শুল্ক–কর বৃদ্ধির ফলে কোন সিগারেটের কত দাম বাড়ল
Published: 14th, January 2025 GMT
শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রভাবে সিগারেট দাম বেড়েছে। নতুন শুল্ক-কর পরিশোধ করে সিগারেটের চালান বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে সিগারেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটামুটি সব ধরনের সিগারেটের দাম প্রতি শলাকায় এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে।
৯ জানুয়ারি অর্থবছরের মাঝপথে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে সিগারেটও আছে। সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক—দুটোই বাড়ানো হয়। ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সিগারেটের মূল্যস্তর অনুযায়ী স্ট্যাম্প ও ব্যান্ডরোল ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে। সে অনুযায়ী সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো শুল্ক-কর পরিশোধ করছে। এতে খুচরা বাজারে সিগারেটের দাম বেড়েছে।
দেখা যাক, প্রতি শলাকায় কোন ব্র্যান্ডের সিগারেটের দাম কত বাড়ল। খুচরা পর্যায়ে বেনসন অ্যান্ড হেজেস ব্র্যান্ডের প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম ছিল ১৮ টাকা; তা এখন ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোল্ডলিফ ব্র্যান্ডের প্রতিটি শলাকার দাম ১৩ টাকা থেকে বেড়ে ১৫ টাকা হয়েছে। ২ টাকা বেড়ে প্রতি শলাকা লাকি সিগারেটের দাম ১২ টাকা এবং স্টার ব্র্যান্ডের সিগারেট ১০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া ডার্বি, পাইলট, হলিউডের দাম এখন ৮ টাকা এবং রয়্যালসের দাম ৭ টাকা; এসব সিগারেটের দাম বেড়েছে ১ টাকা।
কারওয়ান বাজারের এক বিক্রেতা প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানিগুলো সিগারেটের দাম বাড়িয়েছে, তাই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, খুচরা পর্যায়ে বেচাকেনা খুব একটা কমেনি।
সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোও পাইকারি পর্যায়ে নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। জানা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে ২০ শলাকার বেনসন অ্যান্ড হেজেসের প্যাকেটের দাম ৩৭০ টাকা; জন প্লেয়ার গোল্ডলিফ ২৮০ টাকা; লাকি স্ট্রাইক ২১০ টাকা; স্টার ১৭২ টাকা; পাইলট, ডার্বি স্টাইল, হলিউড ১৪৪ টাকা; রয়্যালস ১২৬ টাকা। ২০ শলাকার প্যাকেটের প্রতিটি ব্র্যান্ডের সিগারেটের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বেড়েছে।
কত শুল্ক বাড়ানো হলোএনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুসারে, ১০ শলাকা হিসাবে নিম্নস্তরের সিগারেটের প্যাকেটের দাম ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। মধ্যম স্তরের সিগারেটের প্যাকেটের দাম ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং সম্পূরক শুল্ক সাড়ে ৬৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ; উচ্চস্তরের সিগারেটের প্যাকেটের দাম ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং সম্পূরক শুল্ক সাড়ে ৬৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ; অতি উচ্চস্তরের সিগারেট ১৬০ টাকা বাড়িয়ে থেকে ১৮৫ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং সম্পূরক শুল্ক সাড়ে ৬৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।
সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ব্যান্ডরোল থাকে। কারখানা থেকে বের হওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানকে প্যাকেটের গায়ে ব্যান্ডরোল লাগিয়ে বাজারজাত করতে হয়। ব্যান্ডরোল বিক্রির মাধ্যমেই সরকার সিগারেট থেকে রাজস্ব আদায় করে থাকে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান সাবাব আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা মনে করি, আকস্মিক নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচিত ছিল, সব অংশীজনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, সিগারেটের ওপর আরোপিত কর হওয়া উচিত ৭৫ শতাংশ; আমাদের দেশে যা ইতিমধ্যেই অতিক্রম করে গেছে—এ অধ্যাদেশের পর তা বেড়ে দাঁড়াল ৮৩ শতাংশ।’
