আজ যে শিশু জন্মাচ্ছে, তার মাথায়ও ১ লাখ টাকার ঋণ, এখন উপায়?
Published: 14th, January 2025 GMT
২০২৪ সালের জুনের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া দেশি ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশের লোকসংখ্যা যদি ১৮ কোটি ধরা হয়, তাহলে আমাদের প্রত্যেকের রাষ্ট্রীয় ঋণভার হচ্ছে ১ লাখ টাকা। না, এ ঋণভারে কোনো ব্যক্তিগত ঋণ নেই, এটা হচ্ছে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের দায়। আমরা এ দায় না মেটাতে পারলে এ ঋণভার বর্তাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর। অন্যভাবে বললে, আজ বাংলাদেশে যে শিশু জন্মাচ্ছে, সে এ ঋণভার নিয়েই জন্মাচ্ছে।
সত্যিকার অর্থে ১৮ লাখ কোটি টাকা সংখ্যাটি সত্যিই বিশাল। তবে এ অবস্থা তো এক দিনে তৈরি হয়নি। চার বছর আগে সংখ্যাটি ছিল ১১ লাখ কোটির মতো।
১৮ লাখ কোটি সংখ্যাটি গত কয়েক বছরের তিনটি বাজেটের সমান। মোট ঋণের মধ্যে দেশজ ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৮ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। মোট ঋণে দেশজ ঋণের অংশ ছিল ৫৬ শতাংশ ও বিদেশি ঋণের অংশ ৪৪ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে তিনটা কথা বলা দরকার। এক, এই প্রথম দেশজ ঋণ ১০ লাখ কোটির ঘর ছাড়িয়েছে; দুই, গত চার বছরে বিদেশি ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে এবং তিন, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ঋণ ও জাতীয় উৎপাদনের অনুপাত হচ্ছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ৪ বছর আগে সে অনুপাত ছিল ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ।
পুরো অবস্থার প্রকৃতি সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলা দরকার। এক, ঋণ-জাতীয় দেশজ উৎপাদন অবস্থাটি নজরদারিতে রাখা দরকার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং এটা এখন পর্যন্ত সংকটের পর্যায় পৌঁছায়নি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের মানদণ্ডে ঋণ-জাতীয় দেশজ উৎপাদনের অনুপাত যেখানে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য, সেখানে বাংলাদেশে সে অনুপাত ৩৬ শতাংশ।
দুই, বাজেট–ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছরই সরকারকে দেশজ ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়। দেশজ ঋণ সরকার সহজেই নিতে পারে, তাই বিগত সরকার সেই সহজ উৎসটিই বেছে নিয়েছিল। আসলে ঋণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অভাবে দেশজ উৎস থেকেই বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছিল।
তিন, বিদেশি উৎসের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ঋণ নেওয়া হয়েছিল সুষ্ঠু ও বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন ব্যতীত বাছবিচারবিহীন ও দর-কষাকষি ভিন্ন। বিভিন্ন মর্যাদামূলক প্রকল্পের জন্য বিশাল পরিমাণ বিদেশি ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। বলা প্রয়োজন, বিদেশি ঋণদাতারা ঋণ পরিশোধের অতিরিক্ত সময়সীমা কমিয়ে দিয়েছে এবং সুদের হার বাড়িয়েছে। বিভিন্ন মর্যাদামূলক প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের অতিরিক্ত মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি ঋণের দায়দেনা পরিশোধের চাপ বেড়েছে।
চার, ঋণ গ্রহণের দায়ের একটি দিক হচ্ছে সুদ পরিশোধ। গত ২০২৩-২৪ সালের অর্থবছরে সুদ পরিশোধের জন্য সরকারি ব্যয় হয়েছে ১ দশমিক ১ লাখ কোটি টাকা, যা জাতীয় দেশজ বাজেটের এক-ষষ্ঠাংশের মতো। গত অর্থবছরে ঋণ সুদ-পরিশোধের হার ছিল ১৭ শতাংশ। বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে আর একটি অতিরিক্ত মাত্রিকতা রয়েছে। বিদেশি ঋণের সুদ বিদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করতে হয়। ফলে বিদেশি মুদ্রার মজুত কমে যায়। যেমন ইদানীংকালে বিদেশি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে।
মনে রাখা প্রয়োজন, যেখানে ভারতের মতো দেশে ৫৯ শতাংশের বেশি কর আহরণ করা হয় প্রত্যক্ষ কর থেকে, সেখানে বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশ কর আসে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক এবং ‘মূল্য সংযোজন কর’ থেকে। কর ফাঁকি রোধ করে এবং কর প্রশাসনের উন্নতি করেও রাজস্ব আয় বাড়ানো যায়।পাঁচ, ঋণভার দেশের আর্থসামাজিক খাতের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। গত অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২৩-২৪ সালে ঋণের সুদ ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। সুদের এই অঙ্ক দেশের শিক্ষা বাজেটকে ছাড়িয়ে গেছে। সুদ পরিশোধের জন্য যদি অধিক পরিমাণে অর্থ ব্যয় করতে হয়, তাহলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি ইত্যাদির জন্য সম্পদের লভ্যতা কমে যাবে। ফলে দেশের মানব উন্নয়ন ব্যাহত হবে।
