ভ্যাট-শুল্ক ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি ব্যবসায়ীদের
Published: 14th, January 2025 GMT
শতাধিক পণ্যে নতুন করে শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধি এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তা দ্রুত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই- এর বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নেওয়া এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতির ওপর প্রচণ্ডভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার গতিকে থমকে দেবে। ভ্যাটের বাড়তি চাপ সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে। ফলে দ্রুত এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত।
‘নিয়ম বহির্ভূতভাবে পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদে’ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এফবিসিসিআই-এর বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ আয়োজিত শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা নেতারা এসব কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক জাকির হোসেন নয়ন বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে একটি কঠিন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মাঝপথে এসেই শতাধিক পণ্য ও সেবার উপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে সরকার গত ৯ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে গেজেট প্রকাশ করেছে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করেই মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করায় ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। হঠাৎ এ করারোপ এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেশের সার্বিক জাতীয় অর্থনীতির উপর প্রচণ্ডভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভ্যাটের বাড়তি চাপ সাধারণ মানুষের উপর পড়বে। দেশে বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে দৈনন্দিন জীবন-যাত্রার খরচ স্বাভাবিকভাবে আরেক দফা বেড়ে যাবে।’
ব্যবসায়ী নেতা জাকির হোসেন নয়ন আরও বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার উচ্চ বিনিময় হার, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানী ব্যয়, উচ্চ সুদের হার ও বৈশ্বিক প্রভাব দেশের বিনিয়োগের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকার যেখানে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে সে মুহূর্তে অংশীজনদের সঙ্গে কোনো মতবিনিময় ছাড়াই মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী হবে। সব ধরণের রেস্তোরার বিলে ১০ শতাংশ ভ্যাটবৃদ্ধির পাশাপাশি দোকান ও সুপার মার্কেটে বিক্রিতেও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়াও আমদানিকৃত ফল, মুঠোফোন সেবা, ইন্টারনেট, টিস্যু, এলপিজি গ্যাস, পোশাক প্রভৃতির ক্ষেত্রেও বিভিন্ন হারে মূসক বাড়ানো হয়েছে। যেহেতু এসব পণ্য ও সেবা জীবন-যাত্রারই সার্বক্ষনিক অনুষঙ্গ সেজন্য অতিরিক্ত কর বৃদ্ধির ফলে সকল আয়ের মানুষের উপর এর চাপ পড়বে। জীবনরক্ষাকারী ঔষধের উপরও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।’
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম হায়দার বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার শুল্ক বা গ্যাসের দাম বাড়াবে। কিন্তু এই সরকারকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। এ ধরণের সিদ্ধান্ত শিল্পকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই সরকার দিন দিন দুর্বল সরকারে পরিণত হচ্ছে। দিন দিন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সেখানে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোন অধিকার তাদের দেওয়া হয়নি। নির্বাচিত সরকার আসলে সেটি চিন্তা করবে।’
ঘুষ ও দুর্নীতির মাত্রা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে মন্তব্য করে ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, ‘ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু এখন ঘুষের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। সচিব থেকে শুরু করে নিচের লেভেল পর্যন্ত অহরহ ঘুষের বাণিজ্য চলছে। কিন্তু এটি বন্ধ করার জন্য সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। দুই একজন উপদেষ্টা ঘুষ যদি না খান, কিন্তু ঘুষ যে বন্ধ করছেন না, এটিও ঘুষের চেয়ে কম না। ঘুষে সহযোগিতা করছেন, এটিও অন্যায়।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!
ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন
গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’