কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কক্ষ টানা ৮ দিন বন্ধ থাকার পর তালা ভেঙে ফেলেছেন একদল নারী। তাঁরা মিছিল নিয়ে তাঁকে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে নির্ধারিত চেয়ারে বসিয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই নারীদের দাবি, বিভিন্ন সেবা গ্রহণে ভোগান্তিতে পড়ে তাঁরা এটি করতে বাধ্য হয়েছেন।

ওই চেয়ারম্যানের নাম মিজানুর রহমান। তিনি যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক।

৪ জানুয়ারি রাতে ইউপি চত্বরে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপনের অভিযোগ এনে ওই রাতেই চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা দেন যদুবয়রা ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। পরদিন বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সচিব, গ্রাম পুলিশ ও সেবাপ্রত্যাশীদের বের করে দেন স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা পরিষদ ভবনের প্রধান ফটকেও তালা লাগিয়ে দেন। ৬ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের মধ্যস্থতায় প্রধান ফটক থেকে তালা খুলে নেওয়া হয়। তবে গতকালের আগপর্যন্ত চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা ঝোলানো ছিল। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে।

যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ জানান, নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্মদিন উদ্‌যাপনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, আওয়ামী লীগের দোসর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুরকে অপসারণের দাবিতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করায় কার্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছিল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, তালা ভেঙে ফেলা নারীদের মধ্যে বেশির ভাগই বিভিন্ন ভাতাভোগী ও এই সেবাপ্রত্যাশী এবং চেয়ারম্যানের দলীয় ভক্ত। বিষয়টি নিয়ে এলাকাটিতে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। একটি পক্ষ চেয়ারম্যানের শাস্তিও দাবি করেছে। এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানও তাঁর কার্যালয়ে তালা লাগানোর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

কয়েকজন নারী জানান, মিথ্যা দোষে একটি পক্ষ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা দিয়েছিল। এ জন্য চেয়ারম্যান পথেঘাটে, বারান্দায় বসে কাজ করছিলেন। অনেকে পরিষদে এসে ফিরে যাচ্ছিলেন। এতে চরম জনদুর্ভোগ হচ্ছিল। এ জন্য হাতুড়ি দিয়ে কার্যালয়ের তালা ভেঙে তাঁরা চেয়ারম্যানকে বাড়ি থেকে পরিষদে ডেকে আনা হয়।

চেয়ারম্যানের কক্ষের তালা ভেঙে দেওয়া প্রসঙ্গে স্থানীয় বিএনপির নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি, পরিষদে চেয়ারম্যান তাঁর কক্ষে বসেছেন। কিন্তু প্রশাসনের সঙ্গে এমনটা কথা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসনের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ষড়যন্ত্র করে কে বা কারা ছুটির রাতে পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের কেক কেটেছিলেন, এ জন্য বিএনপির লোকজন কার্যালয়ে তালা লাগিয়েছিলেন। এতে জনগণের ভোগান্তি হচ্ছিল। তাই সোমবার শতাধিক নারী সেবাপ্রত্যাশী তালা ভেঙে তাঁকে পরিষদে নিয়ে এসেছেন।।

ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি সোলায়মান শেখ। অন্যদিকে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি ভবনে তালা লাগানো ও ভাঙা—দুটিই অবৈধ। যেহেতু একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ এসেছে, সেটির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত দুটি অভিযোগই পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় কিছু করা হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইজতেমায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাব

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। ইজতেমা এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহল জোরদার ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে পর্যাপ্ত র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে র‌্যাব হেডকোয়ার্টার থেকে জানানো হয়, সার্বিকভাবে সব ধরনের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে সার্বক্ষণিক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাবও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। 

রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে তুরাগ নদীর তীরে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসলমানসহ সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রতি বছর ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য দেশি-বিদেশি মুসল্লির আগমন ঘটে। 

এ বছর তিন ধাপে ৩ দিন করে ইজতেমা মোট ৯ দিন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় ধাপে ৩-৫ ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় ধাপে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। 

সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন নিশ্চিতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে র‌্যাব ফোর্সেস অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। 

র‌্যাব জানায়, সামগ্রিকভাবে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর, র‌্যাব-১ সহ ঢাকাস্থ ৫টি ব্যাটালিয়ন আগামী ৩০ জানুয়ারি হতে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি হতে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোতায়েন থাকবে। ইজতেমা এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাব সদর দপ্তর হতে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। 

ইজতেমা মাঠ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ইউনিফর্মে টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সুইপিং টিম দ্বারা তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য র‌্যাবের স্পেশাল টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং পর্যাপ্ত স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমগ্র ইজতেমা ময়দান ঘিরে উঁচু ভবনসমূহে বাইনোকুলারসহ র‌্যাব সদস্য নিয়োগ এবং র‌্যাবের অবজারভেশন পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। 

এ ছাড়াও, র‌্যাব কর্তৃক ইজতেমাস্থলে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভির মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে সমগ্র ইজতেমা এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। নৌ-পথে যে কোনো বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধকল্পে চলমান টহলের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক নৌ-টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে তিন ধাপে আয়োজিত ইজতেমা মধ্যবর্তী সময়ে কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

ইজতেমা এলাকার আশপাশে উচ্ছৃঙ্খলতা, মাদকসেবন, ছিনতাই, পকেটমার, মলমপার্টি ইত্যাদির দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য বিদেশি খিত্তা এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সতর্ক দৃষ্টি ও নজরদারি রাখা হয়েছে। 

মুসল্লিদের গাড়ি পার্কিং এলাকাসহ ইজতেমা এলাকায় অবৈধ টোল বা চাঁদা আদায় করতে না পারে, সে বিষয়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইজতেমামুখী যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশির জন্য চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ড, টঙ্গী কালীগঞ্জ রোড, উত্তরা নর্থ টাওয়ারের সম্মুখে এবং আশুলিয়া কামারপাড়া এলাকায় নিয়মিত চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। 

ইজতেমা এলাকায় র‌্যাবের চিকিৎসাকেন্দ্র সার্বক্ষণিকভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। র‌্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিকভাবে আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকবে। 

বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের দিনে আগত ও ঘরমুখী মুসল্লিরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য র‌্যাবের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা চলমান থাকবে। বিশ্ব ইজতেমা কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্র ও ধর্মবিরোধী অপপ্রচার/গুজব রোধে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে নজরদারি অব্যাহত রাখছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করতে কোনো ব্যক্তি/স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টা/অপপ্রচার কঠোরহস্তে দমন করতে প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব। 

এ ছাড়াও যে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে র‌্যাবের সহযোগিতা পেতে টহল ইনচার্জ অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত র‌্যাব ব্যাটালিয়নকে অবহিত করণসহ র‌্যাবকে (র‌্যাব কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বরে মোবাইল: ০১৭৭৭৭২০০২৯) জানানোর জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোপালগঞ্জে ‘সমন্বয়ক’ আখ্যা দিয়ে হামলা, আহত ৮
  • মোহাম্মদপুরে অভিযানের মধ্যেই ঘটছে অপরাধ
  • ইজতেমায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাব
  • ‘ইজতেমার নিরাপত্তায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ হাজার সদস্য’
  • বাসে বিএম কলেজছাত্রী লাঞ্ছিত, বাস শ্রমিক-শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাংচুর