যুদ্ধ বিরতি চুক্তিকে 'আত্মসমর্পণ' আখ্যা দিয়ে পদত্যাগের হুমকি ডানপন্থী মন্ত্রীদের
Published: 14th, January 2025 GMT
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার সরকারের ডানপন্থী জোটের নেতাদের তীব্র সমালোচনা ও পদত্যাগের হুমকির মুখে পরেছেন। মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ইসরায়েলের জন্য "বিপর্যয়" এবং "হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ" বলে অভিহিত করেছেন।
নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম X-এ একটি পোস্টে জানান, এই যুদ্ধ বিরতি চুক্তি যুদ্ধের রক্তক্ষয়ী অর্জনগুলি মুছে দেবে যা আমাদের যোদ্ধাদের দ্বারা অর্জিত হয়েছে।
এই মন্ত্রী দাবি করেছেন যে, গত এক বছরে রাজনৈতিক চাপের মাধ্যমে বারবার যুদ্ধবিরতির চুক্তি প্রতিরোধ করতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন এবং তিনি নেতানিয়াহুকে গাজায় সহায়তা, জ্বালানি এবং পানি প্রবাহ বন্ধ করতে এবং হামাস পুরোপুরি পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরেক মন্ত্রিসভার সদস্য, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ, সম্ভাব্য চুক্তিকে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য "বিপর্যয়" বলে অভিহিত করেছেন এবং হামাস পরাজিত ও বন্দীরা ফেরত আসা পর্যন্ত গাজা দখলের আহ্বান জানিয়েছেন।
এই দুই মন্ত্রীর দলগুলো যদি জোট থেকে সরে যায়, তাহলে নেতানিয়াহুর সরকার একটি সংখ্যালঘু প্রশাসনে পরিণত হবে এবং অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে থাকবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এক সময়ের বনদস্যুর ‘বয়ানে’ সুন্দরবনে দস্যুতার দিনগুলো
সুন্দরবনে দস্যুতায় টাকা ছিল। কিন্তু সে অবৈধ টাকা নিজেরা উপভোগ করতে পারতেন না। বনের মধ্যে সব সময় মৃত্যুঝুঁকি তাড়িয়ে বেড়াত, এক ঘণ্টা শান্তির ঘুমও হতো না। মোটেও সুখ ছিল না। দস্যুতার জগতে গিয়ে নিজের প্রাপ্তি বলতে নামের সঙ্গে জুড়ে গেছে ডাকাত শব্দটি। স্ত্রী-সন্তানদেরও চলতে হতো মাথা নিচু করে। কথাগুলো একসময়ের বনদস্যু আল-আমীনের।
আল-আমীন বলেন, দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে তিনি ভালোই আছেন। আর কখনো ওই অন্ধকার পথে পা বাড়াতে চান না তিনি। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা হয় কয়রা উপজেলার সুন্দরবনঘেঁষা খোড়লকাঠি বাজারসংলগ্ন কয়রা নদীর তীরে। ছোট বাজারটিকে সুন্দরবন থেকে আলাদা করেছে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়রা নদী।
নদীর ওপারের সুন্দরবনের ত্রাস ছিলেন আল-আমীন। তিনি বলেন, তখন শরীফ বাহিনী ছিল বড় দস্যুদল। সেই দলে যোগ দিয়ে ডাকাত হয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে এলাকায় নাম ছড়িয়ে গেলে বাড়ি ফেরার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা সুন্দরবনের মধ্যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনজীবীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন। র্যাব আর কোস্টগার্ডের অভিযানের ভয়ে বনের মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত ভয় আর উৎকণ্ঠায় কাটত তাঁদের।
আল-আমীনের বলতে থাকেন, ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছিল তাঁর গণ্ডি। বাড়ি ফেরার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠত। অপরাধের জগৎ ছেড়ে ভালো হতে চাইতেন, তবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। ২০১৮ সালের শেষের দিকে সুযোগ আসে। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। দস্যুনেতা শরীফ না চাইলেও তাঁকে কৌশলে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁরা দলের ১৭ জন সদস্য ১৭টি অস্ত্র আর ২ হাজার ৫০০ গুলিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
দস্যুজীবন যাঁরা একবার দেখেছেন, তাঁরা না খেয়ে থাকলেও আর দস্যুতায় ফিরতে চান না—এমনটাই দাবি আল-আমীনের। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গল্প গল্পে তিনি বলেন, ডাঙায় থাকা মাছ ব্যবসায়ীরা ডাকাতদের বাজার, বন্দুক, গুলি সবই সাপ্লাই দিতেন। সব জিনিসের দাম নিতেন তিন থেকে চার গুণ বেশি।
বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন দস্যু ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সব শেষ দস্যুদল হিসেবে আত্মসমর্পণ করে শরীফ বাহিনী। সেদিনই প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। তবে দস্যুনেতা শরীফ গত বছরের ৫ আগস্টের পর আবার সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন বলে তাঁর একসময়ের সাথীদের ভাষ্য।
সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম। তিনি বলেন, দলনেতা শরীফের পুরো নাম করিম শরীফ। কয়রার আল-আমীন ছিল বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। শরীফ প্রথমে আত্মসমর্পণে রাজি থাকলেও পরে বেঁকে বসেন। অন্যরা আত্মসমর্পণ করেন। তবে শরীফ এখন পুনরায় সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম আবদুল মালেক বলেন, বনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কমে আসায় সুন্দরবনে আবারও দস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। এভাবে দস্যুতা চলতে থাকলে বনজীবীদের জীবিকা, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আদায় ও পর্যটন হুমকির মুখে পড়বে; বিপন্ন হবে বন্য প্রাণী আর প্রাণবৈচিত্র্য। দস্যুতা দমনে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।