সাবাব আহমেদ আরও বলেন, তাড়াহুড়া করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে বাজারে রাজস্ব ফাঁকি, অবৈধ ও চোরাই সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সেটা হলে সরকারের রাজস্ব আহরণে বিরূপ প্রভাব পড়বে। সরকার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে শিগগিরই সংলাপ করে সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কত শুল্ক–কর আসেসিগারেট ও তামাক খাত থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পায়। প্রতিটি শলাকার দামের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশই তাদের শুল্ক-কর হিসেবে দিতে হয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিগারেট খাত থেকে সব মিলিয়ে ৩৭ হাজার ৯১৫ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়েছে। ৩১টি কোম্পানি সিগারেট বিক্রির বিপরীতে সরকারকে এই শুল্ক-কর দিয়েছে। মূলত ধূমপায়ীদের পকেট থেকেই এই টাকা গেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানিগুলোর সিগারেট বিক্রির বিপরীতে ৩২ হাজার ৮১৬ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় করেছিল ভ্যাট বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশে পুরো সিগারেটের বাজারের আকার ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর সিংহভাগই রয়েছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) দখলে।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী ধূমপায়ীর সংখ্যা ৩৯ শতাংশের মতো।
তামাকবিরোধী প্রচারণা করা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা বলেছে, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুল্ক-কর বাড়ানোর ফলে অনেক ধূমপায়ী নিম্নমানের সিগারেটের দিকে ঝুঁকতে পারে। এ ছাড়া সিগারেটের দাম বাড়লে শীর্ষ শুল্ক-কর প্রদানকারী সিগারেট কোম্পানির (যারা অতি উচ্চ মূল্যস্তরের সিগারেট প্রস্তুত করে) ব্যবসাও সংকুচিত হতে পারে। এতে শুল্ক-কর কমতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের অর্থনীতিতে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আরেকটি পূর্বাভাস
২০২৫–২৬ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতিতে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভারতের উন্নয়ন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতিপ্রকৃতি ও অর্থনৈতিক নীতিমালা পর্যালোচনা করে থাকে।
ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচের প্রতিবেদনে অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা খাতের উন্নয়ন নিয়েও জোর দেওয়া হয়েছে। তারা বলছে, এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে সরকারের শিক্ষাব্যয় ২০৪৮ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের ৬ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রয়োজন রয়েছে। খবর ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের
প্রতিষ্ঠানটির নতুন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ১ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া ২০২৫–২৬ অর্থবছরে ভারতীয় অর্থনীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচ বেশ জোর দিয়েই বলেছে, মানবপুঁজি উন্নয়নকে সমর্থন করে—এমন একটি সুপরিকল্পিত রাজস্ব কৌশল প্রয়োজন, যা আর্থিক কার্যক্রমে গতিশীলতা বজায় রাখে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির চলতি মার্চ সংস্করণে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ সমাপ্য অর্থবছরে ভারতের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০২৫–২৬ অর্থবছরে খানিক বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশে উন্নীত হবে। তবে ওই হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ভারতের রাজস্ব নীতি পুনর্বিন্যাস করতে হবে, যাতে বিকশিত ভারত অভিযাত্রা সফল করে তোলা যায়।
গত মাসে জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের (এনএসও) সংশোধিত প্রাক্কলনে ২০২৩ থেকে ২০২৫ অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, ৯ দশমিক ২ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৪–২৫ অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিক অক্টোবর–ডিসেম্বরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমক ২ শতাংশ হয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই হার চতুর্থ ত্রৈমাসিক তথা জানুয়ারি–মার্চে আরও বেড়ে ৭ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচ। তবে আগামীকাল সোমবার শেষ হতে যাওয়া চলতি অর্থবছরের জন্য ভারতের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় (এনএসও) বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে জিডিপিতে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বেসরকারি পর্যায়ের চূড়ান্ত ভোগব্যয়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অবশ্য ভারতের অর্থনীতিতে এত উচ্চ প্রবৃদ্ধি আর কখনো দেখা যায়নি।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচ রেটিংও ভারতের অর্থনীতি নিয়ে আগামী দুই বছরের জন্য পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা বলেছে, ২০২৫-২৬ আর্থবছরে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর পরের অর্থাৎ ২০২৬-২৭ অর্থবছরে তা ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে যেতে পারে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।