজ। মানভেদে দেশি প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
রমজানে কাঁচামরিচের চাহিদা বেশি থাকে। তবে এবার ঝালজাতীয় পণ্যটির দর নাগালের মধ্যেই রয়েছে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। মাস দুই-তিনেক ধরে এ দরের আশপাশেই বিক্রি হচ্ছে মরিচ।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও ঢাকা বিভাগীয় প্রধান বিকাশ চন্দ্র দাস সমকালকে বলেন, রোজা উপলক্ষে রোববার থেকে ঢাকা মহানগরে ১০টি বিশেষ তদারকি দল মাঠে নামবে। তারা বিভিন্ন বাজারে তদারকি করবে। রমজানজুড়ে চলবে এ তদারকি কার্যক্রম। রোববার সকালে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কারওয়ান বাজারে এ তদারকি কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।