রেললাইনে মিলল মরদেহ, পুলিশের ধারণা ধর্ষণের পর হত্যা
Published: 14th, January 2025 GMT
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় রেললাইন থেকে ২৪ বছর বয়সী এক নারীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের কিসমত স্টেশনের রেলঘুন্টি এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার হয়।
পঞ্চগড়ের সহকারী পুলিশ সুপার মোছা. রুনা লায়লা বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরে জমিতে রক্ত ও পায়জামা পাওয়া যায়। একটি ধারালো ছুরিও পাওয়া গেছে। আমরা ধারণা করছি, ওই নারীকে ধর্ষণ বা গণধর্ষণের পর হত্যা করে রেললাইনের ওপর ফেলে নাটক সাজানো হয়েছে। আমরা নিহতের নাম ঠিকানা পাইনি। মরদেহের পরিচয় শনাক্তকরণসহ ঘটনার কারণ বের করতে কাজ করছি।”
এলাকাবাসী জানান, আজ সকালে রেললাইনের পাশে মরদেহটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন তারা। পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা মরদেহ উদ্ধারসহ আলামত সংগ্রহ করেন। পরে পুলিশ রেললাইনের পাশে মাটিতে রক্ত ও নারীর পড়নের পোশাকসহ ধারালো ছোরা উদ্ধার করে। পুলিশের ধারণা, এই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
আলু ক্ষেতে পুঁতে রাখা গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার
ঢাকা মেডিকেল মর্গে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ৬ বেওয়ারিশ লাশের সন্ধান
আমিনুল ইসলাম নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “ঘটনা শুনে আমরা আসি। দেখতে পাই, রেললাইন থেকে দূরে জমিতে রক্ত এবং কাপড় পড়ে আছে। পাশে একটি ধারালো ছোরাও ছিল। পুলিশ এসে তদন্ত শুরু করে। মেয়েটির বয়স ২৪-২৫ বছরের মধ্যে হবে।”
আটোয়ারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, “রেললাইনের মাঝখানে মরদেহটি পাওয়া যায়। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে মরদেহটি লাইন থেকে পাশে নেওয়া হয়। নারীর শরীরের বিভিন্ন অংশ আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।”
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ফেব্রুয়ারিতে সহিংসতায় প্রাণ গেছে ১৩৪ জনের
গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনি, সংঘর্ষ, হামলা, নারী ও নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সারাদেশে ১৩৪ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া মাজারে হামলা ও ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণসহ বেশ কিছু সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) নামে একটি সংস্থা এই তথ্য জানায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও নিজস্ব সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারি মাসে কমপক্ষে ১০৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন এবং আহত কমপক্ষে ৭৫৫ জন। এসব সহিংসতার ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ৫৮টি ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচজনের ও আহত হয়েছে ৪৯৪ জন। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ২৫টি সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জন নিহত ও ১১৫ জন আহত হয়েছেন।
রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৯ জনের মধ্যে বিএনপির পাঁচজন, আওয়ামী লীগের একজন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের একজন নিহত হয়েছেন। অপর দু’জনের রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনি, যার মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীর হামলায় আওয়ামী লীগের পাঁচজন, বিএনপির পাঁচজন, জামায়াতের একজন নারী সদস্য ও চরমপন্থি দলের তিনজনসহ অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন।
এতে বলা হয়, এ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্যাম্পাসে কমপক্ষে ছয়টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫৭ জন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার শিকার হয়ে আবুল কাসেম নামে একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৬ জন শিক্ষার্থী। কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদল ও যুবদলের সংঘর্ষে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংষর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ মাসে সারাদেশে কারাগার ও হাজতে কমপক্ষে ১২ জন আসামি মারা গেছেন। গণপিটুনির ১৭টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩ জন। এ ছাড়া ১৯টি হামলার ঘটনায় ৩৪ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। পাঁচটি মামলায় ১১ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা ছয় মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচজন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ১০ জনকে।
ফেব্রুয়ারি মাসে বিএসএফের সাতটি হামলার ঘটনায় একজন বাংলাদেশি নিহত, ছয়জন আহত ও ১৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর তিনটি হামলার ঘটনায় ছয়টি প্রতিমা ভাঙচুর ও জমি দখলের মতো ঘটনা ঘটেছে। ২৬টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮৭ জন। দুর্ঘটনায় ৯ জন শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন।
ফেব্রুয়ারি মাসে কমপক্ষে ১০৭ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৩ জন ও ১৩ জনকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৩৩ জন। অন্যদিকে ১০৪ জন শিশু নির্যাতনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৯ জন। এ ছাড়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭৫ জন শিশু।