২২ বছর আগে বিজ্ঞাপনের মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভি।

ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোছা. শাহীনুর আক্তার আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন এই আদালতের বেঞ্চ সহকারী আমিনুর রহমান।

রায় ঘোষণার সময় তিন্নির পরিবারের কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।

অভির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী শাহ ইলিয়াস রতন প্রথম আলোকে বলেন, রায়ে তাঁর মক্কেল ন্যায়বিচার পেয়েছেন।

তবে আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সৈয়দ মো.

আবু জাফর রিজবী প্রথম আলোকে বলেন, খালাসের রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট নয়। রায় পর্যালোচনা করে উচ্চ আদালতে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা নদীর ওপরে অবস্থিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১-এর নিচে তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, অভির প্ররোচনায় মডেল তিন্নি তাঁর স্বামীকে তালাক দেন। কিন্তু অভি এরপর তিন্নিকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। তিন্নি এসব তথ্য মিডিয়ায় ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন। ক্ষিপ্ত হয়ে অভি ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যার পর রাতের যেকোনো সময় তিন্নিকে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য গাড়িতে করে কেরানীগঞ্জ থানার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১-এর কাছে ফেলে রাখেন। অভি কানাডায় পলাতক।

২০১০ সালের ১৪ জুলাই অভির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ মামলার ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনকে আদালতে হাজির করা হয়।

অভির পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত আইনজীবী শাহ ইলিয়াস রতন এর আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর অভির পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাই তিনি পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন কানাডার অটোয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে। কিন্তু বহুবার লিখিত তাগিদ দেওয়ার পরও পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়নি। তিনি বিচারের সম্মুখীন হতে চান। কিন্তু তাঁকে পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না। অভিকে পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য ২০১০ সালে তাঁর পক্ষে রিট করা হয়েছিল।

মামলার নথিতে দেখা যায়, পলাতক অভি কানাডা থেকে তাঁর আইনজীবী বরাবর একটি চিঠি লেখেন। এর কপি দেওয়া হয় ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলিকেও। এতে অভি দাবি করেন, ১৯৯৬ সালে বরিশাল-২ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আইনের শাসনে বিশ্বাসী। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তিন্নি হত্যা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে তাঁর নাম ছিল না। বিশ্বস্ত সূত্রে তিনি জানতে পারেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে তিনি দেশ ছেড়ে কানাডায় যান।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সালমান এফ রহমানের আইনজীবীদের তোপের মুখে সাংবাদিকরা

আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েছেন সাংবাদিকেরা।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

এদিন বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ড শুনানির জন্য সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের এমডি দিলীপ কুমার আগারওয়াল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ কয়েকজনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

সকাল ১০ টার দিকে আসামিদের হাজতখানা থেকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে তোলা হয়। সালমান এফ রহমান ও অন্য আসামিদের আইনজীবীরা কাঠগড়ার পাশে গিয়ে ঘিরে ধরেন। সালমান এফ রহমানসহ সব আসামি তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। বিচারক ১০টা ১২ মিনিটে এজলাসে ওঠেন। 

এ সময় নিম্ন আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকরা সালমান এফ রহমানের আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েন। সাংবাদিকরা কেন এজলাস কক্ষে আছেন, এ প্রশ্ন তোলেন আইনজীবীরা। এরপর ছবি ও ভিডিও করার অভিযোগ তুলে সাংবাদিকদের হেনস্তা করে এজলাস কক্ষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন আইনজীবীরা। 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা বলেছেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকতা করছি। দুই দিন আগে আইনজীবীদের কাছে সালমান এফ রহমানসহ বিভিন্ন আসামির বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতের বার্তা দেওয়ার নিউজ করেন সাংবাদিকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সব সাংবাদিককে নজরে রাখেন সালমান এফ রহমানের আইনজীবীরা। এজলাস কক্ষে সাংবাদিক আছে কেন, প্রশ্ন তোলাসহ ছবি ও ভিডিও করার মিথ্যা অভিযোগ তুলে আদালত প্রাঙ্গণ অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।”

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেছেন, “সাংবাদিকরা এখানে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। আইনজীবীরা কেন বাধা দেবেন? আজকের ঘটনা কী হয়েছে, দেখিনি। সামনের দিন থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কেউ যেন এ ধরনের আচরণ না করেন, এ বিয়ষটি দেখব।”

ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম বলেছেন, “ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। যেসব আইনজীবী সাংবাদিকদেরকে হেনস্তা করেছেন, তাদের নাম দিলে আমরা ঢাকা আইনজীবী সমিতি থেকে ন্যায়বিচার করব। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা করব। সেই আইনজীবীদের নাম্বার আমাদের কাছে দেন।”

ঢাকা/মামুন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাদারীপুরে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইমদাদুল, সাধারণ সম্পাদক শাকিল
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি
  • চাঁদপুরে আইনজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জহির, সম্পাদক ফয়সাল
  • ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত
  • সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন তিন দিনের রিমান্ডে
  • সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন ৩ দিনের রিমান্ডে
  • মডেল তিন্নি হত্যার কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী মেলেনি
  • আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের সরে দাঁড়াতে বিক্ষোভ
  • বিএনপি-জামায়াত লড়াই, বর্জন আ’লীগ-বামদের
  • সালমান এফ রহমানের আইনজীবীদের তোপের মুখে সাংবাদিকরা