বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দুই প্রতিনিধিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের খরচের ভার বহন করার দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উপর। সংশ্লিষ্ট মণত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের নির্দেশে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাইজিংবিডিকে মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। তিনি বলেন, “এটা আমাদের নজরে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মানননীয় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা হচ্ছে যখন কোনো ফেডারেশনের টিম বিদেশে যাবে, যারা পেশাদার তারাই যাবে। পেশাদার সম্পৃক্ত যারা তাদের বিদেশে পাঠাতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে যে দুজন কর্মকর্তা অন্তর্ভূক্ত ছিল তাদের বাদ দিয়ে আমরা নতুন করে পাঠিয়ছি।”

প্রত্যেকটা সফরের আগে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সরকারি অনুমতি (জিও) নিতে হয়। সেই হিসেবে নারী দলের জন্য ৩০ সদস্যের জিও নেওয়া হয়। সেখানে নাম ছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (ক্রীড়া-১ অনুবিভাগ) ড.

শেখ মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ডকুমেন্টেশন কাম লিঁয়াজো অফিসার মো. রুহুল আমিনের।

আরো পড়ুন:

মতের অমিলে দ্বন্দ্ব ফারুক-ফাহিমের

এশিয়ার চ্যাম্পিয়নদের জন্য বিসিবির পুরস্কার ঘোষণা 

এই দুজনকে বাদ দিয়ে ইতিমধ্যে নতুন করে জিও পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিসিবির সফরে কিভাবে তারা যুক্ত হলেন এমন প্রশ্ন জাহেদী রাইজিংবিডিকে বলেন, “যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রত্যেকটা ফেডারেশনের ওয়াচডগ। তাদের সহায়তা করার জন্য সেটা দেওয়া হয়েছিল”

বিসিবি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, ক্রিকেট দলের সঙ্গে এমন কেউ যুক্ত হতে পারেন কী না এমন প্রশ্নে জাহেদী বলেন, “স্বায়ত্বশাসিত হলেও প্রত্যেকটা ফেডারেশনের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এখতিয়ারাধীন। আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বাদ দিয়েছি।”

এদিকে বিসিবির নারী বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মানতে তারা বাধ্য,  “একটা চিঠি এসেছে মন্ত্রণালয় থেকে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ আসলে বাস্তাবিয়ত করতে হবে। নির্দেশ আসলে আমাদের মানতে হবে। বিসিবি এটা চায়নি, এটা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠিয়েছে।”

ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

দিনে খাবারের দোকান বন্ধ রাখতে হুঁশিয়ারি, দুর্ভোগ

রমজানের ‘পবিত্রতা’ রক্ষায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনে খাবারের দোকান খোলা রাখায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। নিরাপত্তার কথা ভেবে এসব জায়গায় দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা। ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বাজারে রমজানে দিনে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখলেই ৩ হাজার টাকা জরিমানার ঘোষণা দিয়ে নোটিশ দিয়েছে স্থানীয় বণিক সমিতি। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত  বাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁ ও চায়ের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ছেংগারচর পৌর সমবায় সমিতি। আদেশ অমান্যকারীদের জরিমানা করা হবে।

নোটিশে সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান লস্করের স্বাক্ষর রয়েছে। একই রকম আদেশ জারি করেছে উপজেলার সুজাতপুর বাজারের বণিক সমিতি। তবে এই বাজারে খাবারের দোকান খোলা রাখলে জরিমানা হবে ১ হাজার টাকা। 

ছেংগারচর  পৌর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও চায়ের দোকানগুলো বন্ধ। চর অয়েস্টার থেকে ছেংগারচর বাজারে চিকিৎসা নিতে আসা রহমত মিয়া (৬৫) খাবার খেতে গিয়ে দেখেন, হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। তিনি বলেন, রোগীর জন্য এটা খুব কষ্টকর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেস্তোরাঁ ও চা ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসা বন্ধ থাকায় রোজগার বন্ধ। এবার ঈদ করা তাদের জন্য কষ্টকর হবে। ছেংগারচর পৌর বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুল মান্নান দোকান বন্ধের আদেশ এবং জরিমানার নির্দেশনা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ‘বিষয়টি জানি না। বণিক  সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানাতে পারব।’

এদিকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এতে দেখা যায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় হাজী শরীয়তুল্লাহ সমাজকল্যাণ পরিষদের প্রতিনিধি ও হাজী শরীয়তুল্লাহর বংশধর পীরজাদা হানজালা রমজান মাসে দিনে খাবারের দোকান খোলা রাখার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। রমজান শুরুর আগে তিনি এই ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।  ভিডিওতে হানজালাকে বলতে শোনা যায়, ‘রমজানের হেফাজত করা প্রতিটি মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। এ জন্য রমজান মাসকে কেন্দ্র করে শিবচরের ১৯টি ইউনিয়নে হাজী শরীয়তুল্লাহ সমাজকল্যাণের লোকজন কাজ করবে। এটা বাংলাদেশ, এটা ভারত নয়, মনে রাখতে হবে। রমজান মাসে সকালে চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ খোলা থাকবে– এটা হতে পারে না। তার সঙ্গে এটা হাজী শরীয়তুল্লাহর মাটি। এখানে এ কাজ হতে পারে না, হতে দেওয়া হবে না।’ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি আপনাদের দোকান দিনে বন্ধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমাদের নেতৃবৃন্দ দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হবে।’ তিনি নারীদের ‘বেপর্দায়’ বাজারে ঘোরাফেরা করতে নিষেধ করেন।

এ বিষয়ে হানজালা সমকালকে বলেন, ‘রমজান সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসে যদি কেউ দিনে চা-সিগারেট বা অন্য কিছু খায়, বিষয়টা অনেক দুঃখজনক।’ এই ঘোষণায় অন্য ধর্মের মানুষরা বিপাকে পড়বেন কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য ধর্মের যারা আছেন, তারা তাদের মতো করে চলবেন, তাদের মতো করে খাবেন। আমার বার্তা ছিল মুসলমানদের প্রতি। তারা যেন এ মাসে বেহায়াপনা না করেন।’ বেহায়াপনা বলতে কী বুঝিয়েছেন তা জানতে চাইলে বলেন, অন্যান্য মাসে চায়ের দোকানে আড্ডা কিংবা বেহায়াপনা চলে। এটা বন্ধে কথা বলেছি।

এ বিষয়ে শিবচরের ইউএনও পারভীন খানম বলেন, কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী অভিযোগ করেননি। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন মতলব ও শিবচর প্রতিনিধি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