আফ্রিদির পাল্টা প্রশ্নে বেরিয়ে এল থলের বিড়াল
Published: 14th, January 2025 GMT
প্রশ্নের উত্তরে সব সময় ভেতরকার ব্যাপারটা ধরা যায় না। কারণ, উত্তর কখনো কখনো আনুষ্ঠানিকও হয়। ক্রীড়াঙ্গনের কথাই ধরুন, কোনো ক্রিকেটারের দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে এবং সে বিষয়ে জানতে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে সব সময় ভেতরকার ব্যাপারটা না–ও বেরিয়ে আসতে পারে। খেলোয়াড় থেকে বোর্ড—সবাইকেই নিয়মনীতি মেনে কথা বলতে হয়। কিন্তু কখনো কখনো ঠিক উল্টোটাও ঘটে। সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে খেলোয়াড়ের পাল্টা প্রশ্নে ভেতরকার বিষয়টি সবাই ধরে ফেলেন!
আরও পড়ুনবুমরাই ডিসেম্বরের মাসসেরা৫১ মিনিট আগেপাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) গতকালের ড্রাফটে ঠিক এমন এক ঘটনাই ঘটেছে। ব্যাপারটি পাকিস্তানের তারকা পেসার শাহিন আফ্রিদিকে নিয়ে। বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলে পাকিস্তানে উড়াল দিয়েছেন পিএসএলের দল লাহোর কালান্দার্সের এই তারকা পেসার। ড্রাফটে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে বাদ পড়ার বিষয়ে ভেতরকার ব্যাপারটাই সম্ভবত ফাঁস করে দিলেন আফ্রিদি!
ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির শুরুতে শেষ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই টেস্টের সিরিজে আফ্রিদিকে দলে রাখেনি পাকিস্তান। সিরিজটি ২–০ ব্যবধানে তারা হেরেছে। এ সিরিজে আফ্রিদির বাদ পড়া নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) জানিয়েছিল, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পূর্ণ ফিট হিসেবে পেতে তাঁকে টেস্ট সিরিজে রাখা হয়নি।
যদিও সে সময় পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ক্রিকেট পাকিস্তান জানিয়েছিল, বিশ্রাম নয়, নির্বাচকদের ‘অবাধ্য’ হওয়ায় আফ্রিদিকে টেস্ট সিরিজে দলে রাখা হয়নি। এসব নিয়ে তখন পক্ষে–বিপক্ষে বেশ একপশলা বিতর্কও হয়েছিল।
আরও পড়ুনদল না পেয়ে ক্ষোভে চিরতরে পিএসএল বর্জনের ঘোষণা পাকিস্তানি ফাস্ট বোলারের১ ঘণ্টা আগেশুধু কি তা–ই, শুক্রবার থেকে মুলতানে শুরু হতে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে আফ্রিদিকে দলে রাখেননি পাকিস্তানের নির্বাচকেরা। তো পিএসএলের ড্রাফটে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে বাদ পড়া নিয়ে জানতে চান, ‘শাহিন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে আপনাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও দলে নেই।’
সাংবাদিক এটুকু বলতেই মাইক্রোফোন একটু টেনে পাল্টা তাঁকে প্রশ্ন করেন শাহিন আফ্রিদি, ‘বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল? এটুকু বলে মিটিমিটি হাসছিলেন বাঁহাতি এই পেসার। সাংবাদিক তখন নিজের প্রশ্নের ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় আফ্রিদি বলেন, ‘আপনার প্রশ্নটি ভালো ছিল।’ এরপর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য দোয়াও চান তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজে খেলা আফ্রিদিকে টেস্ট সিরিজ থেকে বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে ‘ওয়ার্ক লোড’–এর কথা জানিয়েছিল পিসিবি। ক্রিকেট পাকিস্তান সে সময় জানিয়েছিল, টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণার আগে এক নির্বাচক আফ্রিদিকে ৪ দিনের একটি ম্যাচ খেলতে বলেছিলেন। কোনো কারণে সেটি খেলেননি আফ্রিদি। এমন অবাধ্যতার কারণেই সেই টেস্ট সিরিজের দলে জায়গা পাননি আফ্রিদি।