এখন প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য কী কী করণীয়। এর জন্য প্রথমেই যা করা দরকার, তা হচ্ছে ঋণ গ্রহণের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করা। কোন কারণে ও কোথায় ঋণ গ্রহণ করা হচ্ছে, তা চিহ্নিত করণ এবং সেসব ঋণের প্রাসঙ্গিকতাও প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাছাই-যাচাই প্রক্রিয়া এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।
দ্বিতীয়ত: বিশাল প্রকল্প, মর্যাদামূলক প্রকল্প, যার অর্থনৈতিক অবদান সুস্পষ্ট নয়, সেগুলো বর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক বিবেচনায় কিংবা রাজনৈতিক চাপ কর্তৃক বিষয়গুলো দ্বারা ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত করা উচিত নয়।
তৃতীয়ত: কোন উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করা হবে, সেই সম্পর্কে পরিষ্কার নীতিমালা থাকা দরকার। সে ক্ষেত্রে দেশজ ও বিদেশি ঋণ উৎসের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বস্তুনিষ্ঠভাবে নির্ণীত হওয়া দরকার। ঋণের লক্ষ্য, প্রকল্পের যাচাই-বাছাই, দর-কষাকষি, ঋণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা দিয়ে ঋণ উৎস নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন।
চতুর্থত: ঋণ পরিশোধ ও সেই সঙ্গে ঋণের ওপর সুদ পরিশোধের জন্য রাজস্ব আহরণ করতে হবে সরকারকে। রাজস্ব আহরণের জন্য সরকার মূলত নির্ভর করছে অপ্রত্যক্ষ করের ওপর। এ নির্ভরতা কমিয়ে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ করের ভিত্তি আরও বিস্তৃত করা দরকার। বাংলাদেশে কর-জাতীয় দেশজ পণ্যের অনুপাত ৮ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশ ভারতে সেটা ১২ শতাংশ, নেপালে ১৭ শতাংশ।
এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে এই অনুপাত ১৯ শতাংশ, উন্নয়নশীল বিশ্বে ২৫ শতাংশ। সুতরাং রাজস্ব আহরণের জন্য বাংলাদেশকে তার কর–জাতীয় দেশজ পণ্যের অনুপাত বাড়াতে হবেই এবং সেটা করতে হবে প্রত্যক্ষ করের আওতা ও পরিমাণ বাড়িয়ে। দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ আয়কর দেন না। তাঁদের আয়করের আওতায় আনতে হবে।
পঞ্চমত: প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধির আরেকটি দিক আছে। বিগত দিনগুলোতে ধনিক শ্রেণির ওপর আয়করের তুলনায় সাধারণ মানুষের ওপর অপ্রত্যক্ষ কর বেশি বসিয়ে রাজস্ব আহরণ করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এতে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ বাংলাদেশ যখন একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রত্যাশী, তখন সাধারণ মানুষ-অবান্ধব এই কাঠামোর পরিবর্তন অত্যাবশ্যকীয়।
মনে রাখা প্রয়োজন, যেখানে ভারতের মতো দেশে ৫৯ শতাংশের বেশি কর আহরণ করা হয় প্রত্যক্ষ কর থেকে, সেখানে বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশ কর আসে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক এবং ‘মূল্য সংযোজন কর’ থেকে। কর ফাঁকি রোধ করে এবং কর প্রশাসনের উন্নতি করেও রাজস্ব আয় বাড়ানো যায়। বিভিন্ন খাতে কর ফাঁকির কারণে বছরে সরকারের প্রায় ৫৬ হাজার কোটি থেকে প্রায় ৩ লাখ কোটি পর্যন্ত রাজস্ব আয় কম হয়। নানা রকমের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এই কর ফাঁকি রোধ করা যায়।
শেষের কথা বলি। আমার ধারণা ছিল, আমার কোনো অর্থনৈতিক ঋণ নেই, আমি মুক্ত মানুষ। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, আমার কোনো ব্যক্তিগত ঋণ না থাকলেও আমার একটি রাষ্ট্রীয় দায় আছে। আমার সে দায়ের মূল্য এক লাখ টাকা। বেশ বুঝতে পারছি, ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ।’
সেলিম জাহান ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজি ও মজুতদারি বন্ধ করতে না পারায় নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ সরকার
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধ ও মজুতদারি বা অযৈাক্তি মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবিলা করতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাই নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সাহসী ও জরুরি পদক্ষেপ না নিলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো কঠিন হবে।
