ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে নিখোঁজ, রাতে ফোন করে ৫০ লাখ টাকা দাবি
Published: 14th, January 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফে ফজরের নামাজ পড়তে বের হয়েছিলেন মোহাম্মদ শাকের আহমদ (৬০)। পরে সারা দিন তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। রাতে অজ্ঞাতপরিচয়ে একজন ফোন করে বলেন, শাকেরকে জীবিত ফিরে পেতে হলে ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে। তবে মুক্তিপণ দাবির ৩২ ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শাকের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মিনাবাজার ঘোনাপাড়ার বাসিন্দা।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী এলাকার কম্বনিয়াপাড়া এলাকায় অপহৃত ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান অপহরণের শিকার শাকেরের ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে সম্ভাব্য সব জায়গায় বাবাকে খোঁজা হয়। কিন্তু কোনো সন্ধান পাইনি। পরে রাতে মা হাসিনা বেগম বাদি হয়ে টেকনাফ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তার পর থেকে পুলিশ বাবাকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। তবে আজ দুপুর আড়াইটার দিকে টেকনাফের খারাংখালী এলাকার কম্বনিয়াপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তরা আমার বাবাকে ছেড়ে যায়। দুর্বৃত্তরা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তার বাবাকে নির্যাতন করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর সোমবার ভোরে প্রতিদিনের মতো স্থানীয় মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করতে যান শাকের। তার পর আর বাড়ি না ফেরেনি তিনি।
টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে অপহরণের শিকার শাকেরকে উদ্ধারে পুলিশ অভিযান শুরু করে। তবে মঙ্গলবার বিকেলে অপহৃত ব্যক্তিকে দুর্বৃত্তরা ছেড়ে দেয়। মুক্তিপণ দাবির বিষয়টিও তিনি শুনেছেন বলে জানান। ছাড়া পাওয়া ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, গত এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৯৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বৈঠকে অভিযোগ শুনেই ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল কাদের ভূঁইয়াকে এক দিনের মধ্যেই প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ শনিবার সকালে এক মতবিনিময় সভায় ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনার পর পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিকে ফোন দিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় চকরিয়া থানার ওসি মিথ্যা মামলা দিয়ে লোকজনকে হয়রানি করছেন জানিয়ে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক সাংবাদিক। এরপর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
সভায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালান ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে মাদকের চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে। গুজব-ছিনতাই, অপহরণ নিয়ন্ত্রণে রেখে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে এক ঘণ্টার ওই সভায় শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি); সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন, আনসার, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি, দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) এবং সীমান্তনিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়। উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের বিপুল এলাকা এখন আরাকান আর্মির দখলে থাকলেও কাগজে–কলমে সেটি মিয়ানমারের। তারপরও আমরা নানাভাবে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি।’
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কক্সবাজারে অপহরণের ঘটনা বেশি, এর কারণ রোহিঙ্গা। ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের যত তাড়াতাড়ি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে যাবে, ততই আমাদের জন্য মঙ্গল।’
বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা কক্সবাজারের মাদক চোরাচালান, গুজব, ছিনতাই, অপহরণ, সীমান্তনিরাপত্তা, হাইওয়ের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। পর্যটক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ যেন বজায় থাকে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে সার্বিক বিষয়ে নজরদারি রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
উখিয়াতে বিজিবির নতুন ব্যাটালিয়নের যাত্রা শুরুদুই দিনের সরকারি সফরে গতকাল শুক্রবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কক্সবাজার আসেন। আজ শনিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে দুপুরে কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের প্রশিক্ষণ মাঠে উখিয়াতে নবগঠিত ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) স্টেশনের সদর দপ্তর, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং কে-নাইন ইউনিট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণ ও আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের সুস্থতা কামনা করে ব্যাটালিয়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের সীমান্ত রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বিজিবির ওপর ন্যস্ত। সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা, চোরাচালান, নারী ও শিশু এবং মাদক পাচারসংক্রান্ত অপরাধ দমন, আন্তরাষ্ট্রীয় সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধ, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রশাসনকে সহায়তা দিচ্ছে বিজিবি। নবগঠিত উখিয়া ৬৪ ব্যাটালিয়নও বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।