চবি শাখা শিবিরের প্রকাশনা উৎসব শুরু
Published: 14th, January 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী প্রকাশনা উৎসব শুরু হয়েছে। সংগঠনটির পরিচিতি ও আদর্শকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ উৎসব শুরু হয়। চলবে আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ প্রকাশনা উৎসব।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, প্রকাশনা উৎসবে মোট পাঁচটি স্টলে ২ শতাধিক প্রকাশনা স্থান পেয়েছে। স্টলগুলোতে শিবিরের বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি স্টিকার, লিফলেট, ক্যালেন্ডার ও জুলাই আন্দোলন বিষয়ক ম্যাগাজিন রয়েছে।
প্রকাশনা উৎসবে আসা শিক্ষার্থী মো.
তিনি বলেন, “গত ১৬ বছর ট্যাগিং, ব্লেমিং এবং মাইনাস ফরমুলার যে রাজনীতি ছিল, তাতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিবির সম্পর্কে জানার কোন সুযোগ পায়নি। ছাত্র সংগঠনগুলো যদি এমন বুদ্ধিভিত্তিক উদ্যোগগুলো গ্রহণ করে, তাহলে শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংগঠন সম্পর্কে জানতে পারবে। যেটা গণতান্ত্রিক চর্চা বুদ্ধিভিত্তিক আন্দোলন ও আগামী দিনের রাজনীতিতে সুফল বয়ে আনবে বলে আমার বিশ্বাস।
এ বিষয়ে চবি ছাত্রশিবিরের স্কুল সম্পাদক ইয়াছিন মো. মুজতাহিদ বলেন, “মেধাবীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির। আমাদের কাজ হচ্ছে, শিক্ষার মাধ্যমে সবার মাঝে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়া। আমরা দীর্ঘ ১ যুগ পর চবি ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে নববর্ষ প্রকাশনা প্রোগ্রাম করতে পেরেছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে আমরা এমন প্রোগ্রাম কখনও করতে পারিনি।”
তিনি বলেন, “আমাদের সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা গুজব ছড়ানো হয়েছে। শিবির সম্পর্কে সঠিক তথ্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের জানতে দেওয়া হয়নি। শিবিরের দাওয়াত সবার কাছে পৌঁছে দিতেই আমাদের এ আয়োজন।”
চবি শিবিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক হারেছ মাতব্বর বলেন, “ফ্যাসিস্ট পরবর্তী সময়ে আমাদের সংগঠনের কাজগুলো সুন্দরভাবে করতে পারছি। আশা করি, এ নববর্ষ প্রকাশনা প্রোগ্রামের মাধ্যমে দাওয়াতের কার্যক্রম সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে পারব। আমাদের নামে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার যে প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়েছে, আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য জানাতে পারব।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ টাকায় মিলছে বোমা পিঠা
রকমারি পিঠার বাহারি সাজে টেবিল যেন রঙিন এক উৎসবের আঙিনা। সুস্বাদু পিঠার মোহময় ঘ্রাণে মুখরিত চারপাশ। আর ভোজন রসিকদের কৌতূহলী দৃষ্টি প্রতিটি স্তূপে।
তবে সবার নজর কেড়েছে কিছু ব্যতিক্রমী নামের পিঠায়। এর মধ্যে রয়েছে- বোমা, ছেলেদের মন, হাসু আপার কুমড়ানি, হাইভোল্টেজ পায়েশ, আখেরি পাস্তা অন্যতম। নামের ভিন্নতা যেমন আকর্ষণ জাগাচ্ছে, তেমনি স্বাদের রহস্য উন্মোচনেও আগ্রহ বাড়িয়ে তুলছে।
এসব দেখা মিলেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) পিঠা উৎসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ উৎসবকে ঘিরে পিঠার রাজত্ব দখল করতে দুর্দান্ত এক মধুর লড়াইয়ে নেমেছে। নিজেদের হাতের গুণে, মনের জোরে তারা সাজিয়েছে এক মহারণ; পিঠার মহাযজ্ঞ।
