অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ এসআইরা আজও অনশনে
Published: 14th, January 2025 GMT
শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শকেরা (এসআই) চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে তাঁরা অনশনে বসেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
শিক্ষানবিশ এসআইরা জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটা পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ এসআইরা জানান, একই দাবিতে ৫ ও ৬ জানুয়ারি তাঁরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের আশ্বাসে ৬ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন। তখন দাবি মেনে নিতে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তাঁরা। এ সময়ের মধ্যে দাবি মেনে না নেওয়ায় গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁরা সচিবালয়ের সামনে আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
গতকাল বিকেলে শিক্ষানবিশ এসআইরা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের সঙ্গে দেখা করেন। তবে কোনো আশ্বাস না পেয়ে তাঁরা অনশন অব্যাহত রেখেছেন।
অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ এসআইদের একজন রবিউল ইসলাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সারা রাত তাঁরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান করেছেন। চাকরি পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত তাঁরা কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
গত বছরের ২১ অক্টোবর রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৪০তম এসআই ক্যাডেট ব্যাচের প্রশিক্ষণরত ২৫২ জনকে ও ৪ নভেম্বর একই ব্যাচের আরও ৫৮ জন ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর আরও ১১ জন শিক্ষানবিশ এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪০তম ক্যাডেট ব্যাচের শিক্ষানবিশ ৩২১ এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নাশতা না খেয়ে মাঠে হইচই করা এবং প্রশিক্ষণ চলাকালে অমনোযোগী থাকার অভিযোগ আনা হয়।
তবে অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ এসআইরা বলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সঠিক নয়। এভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় তাঁদের সঙ্গে চরম বৈষম্য করা হয়েছে। এতে তাঁরা ও তাঁদের পরিবার অসহায় বোধ করছে। শিগগিরই তাঁরা এ অবস্থার প্রতিকার চান।
এদিকে ৪০তম ব্যাচের শিক্ষানবিশ এসআইরা প্রশিক্ষণ শেষে আজ র্যাঙ্ক ব্যাজ পেয়েছেন। আগামীকাল বুধবার তাঁদের পাসিং আউট প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েট শিক্ষার্থীদের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন চলছে, একজন হাসপাতালে
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরণ অনশন করছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ১৭ নেতা-কর্মী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই অনশন কর্মসূচির ১৪ ঘণ্টা পেরিয়েছে। ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ায় অনশনরত একজন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন শুরু করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের এই নেতা-কর্মীরা। এর আগে বিকেল থেকে প্রতীকী অনশন চলছিল।
আজ বুধবার বেলা ১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ১৪ ঘণ্টা পরও অনশনকারীরা সেখানে অবস্থান করছেন। তাঁরা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমরণ অনশন করছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ১৭ নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে আছেন ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব মহির আলম। আরও আছেন লিমন মাহমুদ, রেজওয়ান আহমেদ, সাকিব আহমেদ, সাব্বির উদ্দিন, আহনাফ রহমান, আনিকা তাহসিনা, সায়লা আক্তার প্রমুখ।
অনশনরত অবস্থায় আজ সকালে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন সাদাত অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব রেজওয়ান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুয়েটের উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব।’
এ বিষয়ে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আরেক যুগ্ম সদস্যসচিব সাকিব আহমেদ বলেন, ‘আমরা কুয়েটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আমরণ অনশন শুরু করেছি। ইতিমধ্যে আমাদের একজন অসুস্থ হয়ে গেছেন।’
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক কর্মসূচি থেকে মঙ্গলবার রাত ১০টার মধ্যে কুয়েটের উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে কুয়েট উপাচার্যকে না সরানো হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ‘কুয়েট বাঁচাতে শাহবাগ ব্লকেডের’ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কুয়েটের উপাচার্য পদত্যাগ না করায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শিক্ষার্থী রাত ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে তাঁরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের অবরোধে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন তাঁরা।
কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি ঘিরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরদিন কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ১৪ এপ্রিল রাতে সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। আগামী ২ মে থেকে আবাসিক হল খুলে দেওয়া এবং ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
আরও পড়ুনকুয়েটের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শাহবাগে ‘ব্লকেড’, যান চলাচল বন্ধ১৪ ঘণ্টা আগেকিন্তু গত ১৫ এপ্রিল কুয়েটের শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
গত রোববার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। পদত্যাগ না করায় গত সোমবার বিকেলে কুয়েট ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনশন শুরু করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আজ কুয়েট ক্যাম্পাসে গেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি ক্যাম্পাসে পৌঁছান।
আরও পড়ুনকুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনকুয়েটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন শুরু, চলছে আলোচনা২১ এপ্রিল ২০২৫