মিয়ানমার থেকে এল দেড় হাজার বস্তা ডাল
Published: 14th, January 2025 GMT
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মাংডু শহর থেকে তিনটি ট্রলারে ১ হাজার ৫৬০ বস্তা ফেলন ডাল এসেছে টেকনাফ বন্ধরে। গত ৩, ৫ ও ১২ জানুয়ারি এই ডাল আমদানি করা হয় বলে বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সোমবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় একটি ট্রলার ৩০০ বস্তা ফেলন ডাল নিয়ে টেকনাফ বন্দরে পৌঁছায়। ডাল খালাসের পর ওয়্যারহাউজে রাখা হয়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের ম্যানেজার ছৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, “মিয়ানমারে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর মাছ ভর্তি একটি ট্রলার বন্দরে এসেছিল।”
আরো পড়ুন:
এইচএমপিভি প্রতিরোধে হিলি ইমিগ্রেশনে মেডিকেল টিম
ভারত থেকে এলো ৫ টন জিরা
তিনি আরো বলেন, “গত ৩ জানুয়ারি জিন্নাহ এন্টারপ্রাইজের নামে ১ হাজার বস্তা, ৫ জানুয়ারি ২৬০ বস্তা এবং ১২ জানুয়ারি ৩০০ বস্তা ফেলন ডাল এসেছে। এ নিয়ে চলতি জানুয়ারিতে মোট ১ হাজার ৫৬০ বস্তা ফেলন ডাল এসেছে মংডু শহর থেকে। তবে আগের মতো বড় পরিমাণে পণ্যবোঝাই জাহাজ আসছে না।”
স্থলবন্দরের এজেন্টরা জানান, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মংডু শহরসহ ২৭০ কিলোমিটার এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর থেকে মিয়ানমার থেকে আমদানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা বিএম আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, “মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ৪৭ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানির বিপরীতে ২৫৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। একই সময়ে ৬৩৬ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি হয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি কমে হয়েছে মাত্র ১১ হাজার মেট্রিক টন, রাজস্ব আদায়ও নেমে এসেছে ৮৭ কোটিতে। অর্থাৎ রাজস্ব কমেছে ১৭০ কোটি টাকা। আমদানি-রপ্তানির এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে সরকার।”
ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দেড় মাস ধরে বন্ধ সীমান্ত
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রেখেছে সে দেশের সরকার। কারণ, ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দর থেকে টেকনাফে আসার পথে পণ্যবাহী নৌযানগুলো আটকে দেয় দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা।
টেকনাফভিত্তিক আমদানি–রপ্তানিকারকেরা জানান, গত ১৬ জানুয়ারি তিনটি নৌযান আটকের পর ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দর থেকে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো পণ্যবাহী নৌযান টেকনাফে আসেনি। ওই ঘটনার চার দিন পর পণ্যবাহী দুটি নৌযান ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যটি ছাড়ে ১৬ দিন পর। এ ছাড়া গত ১০ ফেব্রুয়ারি শাহপরীর দ্বীপের গোলারচর থেকে স্পিডবোটে ধাওয়া করে কাঠবোঝাই একটি ট্রলার অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। সেটি এখনো ছাড়েনি তারা। তবে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের বাণিজ্য সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে।
স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বলেন, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। এতে টেকনাফের ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় ও বিপাকে পড়েছেন।
টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, নাফ নদী ও সাগরে আরাকান আর্মি পণ্যবাহী নৌযান আটেক দেওয়ায় টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার।
এদিকে সরেজমিনে টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কোনো কর্মব্যস্ততা নেই। জেটিতে শুধু চালভর্তি একটি ট্রলার রয়েছে। আরেকটি ট্রলারে সিমেন্ট ও পানির বোতল ভর্তি করে রাখা হয়েছে।
স্থলবন্দরের শ্রমিকনেতা আজগর আলী বলেন, ‘শুধু মংডুর সঙ্গে টেকনাফের বাণিজ্য থেমে থেমে চলছে। গত দুই দিনে মংডু থেকে ৪ হাজার ৩০০ বস্তা চাল নিয়ে দুটি ট্রলার এসেছে। কোনো পণ্য না আসায় বসে থাকতে হচ্ছে। আমাদের আর কোনো আয়-রোজগারও নেই। খুব বেকায়দায় আছি আমরা।’
শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে ২৯৫ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানির বিপরীতে ৯১ কোটি টাকার রাজস্ব পায় সরকার। রাখাইনে সংঘাতের কারণে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল দুই কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন পণ্য।
টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক এনাম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য মূলত ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের সঙ্গে হয়। কিন্তু দুঃখজনভাবে গত দেড় মাস ধরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘দেশটিতে সংঘাতের কারণে উভয় দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি সীমান্ত বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা হতাশ।
মাছ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সুফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম কায়সার জুয়েল বলেন, ‘মিয়ানমারের রুই, কাতলা ও ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে রমজানে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে চাহিদা বৃদ্ধি পায়; কিন্তু এবার কোনো মাছই আসছে না। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে দুই দেশের সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।’
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত দেড় মাসে ইয়াঙ্গুন-আকিযাব বন্দর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনো পণ্যবাহী নৌযান আসেনি। তবে মংডু টাউনশিপ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি থেমে থেমে হচ্ছে। তা–ও আবার সীমিত পরিসরে।’
স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা বিএম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, মিয়ানমার থেকে পণ্য আসা বন্ধ থাকায় দৈনিক ৪ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
মিয়ানমার থেকে সাধারণত ছোলা, পিঁয়াজ, রসুন, জিরা, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, আচার, শুকনা সুপারি ও নারকেলসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়।
জানতে চাইলে টেকনাফর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের জলসীমায় সে দেশের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি তল্লাশির নামে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে দেয়। এতে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।