বাঙালিয়ানার জেদ আর ঐতিহ্যের ধুলো ঝেড়ে তারা তুলে এনেছে ২ শতাধিক পিঠার বাহার। ২৫টি স্টল জুড়ে তাদের এ দাপুটে আয়োজন যে কাউকে তাক লাগিয়ে দেবে। বাহারি আকার, রঙ, স্বাদ আর নামের নতুনত্বে পিঠা উৎসব হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত।
এছাড়া পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা, নকশি পিঠা, মাংস পুলি, দুধ পুলি, মাংস-ঝাল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা, জামাই পিঠা, মিষ্টি কুমড়া পিঠা, তক্তি পিঠা, কদম ফুল, গোলাপ পিঠা, ডাবের পুডিং, অরেঞ্জ জেলিসহ পরিচিত সব পিঠা তো আছেই। এদের একেকটির স্বাদ একেক রকম। তবে মেলায় আগতদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বোমা পিঠা ২০ টাকা, হাসু আপার কুমড়ানি ও ছেলেদের মন।
সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের ‘সামাজিক পিঠাঘর’ স্টলে সাজানো ‘বোমা’ পিঠা দেখতে ভীড় করছেন উৎসুক দর্শকরা।
অন্যদিকে, ভেটেরিনারি অনুষদের স্টলে শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক সময়ের কলকাতার সাংবাদিক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষের জনপ্রিয় ডায়ালগকে অনুসরণ করে ঝুলিয়ে দিয়েছে এক অভিনব ফেস্টুন— ‘থাকবে না, থাকবে না! একটি পিঠাও থাকবে না!’ উৎসবে আসা পিঠাপ্রেমীদের চোখে পড়তেই এটি হয়ে উঠেছে আলোচনার বিষয়, যেন মুহূর্তেই সব পিঠা উধাও হয়ে যাবে!
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দিনভর উৎসবের আমেজে মুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। বাহারি পিঠার প্রদর্শনীতে যেন মিশে গেছে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যের স্বাদ। গ্রামীণ খেলাধুলার উচ্ছ্বাসে ফিরেছে শৈশবের স্মৃতি। অপরদিকে, ডিবেটিং সোসাইটির আয়োজনে রম্য বিতর্ক যেন বুদ্ধির খেলা জমিয়ে তুলেছে প্রাণবন্ত এক পরিবেশ।
উৎসব উদ্বোধনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “আমাদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রতিবছর ন্যায় এবারও শিক্ষার্থীরা পিঠা উৎসব আয়োজন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একটি পবিত্র জায়গা। আশাকরি আমরা সবাই মিলে সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ও পরিবেশ মোকাবিলা করে সফলভাবে অনুষ্ঠানটি শেষ করতে পারব।”
উৎসবের রঙ আরও গাঢ় করেছে রাফেল ড্রয়ের রোমাঞ্চ, যেখানে প্রত্যেকেই অপেক্ষায় আকর্ষণীয় পুরস্কারের। এরই মাঝে নাচ ও লোকগানের সুরে মেতে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও মিউজিক সোসাইটি, যেন সময় ফিরে গেছে হারানো বাংলার গ্রাম্য উৎসবে।
এছাড়া স্বরূপ ও হাইওয়ে ব্যান্ডের প্রাণবন্ত পরিবেশনা যেন রাতের আকাশে এক উচ্ছ্বাসের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে; ছড়িয়ে দিয়েছে সুর আর উন্মাদনার ঝংকার।
উৎসবের আয়োজক কমিটির সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান ড. আলী আজম খান বলেন, “আবহমান বাংলায় পিঠা উৎসব চমৎকার এক নিদর্শন। আমাদের শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশজ সংস্কৃতিকে অন্তরে লালন-পালন করে। পিঠা উৎসবের মধ্য দিয়ে তারা দেশজ সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রাখছে, এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। প্রতিবারে দেশজ সংস্কৃতির এ ধারাকে অব্যাহত রেখে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পিঠা উৎসব আয়োজনের সুযোগ করে দেন। এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”
ঢাকা/মেহেদী