আরও পড়ুনপিএসএল নিয়ে ইসিবির মুখোমুখি ইংলিশ ক্রিকেটাররা২ ঘণ্টা আগেওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও তাঁর ও নাসিম শাহর বাদ পড়া নিয়ে নির্বাচকদের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানায়, ‘নির্বাচকেরা শাহিন ও নাসিমকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেরা অবস্থায় পেতে চান, এটা ৫০ ওভারের প্রতিযোগিতা এবং আমরা সেখানে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন।’ ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।
বিপিএলে এবার ফরচুন বরিশালে খেলেছেন শাহিন আফ্রিদি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাইক্রোবাসে গান বাজাতে বাজাতে প্রকৌশলীকে হত্যা
হা-মীম গ্রুপের ‘দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার’ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আহসান উল্লাহকে হত্যার লোমহর্ষক তথ্য উঠে আসছে। ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসে উচ্চ শব্দে গান শুনতে শুনতে প্রথমে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। হাত-পা বাধা বেঁধে আহসানকে গাড়ির পেছনের অংশে নিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। এরপর পা দিয়ে বুক ও শরীরের নানা অংশে আঘাত করা হয়। একপর্যায়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে খুনিরা। পরে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে লাশ গুম করে। নিহতের পিঠ ছিল ক্ষতবিক্ষত। মাইক্রোবাসের ভেতরকার চিৎকার ও গোঙানির শব্দ যাতে বাইরে না পৌঁছে এ জন্য চার ঘণ্টা উচ্চ শব্দে গান ছেড়ে রাখা হয়। আদালতে আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
২৩ মার্চ হত্যার শিকার হন হা-মীমের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার আহসান। আশুলিয়ার কর্মস্থল থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকার বাসায় ফিরছিলেন তিনি। এই ঘটনায় জড়িত চারজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের মধ্যে আহসানের গাড়ি চালক সাইফুল ইসলাম ও তার বন্ধু নুরুন্নবীও রয়েছেন। তারা এরই মধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া ইসরাফিল ও সুজন ইসলাম আরও দু’জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তুরাগ থানা পুলিশ। জড়িতদের জবানবন্দি ও জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও টার্গেট করার কারণ উঠে এসেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে চালক সাইফুল দাবি করেন- ১২ মার্চ হত্যার ছক চূড়ান্ত করা হয়। এটি বাস্তবায়নের পূর্ব পরিচিতি নুরুন্নবীকে ভাড়া করেন তিনি। এক সময় নুরুন্নবী ও সাইফুল একসঙ্গে গার্মেন্টেসে চাকরি করতেন। পুরো মিশন সফল করতে ইসরাফিল ও সুজনকে ম্যানেজ করেন নুরুন্নবী। ঘটনার দু’দিন আগে তুরাগ এলাকা রেকি করেন তারা। আহসানকে নিয়ে অফিস থেকে ফেরার পথে কোথায় প্রস্রাব করার নাম করে গাড়ি থামাবেন তা দেখিয়ে দেন। সাইফুল অন্যদের টোপ দেন- গাড়িতে আহসানকে জিম্মি করা গেলে অনেক টাকা আদায় করা সম্ভব হবে।