আজ বুধবার ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫: সংকটময় সময়ে প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ফাহমিদা বলেন, সিপিডির পর্যবেক্ষণে পেঁয়াজ, আলু, বেগুন, ডিম, রুই মাছ, হলুদ, গম, মসুর ডাল, চিনি, গরুর মাংস, রসুন, আদা, সয়াবিন তেল এবং পাম তেলসহ ১৪টি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল বিশ্লেষণে দামের ওঠানামা এবং অদক্ষতার জন্য বেশ কিছু বাধা দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে মজুতদারি, কমিশন এজেন্ট বা গুদাম পরিচালনাকারীদের আধিপত্য, অপর্যাপ্ত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি পদ্ধতি, উচ্চ উপকরণ খরচ, নিম্নমানের সংরক্ষণ এবং পরিবহন সুবিধা এবং সামগ্রিক সরবরাহকে প্রভাবিত করে এমন অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, চালের বাজার ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত জটিল। সে কারণে সিপিডি চালের সরবরাহ শৃঙ্খলে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা নিরূপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে একটি অনুসন্ধানমূলক জরিপ পরিচালনা করে, বিশেষ করে মাঝারি-পাইজাম চাল। যার লক্ষ্য ছিল প্রধানত দামের যে অস্থিরতা তার মূল কারণগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করা।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় অসংখ্য বাজার এজেন্ট রয়েছে। বাজার মূল্যের ওপর গুদাম মালিকদের বা অটো রাইস মিলারদের উল্লেখযোগ্য আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়। ফলস্বরূপ ধান চাষীরা প্রায়শই সঠিক দাম পান না। কিন্তু ভোক্তারা অযৌক্তিকভাবে উচ্চ মূল্যের সম্মুখীন হন, যার ফলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।
খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, বাংলাদেশে পূর্ববর্তী কর্তৃত্ববাদী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে একটি অকার্যকর অর্থনীতি রেখে গেছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঠিক করতে হবে। বেশ কিছু খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলের বিশ্লেষণে মধ্যস্থতাকারীদের একটি জটিল নেটওয়ার্কের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
সিপিডি বলছে, অর্থনীতিতে মুল্যস্ফীতির চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধির অনুমতি দিয়েছে এবং নীতি সুদহারও বৃদ্ধি করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উপর উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির বোঝা কমাতে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সরবরাহ-পক্ষীয় ব্যবস্থাও বাস্তবায়ন করেছে, যেমন ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করা এবং ঢাকার ভেতরে ও বাইরে ন্যায্য মূল্যের বাজার প্রতিষ্ঠা করা। তবে দুঃখের বিষয় হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে চাঁদাবাজি, মজুদদারি বা অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবেলায় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তাই মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলি এখনও পর্যন্ত বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।
সংস্থাটি আরও বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সাহসী এবং জরুরি পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো কঠিন হবে।
রাজস্ব প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে ২০২৫ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত মোট রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩.৭ শতাংশ যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময় ছিল ১৭.৭ শতাংশ অর্থাৎ এখানে উল্লেখযোগ্য অবনতি দেখা গেছে।
২০২৫ অর্থবছরের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের বাকি সময় ৪৫.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে যা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। সামগ্রিকভাবে কর রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। কর রাজস্বের দুটি উৎসেই (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত ও বহির্ভূত) একই চিত্র দেখা গেছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ওই সময়ে মূসক এবং সম্পূরক শুল্ক আহরণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। জুলাই-আগস্টের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে শ্লথগতি এর বড় কারণ। কর রাজস্ব আহরণের পরিস্থিতি বহুলাংশেই সরকারকে মূসক এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে ধাবিত করেছে। তবে আইএমএফের শর্তপূরণের চাপও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান উচ্চ-মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে এ ধরনের উদ্যোগ মোটেই কাম্য নয়। কারণ পরোক্ষ কর সকল ধরনের আয়ের মানুষের জীবনেই প্রভাব ফেলে।