ববির লাইব্রেরি ও হলের নাম পরিবর্তন করলেন শিক্ষার্থীরা
Published: 14th, January 2025 GMT
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) লাইব্রেরি ও দুই হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম সম্বলিত ব্যানার টানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
‘শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি’ নামের ব্যানার সরিয়ে ‘কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার’, ‘বঙ্গবন্ধু হল’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, ‘শেখ হাসিনা’ হলের নাম পরিবর্তন করে ‘কবি সুফিয়া কামাল হল’ নাম দিয়ে ব্যানার টানিয়ে দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) দুপুরে শিক্ষার্থীরা এ ভবনগুলোর নাম পরিবর্তন করেন।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন হল ও লাইব্রেরির নাম পরিবর্তনের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে গত ২ ডিসেম্বর হলের নাম পরিবর্তন বিষয়ক কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে কমিটি গঠনের ১ মাস পেরিয়ে গেলেও আসেনি কোন সিদ্ধান্ত।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর জুলাই বিপ্লবের স্প্রিটকে ধারণ করে আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ হলের নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। প্রশাসন নাম পরিবর্তনের জন্য কমিটি করলেও তাদের কোন প্রদক্ষেপ আমরা দেখিনি। প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ায় আমরা নাম পরিবর্তন করে দিয়েছি। আমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তে নামগুলো নির্ধারণ করেছি, এ নিয়ে কোন বিতর্ক হবে না।”
হলের নাম পরিবর্তন বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ও বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ মো.
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এটিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, “নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত যে কমিটি হয়েছে, তারা বিভিন্ন নাম সাজেস্ট করবে। সেই সাজেশনের উপর ভিত্তি করে সিন্ডিকেট একটি সিদ্ধান্ত নেবে। সিদ্ধান্ত অনুমোদন হলেই চূড়ান্তভাবে নাম পরিবর্তন হবে। কমিটি থেকে কোন সিদ্ধান্ত আসছে কিনা আমার জানা নেই।”
ঢাকা/সাইফুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া
আজ ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর অসংখ্য নীরব ত্যাগের মধ্যদিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের কুষ্টিয়া থেকে বিতাড়িত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। কালেক্টরেট চত্বরে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই কুষ্টিয়া ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের প্রথম দিকে এখানে ইপিআর, পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ মিলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইল শত্রুমুক্ত হয় ১১ ডিসেম্বর
৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর
কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিরোধে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে সুসংগঠিত মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীতে রূপ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস জুড়ে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা হামলা, সম্মুখযুদ্ধ ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় চূড়ান্ত মুক্তির পথ।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৬ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, খোকসা, কুমারখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর সুসজ্জিত ঘাঁটির বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই চালান। পাকবাহিনীর ক্যাম্প, ব্রিজ, সড়ক ও রসদ সরবরাহ লাইনে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রতিটি যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনীরও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। তারা কুষ্টিয়ায় অবস্থান টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়।
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশমুখ, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনার আশপাশে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। ভোর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে গোলাগুলি, মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের প্রচণ্ড গর্জনে পুরো শহর কেঁপে ওঠে। কৌশলগত স্থানে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেঙে দেন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে ও আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। তাদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং দিনটিকেই ‘কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১১ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত কুষ্টিয়া শহরের কালেক্টরেট চত্বরে তৎকালীন রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় প্রাদেশিক পরিষদের জোনাল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত থেকে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানান। এই পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই প্রতীকীভাবে স্বাধীন কুষ্টিয়ার জন্ম এবং মুক্তাঞ্চল হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালুর সূচনা ঘটে। ।
প্রতি বছরের মতো এবারো কুষ্টিয়া মুক্তদিবস উপলক্ষে কালেক্টরেট চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত, র্যালি পরবর্তী শহীদ স্মৃতিস্মম্ভ চত্বরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিবসটি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। শহীদ পরিবার ও জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনে যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরছেন।
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