‘জুলাই এর প্রেরণা, দিতে হবে ঘোষণা’ দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরে সংগঠনের সদস্যরা।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাল চত্বর থেকে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ শুরু করেন তারা। পরে বটতলা ডায়না চত্বরসহ বিভিন্ন দোকানে লিফলেট বিতরণ করেন।

লিফলেটের মাধ্যমে তারা গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী খুনি ও দোসরদের বিচারের অঙ্গীকারসহ ৭ দফা দাবি ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির প্রধান সমন্বয়ক এসএম সুইট, সহ-সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, গোলাম রব্বানী, ইয়াসিরুল কবীর সৌরভ, তানভীর মন্ডল প্রমুখ।

এ বিষয়ে সহ-সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই বিপ্লব পরবর্তী আমরা একটা ঘোষণাপত্র জারি করতে চেয়েছিলাম। সরকার সেই ঘোষণাপত্র জারির দায়িত্ব নেয়। কিন্তু সেটা নিয়ে এখনো কোন পদক্ষেপ দেখছি না। জুলাই বিপ্লব রক্ষার জন্য একটি ঘোষণাপত্র প্রয়োজন। তাই আমরা সচেতনতা তৈরির জন্য লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করছি।”

প্রধান সমন্বয়ক এসএম সুইট বলেন, “একটা বিপ্লব হওয়ার প্রায় ৬ মাস পরও আমরা একটা ঘোষণাপত্র পাইনি। সেই জায়গা থেকে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র জারির আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম, যাতে জনআকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়। সেই জায়গা থেকে ঘোষণাপত্রের পক্ষে জনসচেতনতা তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করছি। পরবর্তীতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও এ কর্মসূচি পালন করা হবে।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

গুম হত্যার চেয়েও ভয়াবহ অপরাধ, বিচার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: আইন উপদেষ্টা

আইনবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, গুমের ঘটনায় বাংলাদেশে জঘন্যভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এসব ঘটনার বিচার করা হবে। পাশাপাশি দেশের আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এমনভাবে করা হবে, যাতে কখনোই কেউ আর এ ধরনের অপরাধ করার দুঃসাহস দেখাতে না পারেন।

অধ্যাপক আসিফ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো গুম, খুন, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া নৃশংসতম ঘটনাগুলোর সুবিচার নিশ্চিত করা।

প্রস্তাবিত ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে আইন ও বিচার বিভাগ এবং আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিকেল পৌনে চারটায় এ সভা শুরু হয়।

গুম দেশের মানুষের জাতীয় জীবনে বিশেষ করে গত ১৫ বছরে একটা দুঃসহ স্মৃতি হয়ে আছে উল্লেখ করে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে (গুমের) বিচার করার কথা বলতাম। কিন্তু সংশয় ও দ্বিধা থাকত।...এবার জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার অসীম আত্মত্যাগের কারণে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ এসেছে।’

আসিফ নজরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার একেবারে প্রথম দিকেই কোনো কালবিলম্ব না করে গুমসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে (দলিল) পক্ষরাষ্ট্র হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো রিজার্ভেশন (আপত্তি) ছাড়া এত বড় মানবাধিকার কনভেনশনের পক্ষরাষ্ট্র হয়েছে।

দেশে গুমসংক্রান্ত বিষয় বিচার করার জন্য কোনো ডেডিকেটেড (সুনির্দিষ্ট) আইন নেই উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা গুম আন্তর্জাতিক কনভেনশনের পক্ষরাষ্ট্র হয়েছি কিন্তু আমাদের দেশে গুমসংক্রান্ত বিষয় বিচার করার জন্য কোনো ডেডিকেটেড আইন নেই, এটি হতে পারে না। আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে বিস্তৃত এবং সুসংগঠিত গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে দেখা হলেও এর বাইরে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে গুমের আলাদা কোনো সংজ্ঞা বা তার শাস্তির কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া নেই।’

এই শূন্যতাকে দূর করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এ আইনের একটি খসড়া তৈরি করে যথাযথভাবে তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

গুমকে হত্যার চেয়েও ভয়াবহ অপরাধ উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়েও খারাপ অপরাধ। সরকারের যত অগ্রাধিকার রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো গুম, খুন, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের ইতিহাসে যে নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেটির বিচার নিশ্চিত করা এবং এ ধরনের শাসক হওয়ার চিন্তা যাঁদের থাকে, তাঁদের জন্য কাজটা কঠিন করে দেওয়া। সে জন্য আমরা বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করছি। একই সঙ্গে আমরা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছি।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আরও বলেন, অনেক আইন হবে, আগেও হয়েছে, ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও অনেক ভালো ভালো আইন হয়েছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার রাখেনি। এখন যে আইন করা হবে, সেগুলো পরবর্তী সরকার রাখবে কি না, এমন প্রশ্নও উঠছে।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি বললাম, পরবর্তী যে সরকার আসবে, তারা কমপক্ষে এক হাজার মানুষের রক্তের ওপরে গঠিত ফ্রেমওয়ার্কের মধ্য দিয়ে আসবে। তার পেছনে ৫০-৬০ হাজার মানুষের আহত হওয়ার স্মৃতি থাকবে। লাখো কোটি মানুষের কান্না, এত বড় লিগ্যাসি বহন করার পর পরবর্তী সরকার আমাদের সব সংস্কার ভুলে যাবে, এটি আমরা কল্পনাও করতে পারি না। আমরা সংস্কারপ্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছি। এই আশঙ্কা থেকে যে তারা যেন কখনো বলতে না পারে, আমাদের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না।’

আজকের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, কমিটির সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটরিল অ্যাসিস্ট্যান্ট এহসানুল হক সমাজী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক শহিদুল আলম, ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির, মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেলিন, মানবাধিকারকর্মী ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মো. জাকারিয়া, গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, সাবেক কূটনীতিক ও গুম সার্ভাইভার মারুফ জামান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সায়েরা ইসলাম খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন অস্ট্রেলিয়ান ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক এম এহতেশামুল বারী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মো. কামাল উদ্দিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশিরা বিনিয়োগ করলেও অগ্রাধিকার পাবে দেশ: বন্দর চেয়ারম্যান
  • হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা বহালেও ফিরছেন না আম্পায়ার সৈকত
  • বাঘ প্রতীকে ফের ভোট করতে চায় পিডিপি
  • আন্দোলন চালিয়ে যাবেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
  • আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা প্রত্যাহার পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের
  • বরিশালে মেয়র হতে চান জাপা প্রার্থীও, করলেন মামলা
  • আন্দোলনে ফিরছেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা, ঢাকায় আসছেন প্রতিনিধিরা
  • ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা বাতিল
  • প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেন চবি অধ্যাপক 
  • গুম হত্যার চেয়েও ভয়াবহ অপরাধ, বিচার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: আইন উপদেষ্টা