ছক মোতাবেক তুরাগ এলাকার পূর্ব নির্ধারিত স্পটে বিকেল ৪টার দিকে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন চালক। এরপর তার তিন সহযোগী মাইক্রোবাসে উঠে পড়েন। যাদের আগে থেকে ভাড়া করেন সাইফুল। তাদের মধ্যে দু’জন গাড়ির পেছনের আসনে আহসান উল্লাহ’র পাশে, অন্যজন বসেন চালকের বাম পাশের আসনে। প্রশ্রাব করার নাম করে মাইক্রোবাস থেকে নেমে যাওয়ার পর সাইফুল ফের গাড়িতে ফিরে নতুন নাটক সাজান। তিনি সহযোগীকে দেখে না চেনার ভান করে বলে উঠেন- ‘আপনারা কারা আমার গাড়িতে উঠেছেন।’ তারা কোনো উত্তর দেননি। এরপরই আহসানের হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। চোখ বাঁধা হয়নি। বাজানো হয় উচ্চ শব্দে গান। চারজনের কথোপকথন ও কর্মকাণ্ড দেখে অল্প সময়ের মধ্যে আহসান বুঝতে পারেন তারা সবাই একে অপরের পরিচিত। প্রাণে বাঁচতে আহসান তাদের ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার কথা জানান। তবে তারা সাড়া দেননি।
বেড়িবাঁধ, গাবতলী, দিয়াবাড়ি রেলস্টেশন, ১৬ নম্বর সেক্টরে ঘুরাতে থাকেন। খুনের আগে গাবতলী এলাকায় আহসানকে ইফতার করান তারা। এরই মধ্যে তার ব্যাংকের কার্ড থেকে দু’টি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে ৫০ হাজার টাকা ট্রান্সফার করেন জড়িতরা। এরই মধ্যে একটি নম্বর সাইফুলের স্ত্রীর নামে নিবন্ধন করা। আরেকটি নম্বর তার বোনের। আরও ১০ হাজার টাকা কার্ড থেকে তুলে নেয় তারা। এছাড়া নগদ ২৫ হাজার টাকা লুট করে। সব মিলিয়ে ৮৫ হাজার হাতিয়ে নেওয়া হয়। তার মধ্যে নুরুন্নবীকে মাত্র এক হাজার ও ইসরাফিলকে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়। সুজন কোনো টাকা পায়নি। ভাগের টাকা সবাইকে পরবর্তীতে দেওয়া হবে জানান সাইফুল। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেন নুরুন্নবী। তখন সাইফুল সহযোগীদের বলেন- হত্যা না করলে একজনও বাঁচব না। এরপর অন্যরা তাদের হত্যা মিশনে সহযোগিতা করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা জানান, আহসানকে হত্যার কারণ হিসেবে দু’টি বিষয়ের কথা এখন পর্যন্ত দাবি করছেন চালক সাইফুল। প্রথমত- গত আগস্টে সামান্য দুর্ঘটনায় সাইফুলের মাইক্রোবাসের কিছু ক্ষতি হয়েছিল। এরপর সাইফুল নিজ উদ্যোগে ইন্সুরেন্স থেকে মেরামত বাবদ টাকা আদায় করতে সহায়তা করেন। তার ধারণা ছিল ওই টাকা থেকে একটি ভাগ আহসান তাকে দেবেন। তবে সেটা না দেওয়ায় ক্ষোভ ছিল তার। আবার মাসে ১৯ হাজার টাকা বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা না দেওয়ার মনক্ষুন্ন ছিলেন তিনি। সাইফুলের ভাষ্য- এ ক্ষোভ থেকে মালিককে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের ফন্দি আঁটেন।
র্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মুহাম্মদ আহনাফ রাসিক বিন হালিম সমকালকে বলেন, অফিস থেকে বাসায় না ফেরায় তুরাগ থানায় জিডি করেছিল পরিবার। এরপর শুরু হয় তদন্ত। একে একে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। তুচ্ছ কারণে নৃশংসভাবে প্রকৌশলীকে হত্যা করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২৫ মার্চ দিয়াবাড়ির ১৬ নমম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর সড়কের রাস্তার পাশ থেকে আহসানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর র্যাব ছায়াতদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগে গাইবান্ধা থেকে মূল পরিকল্পনাকারী সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। ২৬ মার্চ লালমনিরহাট থেকে নূরন্নবী ও গাজীপুরের কাশিমপুর থেকে ইসরাফিলকে গ্রেপ্তার করে র্যব। সবশেষে ধরা হয় সুজনকে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফরহাদুজ্জামান নবীন বলেন, ছুরি, স্ট্যাম্প, ব্যাংকের চেক, ভিকটিমের মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। ভয় দেখানোর জন্য ছুরি রাখা হয়।