নানা কারণে বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে পৃথিবী। প্রতিনিয়ত নানা হুমকির মুখে পড়ে অনেক উদ্ভিদ, পশু-পাখি বিলুপ্ত হচ্ছে। এসবের হিসাব আমরা অনেকেই রাখি না। এর মাঝেও কেউ কেউ শত প্রতিকূলতার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। তাদেরই একজন শেরপুরের বিশিষ্ট সাংবাদিক, আরটিভির শেরপুর প্রতিনিধি মুগনিউর রহমান মনি। 

চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা উল্লেখ করলেই বিষয়টি আমাদের কাছে অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির একটি ঘটনা বেশ সাড়া ফেলেছে। বাণিজ্যকেন্দ্রটির একটি সমিতি আছে। তাদের মধ্যে কিছু অতি উৎসাহী মানুষ কয়েকটি কুকুরকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে। তাদের অভিযোগ, কুকুরের কারণে ক্রেতারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এছাড়া, আবাসিক ভবনের বাসিন্দাদের অনেকেই কুকুরগুলো কামড়িয়েছে। 

অথচ, স্থানীয়রাই কুকুরগুলোকে নিয়মিত খাবার দিতেন, কেউ কেউ কুকুরগুলোকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। বিষ খাইয়ে কুকুর হত্যার বিষয়টি নিয়ে ‘সেভ ওয়াইল্ড অ্যান্ড ন্যাচার’ নামের একটি সংগঠন তীব্র প্রতিবাদ করে এবং আদালতে মামলা করে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দিয়েছে আদালত। খুব শিগগির এ নিয়ে একটি ভাল সংবাদ পাওয়া যাবে। এভাবেই মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে।

মুগনিউর রহমান মনি পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখনির মাধ্যমে মানুষের পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি করছেন প্রতিনিয়ত। তারই স্বীকৃতি পেলেন নেচার স্টাডি সোসাইটি অব বাংলাদেশের (এনএসএসবি) কাছ থেকে। 

মুগনিউর রহমান মনি শুধু সাংবাদিক নন, তিনি বিশিষ্ট আলোকচিত্রী, কবি, লেখক ও পরিবেশকর্মী। ২০২৪ সালের সেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে তার হাতে সম্মাননা স্মারক ও সনদপত্র তুলে দিয়েছেন এনএসএসবির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।  

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ফাউন্ডার ডিরেক্টর ক্যাপ্টেন কাওছার মোস্তফা, সেক্রেটারি জেনারেল সোহান সাইয়্যিদ, ডোনার মেম্বার সালমান বিন সুলতান, লাইফ মেম্বার ডা.

মো. নিহাল রহমান, সাংবাদিক ও ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার কে এম এ হাসনাত, তিমু হোসেন প্রমুখ।

মুগনিউর রহমান মনি শেরপুর বার্ড ক্লাব, সেভ হিউম্যানিটি, ইন্টারাপ্টেড নেচারসহ বিভিন্ন প্রকৃতি ও পরিবেশবাদী সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিবেশ এবং প্রকৃতি সুরক্ষায় আড়াই যুগেরও বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করছেন। নেচার এবং ওয়াইল্ড লাইফের প্রতি অনুরক্ত হয়ে তিনি ছবি তুলছেন সেই ১৯৮৮ সাল থেকে এবং এর ওপর পাঠ নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে বন্যপ্রাণী, পাখি, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা এবং উন্নয়ন ও গবেষণার কাজ করে চলেছেন। 

মুগনিউর রহমান মনি শেরপুর প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে সমাজসেবামূলক কাজ করছেন।

অনুষ্ঠানে মুগনিউর রহমান মনি বলেছেন, “সম্মাননা বা পুরস্কারপ্রাপ্তি সবার জন্যই আনন্দের। এ প্রাপ্তিতে বন্যপ্রাণী, পাখি, প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষার কাজে আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। সবার সহযোগিতায় সাধ্যমতো এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় কাজ করে যেতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”

এনএসএসবির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেছেন, “নেচার স্টাডি সোসাইটি অব বাংলাদেশ ১৯৯৬ সালের ৩০ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি গবেষণা, তথ্য সংগ্রহ, প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা তৈরির জন্য নিয়মিত কাজ করছে। প্রকৃতিতে গাছ, ফুল, পাখির অবদানসহ গাছ চেনানো, ফটোগ্রাফি কর্মশালা, নেচার স্টাডি ডাইজেস্টসহ বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকাশনা, বার্ষিক সেমিনার, পুরস্কার প্রদানসহ নিয়মিত নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।” 

তিনি বলেন, “বিশিষ্ট আলোকচিত্রী, সাংবাদিক, কবি, লেখক ও পরিবেশকর্মী মুগনিউর রহমান মনিকে ২০২৪ সালে বর্ষসেরা পরিবেশবিষয়ক ফটোগ্রাফার হিসেবে পুরস্কৃত করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।” 

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

ইউজিসির নজরদারি সংস্থার অধীনে যাচ্ছে সাত কলেজ

রাজধানীর আলোচিত সাত কলেজ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে এসেছে সরকার। এ জন্য আপাতত একটি ‘নজরদারি সংস্থা’ গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য এ সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন। সাত অধ্যক্ষের যে কোনো একজন সংস্থাটির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। নজরদারি সংস্থার কার্যালয় হবে সাত কলেজের যে কোনোটির ক্যাম্পাসে।

এ ছাড়া সাত কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তি কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি ও রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং হিসাব বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সাময়িক কাঠামো থাকবে, যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এসব কাজের জন্য সাত কলেজের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি পৃথক ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করবে। বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদার স্বতন্ত্র কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে সাত কলেজ পরিচালিত হবে।
সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। যুগ্ম সচিব শারমিনা নাসরীনের সই করা চিঠিতে এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ এই উচ্চ পর্যায়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক। 
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কমিটির সদস্য।
এ কমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে একাধিক সভায় মিলিত হয়ে সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা সরকার গ্রহণ করেছে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ জাপান সফরে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে তিনি সমকালকে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সমমর্যাদার স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে সাত কলেজ কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে আমরা সরকারকে একটি সুপারিশমালা দিয়েছি।

গতকাল ঢাবি উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়, ইউজিসি এবং অধিভুক্ত কলেজের একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সাত কলেজের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে ঢাবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। দ্রুত ঢাবির সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাত কলেজ হলো– ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা রাজধানীর এই বড় সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রায় ৮ বছর ঢাবির অধীনে চলে সাতটি কলেজ। গত ২৭ জানুয়ারি অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ঢাবি। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এখন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্ন্তবর্তী সরকার। তার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে চলবে সাত কলেজ।

কেমন হবে নজরদারি সংস্থার কাঠামো
নজরদারি সংস্থার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির রেজিস্ট্রার দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা মনোনীত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সাত কলেজের অনলাইন ভর্তি কমিটির মাধ্যমে আবেদন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কলেজগুলোর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এই কাঠামো।

সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রশাসনিক জটিলতা ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থা চালু রাখবে।’
আরও বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ পর্ষদে (একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট) জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদিত হতে হবে।’
উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ অনুসারে, ‘সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানের জন্য স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে একটি করে হেল্প ডেস্ক থাকবে; নিয়োগপ্রাপ্তির পরেই প্রস্তাবিত সাময়িক কাঠামোর পরিচালক জনবলের প্রস্তাবসহ কাঠামোর কার্যক্রমের অপারেশন ম্যানুয়েল প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিল করবেন। কমিশন সমন্বিত কাঠামোর সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।’


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